মোহাম্মদ হাসান (লক্ষীপুর জেলা সংবাদদাতা): ভিজিএফের চাল আত্মসাৎ, তথ্য উদ্যোক্তা বরখাস্ত নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার বুড়িরচর ইউনিয়ন পরিষদের ভিজিএফ ও জেলে কার্ডের চাল আত্মসাতের ঘটনায় এলাকাবাসীর হাতে ইউপি সচিব ইয়াসিন আরাফাত এবং তথ্য উদ্যোক্তা রাসেল অবরুদ্ধ হওয়ার ঘটনা ঘটেছে।
এছাড়াও ইউনিয়ন পরিষদের গ্রাম পুলিশ রাজিবের বাড়ি থেকে প্রায় ৪০ বস্তা চাল জব্দ করা হয়েছে বলে জানা গেছে। এই অভিযোগের ভিত্তিতে তথ্য উদ্যোক্তা রাসেল উদ্দিনকে বরখাস্ত এবং দোষীদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন হাতিয়া উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আলাউদ্দিন। মঙ্গলবার (১০ জুন) ইউএনও বার্তা২৪.কম-কে জানান, চাল আত্মসাতের সঙ্গে যুক্তদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তথ্য উদ্যোক্তা রাসেলকে মৌখিকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে এবং ঈদের সরকারি ছুটির পর তাকে লিখিতভাবে বরখাস্ত করা হবে। তবে ইউপি সচিব ইয়াসিন আরাফাতের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কি না—এমন প্রশ্নের উত্তরে ইউএনও জানান, তার বিরুদ্ধে এখনো কোনো লিখিত অভিযোগ পাওয়া যায়নি।
এদিকে, হাতিয়ার আরেক প্রশাসনিক কর্মকর্তা ওয়াজ উদ্দিন বলেন, আমি এ বিষয়ে তেমন কিছু জানি না। আমাদের ইউএনও সব বিষয়ে অবগত আছেন। হাতিয়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি ফজলুল হক খোকন বলেন, বুড়িরচর ইউনিয়ন আমার জন্মস্থান। এই ইউনিয়নের ইউপি সচিব ইয়াসিন আরাফাত এবং তার আত্মীয়-সহযোগী রাসেলের বিরুদ্ধে একাধিক দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ পেয়েছি। যতদিন এদের অপসারণ না করা হবে, ততদিন দুর্নীতি চলতেই থাকবে।
উল্লেখ্য, চাল আত্মসাতের ঘটনায় এলাকাবাসীর হাতে সচিব ইয়াসিন আরাফাত ও তথ্য উদ্যোক্তা রাসেল অবরুদ্ধ হওয়ার পর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং নৌবাহিনীর একটি দল ঘটনাস্থলে গিয়ে তাদের উদ্ধার করে। জব্দকৃত চাল বর্তমানে ইউনিয়ন পরিষদের গুদামে সংরক্ষিত আছে।
ঘটনার সূত্রপাত গত ৫ জুন বিকেলে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির চাল বিতরণ শেষ হওয়ার আগেই গ্রাম পুলিশ রাজিবের বাড়িতে সরকারি চাল সরবরাহের সময় ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য অনুযায়ী, রিলিফের চাল আত্মসাতের খবর ছড়িয়ে পড়লে সন্ধ্যায় প্রায় পাঁচ শতাধিক বিক্ষুব্ধ জনতা ইউনিয়ন পরিষদ ঘেরাও করে। এ সময় রাজিব চৌকিদার ও মিরাজ চৌকিদার পালিয়ে যান।
সচিব ইয়াসিন আরাফাত এবং তথ্য উদ্যোক্তা রাসেল ইউনিয়ন পরিষদে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন। পরে সন্ধ্যা ৭টার দিকে ইউএনও ও নৌবাহিনীর একটি দল ঘটনাস্থলে গিয়ে ৪০ বস্তা চাল জব্দ করে এবং সচিব ও তথ্য উদ্যোক্তাকে উদ্ধার করে। ইউএনও মো. আলাউদ্দিন উপস্থিত জনতাকে আশ্বস্ত করেন যে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি আরও বলেন, চৌকিদার-দফাদারসহ সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে সরকারি কোনো মালামাল মজুদ আছে কিনা, তা খতিয়ে দেখা হবে। এসময় তিনি তথ্য উদ্যোক্তা রাসেলের ইউনিয়ন পরিষদে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞাও জারি করেন। স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, সচিব ইয়াসিন আরাফাত তার খালাতো ভাই তথ্য উদ্যোক্তা রাসেলকে দুর্নীতি ও লুটপাটে সহযোগী হিসেবে ব্যবহার করেন।
রাসেল সেবা প্রদানের নামে মানুষজনের কাছ থেকে অনিয়মতান্ত্রিকভাবে টাকা আদায় করে এবং সেই অর্থ সচিবের সঙ্গে ভাগ করে নেন। সরকারি মালামাল লুটের জন্য চৌকিদার ও দফাদারদের ব্যবহার করা হয়। এসময় বুড়িরচর ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি ফজলে এলাহি কাফি বলেন, সচিব প্রায় সময় চৌকিদার-দফাদারদের মাধ্যমে সরকারি মালামাল লুট করেন। এবার হাতেনাতে ধরা পড়েছেন। তিনি আরও জানান, এলাকার ২২০ জন দুস্থ মানুষের জন্য দুই বছর মেয়াদি একটি প্রকল্প সহায়তা আসে।
অথচ সচিব তার খালাতো ভাই রাসেলকে দিয়ে প্রায় পাঁচ হাজার মানুষ থেকে ১০০ টাকা করে আদায় করে আবেদন করান। সরকারি সহায়তা বিতরণের সময় অল্প কিছু কার্ডধারীকে দিয়েই বাকি চাল চৌকিদারদের মাধ্যমে সরিয়ে ফেলা হয়।