এ কে এম আজহারুল ইসলাম সবুজ (গাইবান্ধা জেলা সংবাদদদাতা): সেচযন্ত্রের জ্বালানি ডিজেল ও বিদ্যুতের দামের পাশাপাশি বেড়েছে সার, কীটনাশক ও শ্রমিকের মজুরি। এতে করে বোরো ধান চাষে খরচও বাড়ছে। এবার গাইবান্ধায় বোরো ধান চাষে প্রতি বিঘা জমিতে বাড়তি প্রায় ৬ হাজার টাকা খরচ হচ্ছে বলে জানান কৃষকরা। কৃষকরা বলছেন, বোরো চাষে খরচ বাড়ছে। মৌসুম শেষে ধানের বাড়তি দাম না পেলে, তাদের উৎপাদন খরচ উঠবে না।
সরকারি সংগ্রহ অভিযানে ধান-চালের দাম বাড়ানোর দাবিও জানিয়েছেন তারা। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে গাইবান্ধায় বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ২৯ হাজার ১৫ হেক্টর জমিতে।
এখন পর্যন্ত রোপণ হয়েছে ৯৩ ভাগ অর্থাৎ ১ লাখ ২১ হাজার হেক্টরের বেশি। সরেজমিনে গাইবান্ধা সদর উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নে গিয়ে দেখা যায়, কৃষকেরা বোরো ধানের চারা রোপণ করছেন। আবার কেউ ক্ষেত থেকে আলু তুলে বোরো ধান রোপণের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত বোরো মৌসুমে এক বিঘা (৩৩ শতাংশ) জমিতে বোরো উৎপাদনে খরচ ছিল প্রায় ১২ হাজার ৫০০ টাকা।
আর এ বছর তা দাঁড়াবে ১৮ হাজারেরও বেশি। গত বোরো মৌসুমে প্রতি বিঘা জমিতে সেচের খরচ ছিল ১ হাজার ৩০০ টাকা, এবছর তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৬০০ টাকায়। প্রতি কেজি বীজ ছিল ২০০ টাকা, এবার তা হয়েছে ৩৫০ টাকা। এছাড়া সার খরচ ২ হাজার থেকে বেড়ে হয়েছে ৩ হাজার ৫০০ টাকা। একইসঙ্গে কীটনাশক ৬০০ থেকে বেড়ে ১ হাজার টাকা, ধান রোপণের মজুরি ৪০০ থেকে বেড়ে ৫০০-৬০০ টাকা হয়েছে। এছাড়া আরও অনেক খরচ রয়েছে।
গাইবান্ধা সদর উপজেলার বোয়ালী ইউনিয়নের নশরৎপুর এলাকার কৃষক বাবলা মিয়া বলেন, ডিজেল ও বিদ্যুতের দাম বাড়ায় এবার সেচ খরচ বেশি পড়ছে। এছাড়া বীজসহ প্রতিটি জিনিসের দাম বেড়ে গেছে। সদর উপজেলার কুপতলা ইউনিয়নের বেড়াডাঙ্গা এলাকার কৃষক সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘খায়া না খায়ে ধানের আবাদ করছি। এবার আবাদে খরচও বেশি হচ্ছে। ধান কাটার সময় দাম না পালে, চাষার মরণ ছাড়া কোনো উপায় নাই। চাষা মানুষের দিকে দেখার কেউ নাই।’ ঘাগোয়া ইউনিয়নের কাটিহাটা গ্রামের মজিবর রহমান বলেন, এ বছর প্রায় ছয় বিঘা জমিতে বোরো চাষাবাদ করেছি।
গত বছরের তুলনায় এবছর বোরো ধান চাষাবাদে খরচ অনেক বেশি পড়েছে। গত বছর প্রতি ঘণ্টায় সেচের পানি নিতে খরচ পড়তো ১০০-১১০ টাকা। এবছর তা বেড়ে হয়েছে ঘণ্টাপ্রতি ১৫০-১৬০ টাকা। এছাড়া সার কিনতে হচ্ছে বাড়তি দামে, কীটনাশক ও বীজের দামও বেড়েছে। দশানি এলাকার কৃষক নূর আক্তার হোসেন বলেন, মজুরি বেশি, তাই পরিবারের মা-স্ত্রী ও ছেলেকে নিয়েই পরিচর্যা করছি। তবুও খরচ বেশি।
গাইবান্ধা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক খোরশেদ আলম বলেন, বোরো চাষে অতিরিক্ত সেচ লাগে। খরচ কমাতে কৃষকদের পরিমিত সেচ এবং নিয়ম মেনে সার ও কীটনাশক ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।