এম ইদ্রিস আলী (সাতক্ষীরা জেলা সংবাদদাতা): সাতক্ষীরার কলারোয়ার কাজীরহাট কলেজের দুই ছাত্রীকে অবৈধভাবে বিয়ে করা বিতাড়িত সিদ্দিকুর নামে সেই লম্পট শিক্ষককে প্রায় দুই বছর পর কলেজে নিয়মিত শিক্ষক ও ক্লাস নেওয়ার অনুমতি দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
গত বৃহস্পতিবার কলেজ অধ্যক্ষসহ ভূয়া এডহক কমিটির তিনজন সদস্য মোটা অংকের উৎকোচের বিনিময়ে তাকে কলেজে ক্লাস নেওয়ার অনুমতি দিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। সোমবার কলেজ চলাকালীন সময়ে উপজেলার কাজীরহাট কলেজে সরেজমিনে গেলে একাধিক শিক্ষক জানান, গত ২০১৫ সালে উপজেলার বাটরা গ্রামের সিদ্দিকুর রহমান অত্র কলেজের ডিগ্রি সেকশনে ইংরেজী বিভাগের প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন।
যোগদানের পর কলেজের ছাত্র-ছাত্রীদের ইংরেজী প্রাইভেট পড়ানো শুরু করেন। কয়েক মাস যেতে না যেতেই তার বিরুদ্ধে ছাত্রীদের যৌন হয়রানীর অভিযোগ উঠে। এমনকি তার অত্যাচার সহ্য না করতে পেরে সতিত্য রক্ষার্থেইজ্জতের ভয়ে কিছু ছাত্রী পাশ্ববতর্ী কাজীরহাট বাজারে অন্য শিক্ষকের নিকট পড়তে যায়। কলেজের শিক্ষকরা যেসব ছাত্রী বাজারে পড়তে যায়, তারা কেন কলেজের সিদ্দিক স্যারের কাছে পড়েনা জানতে চাইলে তারা মৌখিকভাবে সিদ্দিক স্যারের চরিত্র ভালো না বলে অভিযোগ করে।
এর মধ্যে কলেজের এক ছাত্রীর সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলে। প্রেমের সম্পর্কের জেরে কলারোয়া বাজারের বৈশাখীতে ওই লম্পট শিক্ষকের ভাড়াটিয়া বাসায় নিয়ে ওই ছাত্রীর সাথে প্রায় সময় অনৈতিক কাজ করে। এভাবে চলে প্রায় দুই বছর, এরই মধ্যে একটি সন্তানও নষ্ট করেছে বলে যানা যায়। এরপর যখন ওই ছাত্রীকে বিয়ে করতে রাজি না হয়, তখন ওই ছাত্রী কয়েকজন শিক্ষককে তাদের সম্পর্কের বিষয়টি জানিয়ে দেয়। এরপর কলেজ অধ্যক্ষ এস এম সহিদুল আলম ওই শিক্ষককে ডেকে নিয়ে বিষয়টি দুই এক দিনের মধ্যে মিমাংসা করে নিতে বলেন।
মিমাংসা করতে না পারায় কয়েকদিন পরেই কলেজ অধ্যক্ষ উভয় পরিবারের সাথে আলোচনান্তে তাদের বিয়ে দিয়ে দেন। ওই বিয়েতে ছিলেন কলেজ অধ্যক্ষ এস এম শহিদুল আলম, শিক্ষক সাহাদাৎ হোসেন, আশিকুর রহমান, আনিছুর রহমান, ইদ্রিস আলী, শাহানুর রহমানসহ আরো অনেক শিক্ষক। শিক্ষকরা জানান, বিয়ের কয়েক মাস পরই ওই লম্পট শিক্ষক ওই ছাত্রীকে তালাক দেন। তালাকের বিষয়টি জানতে পেরে কলেজের কয়েকজন সিনিয়র শিক্ষক ওই শিক্ষকের কাছে বিষয়টির সত্যতা জানতে গেলে, সিনিয়র শিক্ষকদের সাথে দেখা না করে চরম অপমান করে। পরে কলেজ কতর্ৃপক্ষ তাকে সাময়িক বরখাস্ত করেন। এরপর ওই ছাত্রীর অভিভাবকরা কয়েকজন শিক্ষককে স্বাক্ষী করে যশোর আদালতে তার বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেন।
মামলা চলাকালীন সময়ে মধ্যে একপর্যায়ে কলেজ কতর্ৃপক্ষ মোট অংকের টাকার বিনিময়ে তাকে কলেজের নিয়মিত শিক্ষক হিসেবে ও ক্লাস করার অনুমতি দেন।শিক্ষকরা আরও জানান, ক্লাস করার কয়েক মাসের মধ্যেই এবং প্রথম স্ত্রীর / ছাত্রীর মামলা নিষ্পত্তি হওয়ার আগেই কুশোডাঙ্গা গ্রামের জনৈক এক যুবকের স্ত্রী কাজীর কলেজের নিয়মিত আরেক ছাত্রীর সাথেও প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। বিষয়টি অল্প দিনেই জানা জানি হলে কলেজ অধ্যক্ষ ও শিক্ষক প্রতিনিধিরা গোপনে তাকে সাবধান করে দেন।তার পরেই তাদের সেই দ্বিতীয় প্রেম থেমে থাকেনি।
