পরিচয়ঃ বাংলাদেশের জনপ্রিয় সংগীত শিল্পী সামিনা চৌধুরী।
ডাক নাম সোমা।সামিনা চৌধুরী ১৯৬৬ সালের ২৮ আগস্ট বৃহত্তর দিনাজপুর জেলার পঞ্চগড় মহকুমায় জন্মগ্রহণ করেন।
পঞ্চগড় বর্তমানে জেলা শহর।পিতা কিংবদন্তি সঙ্গীত শিল্পী মাহমুদুন্নবী চৌধুরী।
মাতা মোসা রশিদা চৌধুরী।
দাম্পত্য জীবনঃ সামিনা চৌধুরী ১৯৯৩ সালে এজাজ খান স্বপনের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।
তাদের এক কন্যা সন্তান রয়েছে।
নাম ফাবাসীর তেজী খান।
কন্যা ফাবাসীর ২০২০ সালে সংগীত ভবনে পদার্পণ করেন।
ভাই বোনঃ সামিনারা তিন বোন এক ভাই।
বড় বোন ফাহমিদা নবী।
ফাহমিদা ১৯৮৭সালে বগুড়ার জয়নুল আবেদীনের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন।এক ভাই পঞ্চম তিনিও সঙ্গীতশিল্পী।
পিতার পরিচয়ঃ আধুনিক গানের অন্যতম পথিকৃৎ মাহমুদুন্নবী ১৯৩৬ সালে ১৬ই ডিসেম্বর ভারতের বর্ধমান জেলার কাটোয়া মহাকুমার কেতু নামক এক নিভৃত গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। সেখান থেকে উঠে পূর্ব বাংলার বৃহত্তর দিনাজপুর জেলার পঞ্চগড় মহকুমায় বসতী স্থাপন করেন।অতপর সংগীত সাধনা লক্ষ্যে ঢাকা শহরের ধানমন্ডিতে বাসা নিয়ে স্থায়ীভাবে বসবাস করতে থাকেন। পিতার জনপ্রিয় গানঃ ও মেয়ের নাম দিবো কি ভাবি শুধু তাই, আমি সাত সাগর পাড়ি দিয়ে কেন সৈকতে পড়ে আছি, তুমি যে আমার কবিতা আমারো গানের রাগিনী, গানের খাতায় স্বরলিপি লিখে বল কি হবে, সুরের ভুবনে আমি আজও পথচারী ক্ষমা করে দিও, ওগো মোর মধুমিতা, তুমি কখন এসে দাঁড়িয়ে আছো আমার অজান্তে, সালাম পৃথিবী তোমাকে সালাম, খোলা জানালার পাশে একা একা বসে আছি,আয়নাতে ঐ মুখ দেখবে যখন।
ইত্যাদি লেখাপড়াঃ ঢাকার অগ্রণী স্কুল এন্ড কলেজ থেকে লেখাপড়া শেষ করে পিতার একান্ত সান্নিধ্যে সংগীতের উপরে তালিম গ্রহণ করেন।এছাড়াও তিনি সংগীতের উপর বিভিন্ন প্রসিদ্ধ ওস্তাদের কাছে সংগীতের বিভিন্ন ধারার তালিম গ্রহণ করেন। সংগীত শুরুঃ ১৯৮১ সালে প্রথম প্লেব্যাকের মাধ্যমে সংগীত জীবন শুরু করেন। প্রথম গান “জন্ম থেকে জ্বলছি মাগো আর কতকাল বলো সইবো” ছায়াছবি জন্ম থেকে জ্বলছি। নতুন কুড়িতে প্রথম স্থানঃ নতুন কুড়ি সংগীত প্রতিযোগিতায় পিতার অনুপ্রেরণায় অংশগ্রহণ করেন সামিনা চৌধুরী।
