কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় স্বৈরাচারী সরকার পতনের দাবিতে রাজধানীতে বিভিন্ন স্থাপনা-দেয়ালে নানা ধরনের মন্তব্য-স্লোগান লিখেছিল শিক্ষার্থীরা। এখন তারাই সেগুলো মুছে ফেলছে। একই সঙ্গে আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সহিংসতায় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগে রাস্তায় জমে থাকা ইটপাটকেল এবং আবর্জনা পরিষ্কারের অভিযানেও নেমেছে তারা। পালন করছে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের কাজও।
গতকাল বুধবার দুপুরে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় এমন দৃশ্য দেখা যায়।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত ঢাকার বাড্ডা, নদ্দা, বসুন্ধরা, মিরপুর, উত্তরা ও সংসদ ভবন এলাকায় শিক্ষার্থীরা সড়ক ও বিভিন্ন স্থাপনা পরিষ্কার করছে। মাস্ক-গ্লাভস পরে ঝাড়ু নিয়ে তারা রাস্তায় নেমেছে। কেউ কুড়াচ্ছে, কেউ আবার সেগুলো সংগ্রহ করে ময়লার গাড়িতে ফেলছে।
শিক্ষার্থীরা জানায়, দেশব্যাপী বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে সড়ক পরিষ্কার ও ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের কাজ চলছে। শিক্ষার্থীরা তাদের নিজ নিজ এলাকায় উদ্যোগী হয়ে সমন্বয় করে কাজ করছে। তারা চাচ্ছে সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের ওপর যেন বাড়তি চাপ না পড়ে। সুশৃঙ্খল সড়ক তৈরিতে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের কাজও করছে তারা।
মিরপুর ১০ নম্বরে দেখা যায়, শিক্ষার্থীরা রাস্তার ডিভাইডার, মেট্রো রেলের পিলার ও বিভিন্ন ভবনের দেয়ালে লেখা স্লোগান ও মন্তব্য মুছে ফেলছে। তা ছাড়া সড়কে শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বও পালন করছে। এ ছাড়া গণভবনের সামনে, মোহাম্মদপুরের শিয়া মসজিদ ও বাসস্ট্যান্ড মোড়, সায়েন্স ল্যাব থেকে কল্যাণপুর পর্যন্ত পুরো মিরপুর রোড, ধানমণ্ডি ২৭ ও সাতমসজিদ রোড, আগারগাঁও থেকে খামারবাড়ি পর্যন্ত প্রায় প্রতিটি রাস্তায় শিক্ষার্থীদের এসব কাজ করতে দেখা গেছে।
মাহমুদুল হাসান নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘দেশ আমাদের সবার, দায়িত্বও আমাদের নিতে হবে। নতুন করে সবাই মিলে দেশটাকে গড়তে চাই।
শিক্ষার্থীদের কর্মতৎপরতার বিষয়ে পথচারী মিনার কবীর বলেন, ‘ছাত্রদের আত্মত্যাগ আমাদের নতুন করে বাঁচার শক্তি জুগিয়েছে। তাদের এসব কাজ দেখে আমি তাদের সালাম জানাই। এতে প্রতিটি মানুষের মধ্যে নতুন করে দেশ নির্মাণের প্রেরণা সৃষ্টি হচ্ছে।’
আগুনে পুড়ে যাওয়া রাজধানীর ভাটারা থানাও শিক্ষার্থীরা পরিষ্কার করেছে। ভাটারায় প্রধান সড়কে পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রমে অংশ নেওয়া ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী ফাহিমা আক্তার বলেন, ‘সকাল ১১টা থেকে আমরা কার্যক্রম শুরু করেছি। সড়ক থেকে সব আবর্জনা পরিষ্কার করব।’
গতকাল সড়কে যান চলাচল মঙ্গলবারের তুলনায় বেড়েছে। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ধানমণ্ডি, কলাবাগান, মিরপুর রোড, বিজয় সরণি, ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার এলাকায় যান চলাচল বেশি দেখা গেছে।
এ ছাড়া ব্যক্তিগত যান, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, রিকশা, মোটরসাইকেল চলাচল বেড়েছে। সিগন্যালগুলোতে শিক্ষার্থীদের পালা করে দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেছে। কয়েক জায়গায় তাদের সঙ্গে আনসার সদস্যও রয়েছেন। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সদস্যদেরও বিভিন্ন সিগন্যালে দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেছে। ঢাকার বাইরেও দেখা গেছে একই দৃশ্য।
ঢাবি শিক্ষার্থীরাও ক্যাম্পাস পরিচ্ছন্নতায়
ক্যাম্পাসে হামলা, শেখ হাসিনার পতনসহ চলমান ঘটনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ক্যাম্পাস দীর্ঘদিন পর থমথমে অবস্থা থেকে স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে ফিরতে শুরু করেছে। সব হলের শিক্ষার্থীরা হলে উঠছেন, ক্যাম্পাসে পদচারণ করছেন।
তবে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ক্যাম্পাসের পরিবেশ খানিকটা মলিনই দেখা গেছে। ময়লা জমে থাকতে দেখা গেছে বিভিন্ন জায়গায়। ক্যাম্পাস খোলার পর এবার সেসব অপরিচ্ছন্নতা দূর করতে পরিচ্ছন্নতা অভিযানে নেমেছেন শিক্ষার্থীরা।
বিভিন্ন বিভাগের শতাধিক শিক্ষার্থীকে টিএসসি, লাইব্রেরি চত্বর, কলাভবন, ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদ ভবন, অপরাজেয় বাংলার আশপাশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করতে দেখা গেছে।