এক পর্যায়ে ২০২৩ সালে এইচএসসি পরীক্ষার দিন সকালে কলারোয়া বাজারের তুলশীডাঙ্গা গ্রামের কাজী পাড়ায় তার প্রাইভেট সেন্টারে দ্বিতীয় প্রেমিকার সাথে অনৈতিক কাজ করার সময় স্থানীয় লোকজন হাতেনাতে ধরে ফেলে। পরে মেয়েটির পরীক্ষার বিবেচনা করে স্থানীয় লোকজন ৬০ হাজার টাকার বিনিময়ে তাদেরকে ছেড়ে দেয়। এরপর বিষয়টি জানাজানি হলে কলেজ কর্তৃপক্ষ ওই লম্পট ইংরেজী শিক্ষক সিদ্দিকুরকে কলেজে না যাওয়ার জন্য জানিয়ে দেন।
পরে দ্বিতীয় প্রেমিকাকে দিয়ে তার স্বামীকে ডিভোর্স করিয়ে বিয়ে করে। এ ছাড়া ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে প্রায় শতাধিক ছাত্রীকে যৌন হয়রানীর অভিযোগ রয়েছে বলেও শিক্ষকরা জানান। এরপর গত বৃহস্পতিবার (১৫ মে) কলেজের ভুয়া এডহক কমিটির সদস্য কলেজ অধ্যক্ষ, হিতৈষী, ও শিক্ষক প্রতিনিধি নামকাস্তা একটি সভা দেখিয়ে ওই লম্পট শিক্ষককে দীর্ঘ প্রায় ২ বছর পর মুছলিকা নিয়ে আবারও কলেজের নিয়মিত শিক্ষক ও ক্লাস নেওয়ার অনুমতি দেন দ্বিতীয় বারের মত। যা নিয়ে শিক্ষক কর্মচারীর মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। যেকোন সময় ওই লম্পট শিক্ষককে নিয়ে একটি অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটতে পারে বলে জানা যায়।
শিক্ষকরা বলেন, যে এডহক কমিটির সভাপতি পদত্যাগ করেন। সেই কমিটির আর কোন ক্ষমতা থাকে কি করে। এটাই শিক্ষকদের প্রশ্ন ?। তাহলে কিভাবে তারা তিনজন ওই শিক্ষককে ক্লাস করার অনুমতি দেন। এটাই সাংবাদিকদের কাছে প্রশ্ন রাখেন শিক্ষকরা। কলেজের সিনিয়র শিক্ষক ইদ্রিস আলীসহ কয়েকজন শিক্ষক জানান, ইংরেজী বিভাগের শিক্ষক সিদ্দিকুর রহমানের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে।
তা সবই সঠিক। তবে ওপরের চাপে তাকে আমরা স্টাম্পে লিখিত মুছলিকা নিয়ে এবং ১ বছর পর্যবেক্ষনে রাখাসহ বিভিন্ন শর্তের বিনিময়ে তাকে কলেজে আসা এবং ক্লাস নেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্র মাহিমসহ কয়েকজন শিক্ষাথর্ী জানান, আমরা ওই শিক্ষককে চিনি না। আমরা এক বছর ধরে ওই শিক্ষকের কোন ক্লাস করি নাই। আমরা শুনেছি ওই স্যারের চরিত্র ভালো না।
গত রবিবার দেখছি কলেজে ওনি আসছে এবং আমাদের ক্লাসে ক্লাস নেওয়ার জন্য গেছেন কিন্তু আমরা তার ক্লাস করি নাই। ওনাকে আমরা চিনি ক্যারেক্টর লেছ টিসার হিসেবে। অভিযুক্ত শিক্ষক সিদ্দিকুর রহমান বলেন, এ বিষয়ে আমি কিছু জানিনা অধ্যক্ষ স্যারের কাছে শোনেন। এ ব্যাপারে কলেজ অধ্যক্ষ এস এম সহিদুল আলম জানান, যে শিক্ষককে যোগদানের কথা বলা হচ্ছে। তিনি যোগদান করেছেন ২০১৫ সালে। বিশেষ একটি কারণে তাকে অবজারভেশনে রাখা হয়েছিল।
তার বিরুদ্ধে ছাত্র-ছাত্রী বা অভিভাবক কোন অভিযোগ না দেওয়ায় তাকে নিয়মিত শিক্ষক হিসেবে আসা বা ক্লাস করতে বলা হয়েছে। অর্থের বিনিময়ে তাকে নিয়মিত শিক্ষক ও ক্লাস করার অনুমতি দেওয়ার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে অধ্যক্ষ বলেন, এটাকাল্পনিক। এর কোন বাস্তবতা নেই। আমরা শিক্ষক এসব কাজ করিনা।