মো: সিরাজুল মনির (চট্টগ্রাম ব্যুরো): এক মাসের মধ্যে দুই সপ্তাহের কম সময়ে চট্টগ্রাম বন্দরে জ্বালানিবাহী চারটি জাহাজে বিস্ফোরণ এবং অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাকে স্বাভাবিকভাবে নিতে পারছেন না কেউ। সংশ্লিষ্ট প্রায় সকলের শঙ্কা, বড় ধরনের কোনো নাশকতার লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে দেশের জ্বালানি খাতকে।
গত ৩০ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম বন্দরের ডলফিন জেটি–৭ এ বিস্ফোরণ এবং অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে এমটি বাংলার জ্যোতি জাহাজে। ওই ঘটনায় জাহাজের ক্যাডেটসহ নিহত হন ৩ জন। ৫ অক্টোবর বন্দরের বহির্নোঙরে একই ধরনের বিস্ফোরণ এবং অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে এমটি বাংলার সৌরভ জাহাজে। ওই ঘটনায় মারা যান একজন। ঘটনা দুটিতে বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশনের (বিপিসি) জ্বালানি তেল লাইটারিংয়ে নিয়োজিত দুটি জাহাজ অচল হয়ে যায়। একইসাথে শেষ হয়ে যায় দেশের জ্বালানি তেল লাইটারিংয়ের সক্ষমতাও।
এখন ভাড়া করা জাহাজ দিয়ে বিপিসির তেল লাইটারিং কার্যক্রম চালাচ্ছে বিএসসি। ওই ঘটনার পর বিএসসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেছেন, এই ঘটনা স্বাভাবিক নয়, নাশকতা রয়েছে। ঘটনাগুলো তদন্তে একাধিক কমিটি কাজ করছে। এর মধ্যে গত শনিবার গভীর রাতে বহির্নোঙরে এলপিজিবাহী দুটি জাহাজে একসাথে বিস্ফোরণ এবং অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এতে করে পুরো বিষয়টি আবার আলোচনায় আসে। একইসাথে আলোচনা চলছে নাশকতা নিয়েও।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ এবং উৎকণ্ঠা প্রকাশ করা হচ্ছে। সিনিয়র ক্যাপ্টেন আতিক ইউ খান উদ্বেগ প্রকাশ করে তার ফেসবুকে লিখেন, মাত্র দিনকয়েকের মধ্যে ৩টা দুর্ঘটনা হলো। এর মধ্যে দুইটা তেলের ট্যাংকার আর দুইটা গ্যাস ক্যারিয়ার। অথচ দুঃখজনক ব্যাপার হলো, চট্টগ্রাম পোর্ট, কোস্ট গার্ড বা নেভি কারো কাছেই তেল–গ্যাসের আগুন নিভানোর জন্য উপযুক্ত কোনো অগ্নিনির্বাপক টাগবোট নেই। যা আছে সবই সমুদ্রের পানি ছিটাতে পারে। এতে সাধারণ আগুন নিভলেও কার্যকরীভাবে তেল–গ্যাসের আগুন দ্রুত নিভানো সম্ভব না।
একের পর এক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা চট্টগ্রাম বন্দরকে একটি অনিরাপদ এবং ঝুঁকিপূর্ণ বন্দর হিসেবে আন্তর্জাতিক শিপিং সেক্টরে প্রশ্নবিদ্ধ করছে বলে মন্তব্য করে শিপিং বিশেষজ্ঞ ক্যাপ্টেন আতিক ইউ খান ফেসবুকে লিখেন, এর নেতিবাচক প্রভাব দেশের জ্বালানি খাত ও বন্দরের রাজস্ব আয়েও পড়তে পারে। বিষয়টিকে গুরুত্বের সাথে দেখা হচ্ছে জানিয়ে চট্টগ্রাম বন্দর সচিব মোহাম্মদ ওমর ফারুক বলেন, সকল সেক্টরের বিশেষজ্ঞদের নিয়ে উচ্চ পর্যায়ের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে ৫ কার্যদিবসের মধ্যে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। ঘটনার পেছনে কোনো ঘটনা থাকলে নিশ্চয় তা তদন্তে বেরিয়ে আসবে।
তবে চট্টগ্রাম বন্দর, নৌবাহিনী কিংবা কোস্ট গার্ডের অগ্নিনির্বাপণী সক্ষমতা প্রশ্নাতীত বলে উল্লেখ করেন তিনি।
দেশের জ্বালানি খাত এবং চট্টগ্রাম বন্দরকে অস্থিতিশীল করার জন্য এ ধরনের নাশকতা করা হচ্ছে কিনা তার কঠিন তদারকি প্রয়োজন বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন। তাদের ধারণা গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী বিভিন্ন সময়ে দেশে ঘটে যাওয়া কিছু ঘটনা পর্যবেক্ষণ করলে নাশকতার বিষয়টি চলে আসে। সাবেক সরকারের কিছু দুর্নীতিবাজ অফিসার এবং সরাসরি দলীয় লোকজন এসব অনৈতিক কর্মকান্ডের সাথে জড়িত কিনা তা খতিয়ে দেখতে হবে। এ ধরনের ঘটনা ধারাবাহিক ঘটতে থাকলে বন্দরের ইমেজ সংকটের পাশাপাশি দেশের রাজস্বে প্রভাব পড়বে। চট্টগ্রাম বন্দরের গতি রোধ করার জন্য কোন পক্ষ ষড়যন্ত্রে লিপ্ত আছে কিনা তার তদন্ত করতে হবে।