মোঃ রফিকুল ইসলাম (খুলনা জেলা সংবাদদাতা): জুলাই শহিদদের মর্যাদা রক্ষা ও দ্রুততম সময়ের মধ্যে খুনিদের বিচারের দাবি নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে আজ ১৮ জুলাই (শুক্রবার) খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহিদ মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধ-এর প্রথম শাহাদাৎবার্ষিকী পালিত হয়েছে। এ উপলক্ষ্যে বিকাল ৫টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিক লিয়াকত আলী মিলনায়তনে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান ও শহিদ মীর মুগ্ধ স্মরণসভা’ অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন উপাচার্য প্রফেসর ড. মোঃ রেজাউল করিম। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. মোঃ হারুনর রশীদ খান ও ট্রেজারার প্রফেসর ড. মোঃ নূরুন্নবী।
সভাপতিত্ব করেন ছাত্র বিষয়ক পরিচালক প্রফেসর ড. মোঃ নাজমুস সাদাত। স্বাগত বক্তব্য রাখেন গণিত ডিসিপ্লিন প্রধান প্রফেসর ড. মোঃ আজমল হুদা। সভায় বক্তারা বলেন, সুস্পষ্ট পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষা নিয়ে জুলাই আন্দোলনের সূচনা হয়েছিল, যা পরবর্তীতে এক গণঅভ্যুত্থানে রূপ নেয়। এই অভ্যুত্থানে অসংখ্য ছাত্র-জনতা শহিদ হন। নতুন বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন নিয়ে তারা জীবন উৎসর্গ করেছেন।
তাদের সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করাই আমাদের দায়িত্ব। বক্তারা বলেন, যারা এই অভ্যুত্থানে শহিদ হয়েছেন, তাদের মর্যাদা রক্ষা করতে হবে এবং দ্রুততম সময়ের মধ্যে খুনিদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। একই সঙ্গে তাদের দোসরদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে। তা না হলে জুলাইবিরোধী অপশক্তি আবারও সক্রিয় হয়ে উঠতে পারে। বক্তারা আরও বলেন, গত বছর এই দিনে আমরা মীর মুগ্ধকে হারিয়েছি।
জুলাই আন্দোলনে তাঁর আত্মত্যাগ দেশের ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। মীর মুগ্ধ আজকের তরুণ প্রজন্মের জন্য এক উজ্জ্বল অনুপ্রেরণার প্রতীক। তাঁর স্মৃতি রক্ষায় খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতোমধ্যে বিভিন্ন উদ্যোগ বাস্তবায়িত হয়েছে। ভবিষ্যতেও আরও কিছু উদ্যোগ বাস্তবায়নের পরিকল্পনা রয়েছে। এখন থেকে ১৮ জুলাই খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘শহিদ মীর মুগ্ধ দিবস’ হিসেবে পালিত হবে, যা ইতোমধ্যে সিন্ডিকেটে অনুমোদিত হয়েছে। স্মরণসভায় শিক্ষকদের মধ্য থেকে বক্তব্য রাখেন আইন স্কুলের ডিন (ভারপ্রাপ্ত) প্রফেসর শেখ মাহমুদুল হাসান, এগ্রোটেকনোলজি ডিসিপ্লিনের প্রফেসর ড. মোঃ ইয়াছিন আলী, নগর ও গ্রামীণ পরিকল্পনা ডিসিপ্লিনের প্রফেসর ড. মোঃ আশিক উর রহমান, ইতিহাস ও সভ্যতা ডিসিপ্লিনের সহকারী অধ্যাপক আবুল বাশার।
স্মৃতিচারণ করেন শহিদ মীর মুগ্ধ’র বন্ধু মোঃ জাকিরুল ইসলাম, জুলাই আন্দোলনে দৃষ্টিশক্তি হারানো নর্দান ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ শাফিল। অভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপট ও নিজেদের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন জুলাই আন্দোলনের সক্রিয় কর্মী খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মিনহাজুল আবেদিন সম্পদ, আল শাহরিয়ার, আয়মান আহাদ, সৈয়দ মোঃ রুম্মান, শামীম। আরও বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিসার্স কল্যাণ পরিষদের সাধারণ সম্পাদক এস এম মোহাম্মদ আলী। অনুষ্ঠানের শুরুতে পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত করেন ক্বারী মুস্তাকিম বিল্লাহ। এরপর জুলাই শহিদদের স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সহকারী ছাত্র বিষয়ক পরিচালক আইরিন আজহার ঊর্মি। স্মরণসভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ডিসিপ্লিনের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। এর আগে বিকাল ৩.৩০ মিনিটে গণিত ডিসিপ্লিনে ‘শহিদ মীর মুগ্ধ স্মৃতি কর্নার’ এবং ‘শহিদ মীর মুগ্ধ পানি কর্নার’ উদ্বোধন করেন উপাচার্য প্রফেসর ড. মোঃ রেজাউল করিম। এ সময় ট্রেজারার প্রফেসর ড. মোঃ নূরুন্নবী, ডিসিপ্লিন প্রধান প্রফেসর ড. মোঃ আজমল হুদা ও ছাত্র বিষয়ক পরিচালক প্রফেসর ড. মোঃ নাজমুস সাদাত এবং শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া বাদ জুম্মা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে শহিদ মীর মুগ্ধসহ সকল শহিদের আত্মার মাগফিরাত কামনায় দোয়া অনুষ্ঠিত হয়। দোয়াপূর্ব সংক্ষিপ্ত আলোচনা করেন উপাচার্য প্রফেসর ড. মোঃ রেজাউল করিম।
দোয়া অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও মুসল্লিরা অংশগ্রহণ করেন। দোয়া পরিচালনা করেন কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের সিনিয়র পেশ ইমাম মুফতি আব্দুল কুদ্দুস। সন্ধ্যা ৬টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মন্দিরে শহিদ মীর মুগ্ধসহ সকল শহিদের আত্মার শান্তি কামনায় প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন।