এ কে এম আজহারুল ইসলাম সবুজ (গাইবান্ধা জেলা সংবাদদাতা): আর মাত্র কয়েকদিন বাকি। এরপর ধর্মপ্রাণ মানুষরা পালন করবেন পবিত্র ঈদুল আজহা। ইতোমধ্যে গাইবান্ধার ৪১ স্থানে জমে উঠেছে কোরবানির পশুরহাটগুলো। দেখা গেছে উপচে পড়া ভিড়। তবে সব মানুষই ক্রেতা নয়। কেউ কেউ হাটে এসেছেন উৎসুক জনতা হিসেবে। কেউবা একজন ক্রেতার পছন্দের গরু কিনতে সঙ্গে আছেন আরও ৩-৪ জন।
একইভাবে এক বিক্রেতার সঙ্গেও একাধিক ব্যক্তির পদচারণ। সেই সঙ্গে চোখে পড়ার মতো দালালের দৌরাত্ম্য। সব মিলে পশুর হাটে ভিড় বাড়লেও তুলনামূলক বেচা-কেনা। গাইবান্ধা জেলার দারিয়াপুর পশুর হাটসহ আরও বেশ কিছু হাটে দেখা গেছে- ওইসব দৃশ্য। দূর থেকে দেখলে মনে হয় জমে উঠেছে পশুর হাট। কিন্তু হাটের ভেতর স্থিরভাবে দাঁড়িয়ে দেখা যায় আরেক চিত্র।
হাটগুলোতে ক্রেতা-বিক্রেতার চেয়ে তিনগুণ মানুষের অবাধ বিচরণ। এমন বিচরণের কারণে সুযোগ নিচ্ছে সংঘবদ্ধ একটি দালাল চক্র। যার ফলে ঠকছেন ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ে। একই সঙ্গে অতিরিক্ত ইজারা নেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে। গাইবান্ধা জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, কোরবানিযোগ্য গরু-মহিষ-ছাগল ও ভেড়া বেচাকেনার জন্য জেলার বিভিন্ন স্থানে ৪১টি হাট নির্ধারণ করা হয়েছে।
এর মধ্যে ২৬টি স্থায়ী ও ১৫টি অস্থায়ী হাট রয়েছে। এছাড়া অনলাইনের মাধ্যমে আরও বেশ কিছু প্ল্যাটফর্মে পশু কেনাবেচা হচ্ছে। এ বছর কোরবানি উপলক্ষ্যে জেলায় ১৭ হাজার ৩৬৮ খামারে ষাঁড় ৩৮ হাজার ৫৩২, বলদ ৩ হাজার ২৯৫, গাভি ২৪ হাজার ৪১, মহিষ ১৭৩, ছাগল ১ লাখ ১৯ হাজার ৬৬৩ ও ভেড়া ১০ হাজার ৫৭৬টি মজুদ আছে। সম্প্রতি গাইবান্ধার দাড়িয়াপুর, লক্ষীপুর, সাদুল্লাপুর, ধাপেরহাট, মাঠেরহাট ভরতখালিসহ আরও বিভিন্ন হাটে দেখা যায়- কোরবানি পশু কেনাবেচার জন্য নিরাপপ্তা বেষ্টনীর ব্যবস্থা করা হয়েছে। এসব হাটে কোরবানিযোগ্য পশুর মধ্যে ষাঁড়, বলদ, মহিষ, গাভি, ছাগল ও ভেড়া কেনাবেচা হচ্ছে।
এদিকে, প্রতিহাটে দালাল ও ফড়িয়া মধ্যস্বত্বভোগীদের কারণে ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়ে ঠকবার শঙ্কায় ভুগছেন। হাটে আসা দালালরা মালিকদের সঙ্গে রফাদফা করে পশু হাতে নেন। ওই দামের চেয়ে বেশিতে বিক্রিত টাকা দালালদের পকেটে ঢুকছে বলে একাধিক ব্যক্তির অভিযোগ। বর্তমানে জেলার নিয়মিত এবং মৌসুমি হাটগুলোতে দেশি-বিদেশি, ছোট-বড় গরু-ছাগল আমদানি ও বেচা-কেনা হচ্ছে। বছরব্যাপী গরু পালনকারী খামারিরা এসব হাটে কোরবানির পশু বিক্রি শুরু করছেন।
ব্যবসায়ী, চাকরিজীবী ও আর্থিকভাবে সচ্ছল ব্যক্তিরা কোরবানির জন্য গরু-ছাগল ক্রয় করতে হাট-বাজারগুলোতে আসছেন। দারিয়াপুর হাটে আসা ক্রেতা জাকির হোসেন ও বিক্রেতা খাইরুল ইসলাম বলেন, হাটে আসার সাথেই দালালদের সঙ্গে রফাদফা ছাড়া পশু বেচা-কেনা করা সম্ভব নয়। তাই তাদের কমিশন দিয়েই গরু ক্রয়-বিক্রয় করতে হয়। সাদুল্লাপুর হাটের আসা শফিকুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি বলেন, এবার আমার কোরবানি দেবার সামর্থ্য নেই। তাই ঈদের আমেজ হিসেবে পশুর হাট দেখতে আমরা কয়েকজন এসেছি। দারিয়াপুর হাটের বিক্রেতার সবুজ আকন্দ জানান, তার খামারের দুই গরু বিক্রি করতে হাটে এসেছেন।
দালালের হাত থেকে রেহাই পেতে সঙ্গে নিয়েছেন আরও ৪ জনকে। কিন্তু গরুর দাম সন্তোষজনক না হওয়ায় দুশ্চিন্তায় পড়ছেন তিনি। ধাপেরহাটের ক্রেতা নুরুল আমিন সরকার বলেন, এর আগের বছরগুলোতে আমি একাই একটি গরু কোরবানি দিয়েছিলাম। কিন্তু এবার তা ব্যত্যয় ঘটছে। তাই আর্থিক সংকটের কারণে এ বছর ৫ জনের সমন্বয়ে একটি গরু কেনার জন্য হাটে এসেছি। আমরা সবাই গরুর দাম হাঁকাচ্ছি। তবে গরুর দাম ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে রয়েছে।
গাইবান্ধা জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, এ জেলায় চাহিদা পূরণ রেখেও অতিরিক্ত ৬৯ হাজার ৯৭২টি কোরবানি পশু মজুদ আছে। আশা করছি, স্থানীয় চাহিদা মিটিয়েও দেশের বিভিন্ন জায়গা এসব পশুর চাহিদা পূরণে সহায়ক ভূমিক রাখবে।