রফিকুল ইসলাম খুলনা জেলা সংবাদদাতা
রূপসা উপজেলার নৈহাটি ইউনিয়নের সামন্তসেনা গ্রামে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) উদ্ভাবিত ব্রি ধান১০৫ জাতের উপর মাঠ দিবস ও কৃষক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। স্থানীয় কৃষক মো. ইলিয়াস শেখ এই উপজেলায় প্রথমবারের মতো চাষ করেন ব্রি ধান১০৫, যা ‘ডায়াবেটিক রাইস’ নামেও পরিচিত। এই জাতের ধান থেকে বিঘা প্রতি ২৭ মণ ফলন পেয়ে ইলিয়াস শেখ বলেন, “একই চাষ পদ্ধতিতে আগে যেখানে ১৮-২০ মণ ধান পেতাম, এবার ফলন অনেক বেশি হয়েছে।” তার সফলতা দেখে আশপাশের কৃষকেরা অনুপ্রাণিত হয়েছেন এবং আগামী বছর এই ধান চাষ করবেন বলে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
‘এলএসটিডি’ প্রকল্পের অর্থায়নে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) স্যাটেলাইট স্টেশন খুলনা কর্তৃক আয়োজিত মাঠ দিবসে প্রধান অতিথি হিসেবে ছিলেন ব্রি গোপালগঞ্জ আঞ্চলিক কার্যালয়ের প্রধান ড. আমিনা খাতুন। বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন ব্রি গাজীপুরের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. বিধান চন্দ্র নাথ, স্বাগত বক্তা হিসেবে ছিলেন ব্রি খুলনা স্যাটেলাইট স্টেশনের প্রধান মো. ইফতেখার উদ্দিন জিতু। আরও উপস্থিত ছিলেন ব্রি বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা বিল্লাল হোসাইন ও মো. লিয়াকত হোসেন মণ্ডল। সভাপতিত্ব করেন ব্রি সাতক্ষীরা আঞ্চলিক কার্যালয়ের প্রধান ড. মোঃ সাজ্জাদুর রহমান।
ব্রি গোপালগঞ্জ আঞ্চলিক কার্যালয়ের প্রধান ড. আমিনা খাতুন বলেন, ডায়াবেটিস রোগীর জন্য এ ধানের চালের ভাত নিরাপদ। কিন্তু দেশে ডায়াবেটিক রোগীর সংখ্যা উদ্বেগজনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ডায়াবেটিস রোগীর কথা চিন্তা করে ব্রির বিজ্ঞানীরা জাতটি উদ্ভাবন করেছেন। তাই ডায়াবেটিক রোগীরা এ ধানের চালের ভাত নিরাপদ মনে করে খেতে পারবেন। লো গ্লাইসেমিক ইনডেক্স (জিআই) সম্পন্ন এ ধানের চালের ভাত খেলে ডায়াবেটিক রোগীর রক্তে শর্করা কমে যাবে।
বিধান চন্দ্র নাথ বলেন, “ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার খাদ্যের চাহিদা পূরণ করতে আধুনিক ধানের জাত নির্বাচনের পাশাপাশি আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতির ব্যবহারের কোনো বিকল্প নেই।”
ব্রি খুলনা স্যাটেলাইট স্টেশনের প্রধান মো. ইফতেখার উদ্দিন জিতু বলেন, “ব্রি ধান১০৫ হলো সময়োপযোগী একটি উদ্ভাবন, যা স্বাস্থ্য ও কৃষি—দুই দিকেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য নিরাপদ হওয়ায় এর বাজার চাহিদা বাড়বে এবং উচ্চ ফলনের মাধ্যমে কৃষকের আয়ও বৃদ্ধি পাবে। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের কৃষকদের মধ্যে এই জাতের চাষ সম্প্রসারণে ব্রি স্যাটেলাইট স্টেশন খুলনা কাজ করে যাচ্ছে।”
ব্রি সাতক্ষীরা আঞ্চলিক কার্যালয়ের প্রধান ড. মোঃ সাজ্জাদুর রহমান বলেন, বর্তমান সময়ে খাদ্য নিরাপত্তার পাশাপাশি স্বাস্থ্য সুরক্ষাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ব্রি ধান১০৫ সে দু’দিক থেকেই কার্যকর। এই জাত চাষ করে কৃষক যেমন অধিক ফলন পাচ্ছেন, তেমনি ভোক্তারা পাচ্ছেন নিরাপদ ও পুষ্টিকর চাল। এটি আগামী দিনের একটি সম্ভাবনাময় জাত হিসেবে ভূমিকা রাখবে।