____মোঃ রফিকুল ইসলাম
এই মুহূর্তে বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংকট একটি সাচ্ছা সংকটকে অতিক্রম করে বাস্তবিক পরিবর্তনের পথ রচনা করবে। এই প্রেক্ষাপটে কয়েকটি বাস্তবসম্মত ও কার্যকর বিকল্প উঠে আসতে পারে:
প্রথমত, একটি নতুন গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম গঠন জরুরি, যা বিদ্যমান দুটি প্রধান রাজনৈতিক শিবির—আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির বাইরেও জনগণের প্রতিনিধিত্ব করতে পারে। কিন্তু এই নতুন প্ল্যাটফর্ম কেবল ব্যক্তিনির্ভর বা “নেতা কেন্দ্রিক” হলে চলবে না, বরং তাকে হতে হবে দলভিত্তিক, নীতিভিত্তিক ও গণতান্ত্রিক কাঠামোভিত্তিক। এটির ভিত্তি হতে হবে—অবিভক্ত ছাত্র আন্দোলন, শ্রমিক সংগঠন, কৃষক ঐক্য, প্রান্তিক জনগণের দাবি এবং নাগরিক সমাজের শক্তি।
দ্বিতীয়ত, তরুণ প্রজন্মের রাজনৈতিক অংশগ্রহণকে কেন্দ্র করে গণতান্ত্রিক বিকল্প গড়ে তুলতে হবে। বর্তমানে যে তরুণরা সামাজিক আন্দোলন, স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিবাদ, সাংবাদিকতা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নেতৃত্ব কিংবা ডিজিটাল স্পেসে সক্রিয়—তাদেরকে একটি রাজনৈতিক অভিমুখে আনতে পারলে একটি তৃতীয় শক্তির ভিত্তি রচনা সম্ভব। তবে এটি হবে আদর্শগতভাবে স্পষ্ট ও সাংগঠনিকভাবে দক্ষ একটি প্রক্রিয়া, যা ক্ষমতার নয়, ন্যায়ের প্রশ্নে জনমত গঠন করতে পারবে।
তৃতীয়ত, বাম গণতান্ত্রিক শক্তিগুলোর মধ্যে ঐক্য এবং আধুনিকীকরণ জরুরি। আজকের বাস্তবতায় বামপন্থী দলগুলোর বড় দুর্বলতা হলো—তাদের পরস্পরের মধ্যে প্রতিযোগিতা, কাঠামোগত দুর্বলতা ও জনসম্পৃক্ততার ঘাটতি। অথচ শ্রম, কৃষি, মানবাধিকার ও ধর্মনিরপেক্ষতার প্রশ্নে তাদের ভূমিকা ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ। বাম শক্তিগুলো যদি একটি আধুনিক, তরুণমুখী, প্রযুক্তিবান্ধব ও গণভিত্তিক প্ল্যাটফর্মে রূপ নিতে পারে, তবে সেটিই হতে পারে সবচেয়ে কার্যকর গণতান্ত্রিক বিকল্প।
চতুর্থত, একটি তৃণমূল-নির্ভর গণ-আন্দোলনের মাধ্যমে সংবিধানিক সংস্কারের দাবি তোলা প্রয়োজন। এই আন্দোলনের উদ্দেশ্য হবে—
নির্বাচনী ব্যবস্থার সংস্কার
সেনাবাহিনীর রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ বন্ধ
বিচার বিভাগের স্বাধীনতা
স্থানীয় সরকারে জনগণের নিয়ন্ত্রণ
অর্থনৈতিক বৈষম্য হ্রাস
এটি কোনও “চমকপ্রদ জোট” নয়, বরং একটি কাঠামোগত গণতান্ত্রিক রূপান্তরের আন্দোলন, যা একত্রে রাজনীতি, রাষ্ট্র এবং সমাজের মধ্যে নতুন ভারসাম্য তৈরি করবে।
সবশেষে, গণতান্ত্রিক বিকল্প গড়ার প্রধান শর্ত হলো—বিশ্বাসযোগ্যতা, স্বচ্ছতা ও ধারাবাহিকতা। এটি রাতারাতি তৈরি হবে না, কিন্তু এখনই শুরু না করলে ভবিষ্যতে সব দরজা বন্ধ হয়ে যাবে। এই সংকটের মধ্যে যে রাজনৈতিক শূন্যতা তৈরি হয়েছে, সেটি শুধুমাত্র সাহসী ও দূরদৃষ্টি সম্পন্ন সংগঠক, তরুণ নেতৃত্ব এবং আদর্শনিষ্ঠ কর্মীদের সম্মিলনে পূরণ করা সম্ভব। তাদের হাতেই গণতন্ত্রের বিকল্প জন্ম নেবে।