১৯৭৭ সালে ষষ্ঠ শ্রেণীতে পড়ার সময় বাংলাদেশ টেলিভিশনে নতুন কুড়ির সংগীত প্রতিযোগিতায় দেশাত্মবোধক গান গেয়ে তিনি প্রথম স্থান অধিকার করেন। অডিও এ্যালবামঃ সামিনা চৌধুরীর প্রথম অডিও এলবাম “শৈশবের দিনগুলি” ১৯৮৬সালে অ্যালবামটি প্রকাশিত হয়।
সুরও সংগীত নকিব খান।এই শিল্পী বর্তমান প্রযন্ত প্রায় ১৫ টি একক গানের এলবাম প্রকাশীত হয়েছে। রবীন্দ্র সংগীতঃ সামিনা চৌধুরী ২০০৯ সালে রবীন্দ্র সংগীতের একটি এলবাম বের করেন।অ্যালবামটিতে শিল্পীর সুরেলা কন্ঠে সাবলীল ভাবে গাওয়া গানগুলি রবীন্দ্র সংগীত এর উপরে তার দক্ষতার পরিচয় বহন করে।
নাটকে অভিনয়ঃ সামিনা চৌধুরী গান গাওয়ার পাশাপাশি কয়েকটি নাটকে অভিনয় করেন।
তার মধ্যে- জুলিয়াস সিজার, মিডনাইট ব্লাক কপি,এবং এই সেই নাটক, অন্যতম এছাড়া তিনি সংবাদ পাঠিকা হিসেবেও শ্রোতাদের সুনাম মর্জন করেন। পুরস্কার ও সম্মাননাঃ বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ কণ্ঠশিল্পী হিসেবে বাস সা স পুরস্কার ১৯৮৪ সন।জাতীয় চলচ্চিত্র সঙ্গীত পুরস্কার ২০০৬সন।
“রানীকুঠির বাকি ইতিহাস” ছবিতে আমার মাঝে নেই তো আমি”গানের জন্য তিনি এই পুরস্কার অর্জন করেন।শ্রেষ্ঠ গায়িকার পুরস্কার অর্জন২০০৫ সন।মেরিল প্রথম আলো অনুষ্ঠানে তিনি দুইবার শ্রেষ্ঠ পুরস্কার অর্জন করেন।১৯৭৭ সালে নতুন কূড়ি পুরস্কার অর্জন করেন।
এছাড়াও শিল্পী তার মিষ্টি মধুর সংগীত পরিবেশনের জন্য দেশি-বিদেশি বেশ কিছু পুরস্কার অর্জন করে।
সামিনা চৌধুরীর জনপ্রিয় গানঃ
(১) জন্ম থেকে জ্বলছি মাগো আর কতকাল বলো।
(২) আমার বুকের মধ্যখানে মনযেখানে হৃদয় যেখানে
(৩) একবার যদি কেউ ভালোবাসতো আমার নয়ন দুটি
(৪) আমি তোমার দুটি চোখে দুটি তারা হয়ে থাকবো।
(৫) আমার গরুর গাড়িতে বউ সাজিয়ে ধূতুরুতু সানাই
(৬) সাত ভাই চম্পা জাগোরে জাগোরে ঘুম ঘুম চোখে
(৭) কবিতা পড়ার প্রহর এসেছে কবিতা পড়ার প্রহর।
(৮) আজ আমার মাঝে এখন আর নেইত আমি।
(৯) আমার দুই চোখে দুই নদী আমার দুই চোখে দুই।
(১০) চন্দ্র সূর্য সবই আছে আগের মত বাগানে ফুল।
(১১) ফুল পথে ফুল ঝরে ফুল পথে ফুল ঝরে।
(১২) আজ কোন কাজ নাই আজ আমাদের ছুটি মুক্ত।
(১৩) আমার জন্ম তোমার জন্য আমার ভালোবাসা।
( ১৪) তোমাকে আমি রাখবো ধরে কোনদিনও ছেড়ে।
(১৫) এ জাদুটা যদি সত্যি হয়ে যেত। ইত্যাদি।
লেখকঃ অধ্যাপক মোঃ আব্দুর রাজজাক রাজু। গ্রন্থঃ বরেন্দ্রভূমির বরেণ্যরা। পর্বঃ ৫৩