এম ইদ্রিস আলী (সাতক্ষীরা জেলা সংবাদদাতা): সাতক্ষীরা সদর উপজেলার বল্লী ইউনিয়নের কাঁঠালতলা গ্রামের টুঙ্গির বিল নামক স্থানে ৮০ বিঘা মৎস্য ঘেরের বাসায় আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
ঘটনাটি ঘটেছে গত ২১ মে রাত ১০ টার দিকে। প্রত্যক্ষদর্শী ঘের কর্মচারী জানান, আমি মাছের খাদ্য দেওয়ার জন্য দক্ষিণ দিকে ভেঁড়ির বাসা থেকে উত্তর পাশে ভেঁড়িতে যখন যায় তখন সেখান থেকে দেখি ঘেরের বাসায় দাও দাও করে আগুন জ্বলে উঠেছে। আমি দূর থেকে চিৎকার করে ছুটে আসতে আসতে দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়। আমি দূর থেকে তাদের চিনতে না পারলেও আন্দাজ করতে পেরেছি। পরে ঘের মালিকদের ফোন করে জানাই।
এ বিষয়ে ৫০ জনের গনঘের মালিকের ভিতরে পরিচালনাকারী তৌহিদ জানান, আমরা বিগত কয়েক বছর সুস্থ ও সুন্দরভাবে ঘের পরিচালনা করে আসছিলাম, আমাদের ভিতরে কোন গোলযোগ ছিলোনা।
কিন্তু ৫ ই আগস্টে পদ পরিবর্তন এর পর থেকে আদম আলী, কাশেম আলী, মিজানুর, হাফিজুল মোল্যা, নজরুল ঢালী সহ কয়েকজন ঘেরের সদস্য ঘেরটি জবরদখলে নিবে বলে পায়তারা চালিয়ে আসছে। এ বিষয়ে এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ফৌজদারী কার্যবিধি আইনের ১০৭/১১৭ (গ) ধারায় তাদের বিরুদ্ধে একটি মামলা চলমান রয়েছে। চলমান মামলার নোটিশে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালত সাতক্ষীরা, নালিশি জমির দখল বিষয়ে তদন্ত করে সংশ্লিষ্ট সহকারী কমিশনার ভূমিকে রিপোর্ট দেওয়ার জন্য আদেশও প্রদান করেন। তফসিল বর্ণিত জমিতে শান্তি-শৃঙ্খলা ও স্ত্রীতিরতা বজায় রাখার জন্য উভয় পক্ষকে নিজেদের মধ্যে গোলযোগ ঝগড়া বিরোধ না করে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখার নির্দেশনা দেন। অথচ আদম ও মিজানুরের নেতৃত্বে কয়েকজন মিলে আমাদের মৎস্য ঘেরে অনধিকার প্রবেশ করে ঘর জ্বালিয়ে দিয়েছে।
ঘরের সকল প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সহ বৈদ্যুতিক মটর, মাছের খাদ্য, অন্যান্য মালামাল সহ প্রায় পাঁচ লক্ষ টাকার মালামাল আগুনে পুড়িয়ে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে তারা। ঘর জ্বালানোর ঘটনায় আমরা সব ভাগিদাররা মিলে সিদ্ধান্ত করে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে বিরুদ্ধে সাতক্ষীরা সদর থানায় একটি লিখিত এজাহার দাখিল করেছি। আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষদের কাছে অনুরোধ করব বিষয়টি তদন্ত করে প্রকৃত দোষীদের শাস্তির আওতায় আনা হোক। মৎস্য ঘেরের ঘরে আগুনে জ্বালানোর ঘটনায় সাতক্ষীরা সদর থানায় মামলার বাদী মোঃ ইসলাম বলেন,বল্লী কাঁঠালতলার বিলে আমাদের ৮০ বিঘা জমির একটি মৎস্য ঘের আছে। যাহা আমি সহ আরও কয়েকজন মিলে মৎস্য ঘের ও ধানের আবাদ করে আসছি । আমাদের মৎস্য ঘেরের মালামাল রাখার জন্য ঘেরের দক্ষিণ-পূর্ব কোণে একটি টিন সেটের ঘর আছে।
ঘরের মধ্যে মাছের ঔষধ, মোটর, জাল সহ বিভিন্ন জিনিসপত্র রাখা হয়। গত ইং- ২১/০৫/০২৫ তারিখ রাত্র অনুমান ১০.০০ ঘটিকার সময় সম্পূর্ন হিংসাত্মক মূলক ভাবে কে বা কাহারা আমাদের মৎস্য ঘেরের আগুন দেয়। ঐসময় আমাদের ঘেরের কর্মচারী চন্দন (৩৫) পিতা- মৃত পঞ্চরাম, সাং- কাঁঠালতলা, থানা ও জেলা- সাতক্ষীরা সে ঘেরের উত্তর পাশে ছিল। উক্ত কর্মচারী ঘেরের পাহারা দেওয়া ঘরে দাও দাও করে আগুন জ্বলতে দেখে দৌড়াইয়া ঘেরের বাসার নিকট আসিয়া দেখে যে, কয়েকজন অজ্ঞাতব্যক্তি দৌড়াইয়া পালাইয়া যাইতেছে।
তখন ঘেরের কর্মচারী আমাকে সহ ঘের ভাগিদারদের জানাইলে আমরা ঘেরে আসিয়া দেখি যে, ঘেরের বাসা আগুনে জ্বলিতেছে । তখন আমরা পানি দিয়া আগুন নিভাইয়া ফেলি। আগুনে ঘেরের বাসা পুড়িয়া অনুমান ৫,০০,০০০/- টাকার ক্ষতিসাধন হয়। আমাদের ঘেরে আগুন দেওয়ার বিষয়ে আসামী- ১। মোঃ কাশেম আলী (৪৫) পিতা- মৃত মোহাম্মাদ গাজী, সাং- বল্লী, ২। মোঃ মিজানুর রহমান (৩৭) পিতা- মৃত জয়নুদ্দীন সরদার, সাং- বল্লী, ৩। মোঃ সবুজ (৩৫) পিতা- মৃত অয়েলউদ্দীন সরদার, সাং- আমতলা, ৪। মোঃ মফিজুল ইসলাম (৪০) পিতা- বদর উদ্দীন মোল্লা, সাং- বল্লী, ৫। মোঃ নজরুল ইসলাম (৪৮) পিতা- মনির উদ্দীন ঢালী, সাং- শিবনগর, ৬। মোঃ আদম আলী (৫৫) পিতা- আফিল উদ্দীন মোল্লা, সাং- বল্লী, সর্ব থানা ও জেলা- সাতক্ষীরাগনের প্রতি আমাদের জোর সন্দেহ হয়।
কারণ আসামীদের সাথে ঘেরভেড়ী নিয়া ইতিপূর্বে গোলোযোগ হওয়ায় আসামীরা হুমকি দেয় যে, তাহারা আমাদের মারধর করিবে, খুন জখম করিবে, আমার ঘেরে বিষ দিবে, আমার ঘেরের বাসায় আগুন ধরাইয়া দিবে ইত্যাদি হুমকি প্রদান করে।
কয়েকজন সাক্ষীদের নাম উল্লেখ করে তিনি এজহার দাখিল করেন। অপরদিকে এজাহারে উল্লেখিত আসামিদের সাথে যোগাযোগ করা হরে তারা বলেন, তৌহিদ, ইসলাম সহ জোরদখলকারীরা আমাদের বিরুদ্ধে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ফাঁসানোর চেষ্টা করছে আমরা এমন কোন ঘটনা ঘটায়নি। এ বিষয়ে সাতক্ষীরা সদর থানার অফিসার ইনচার্জ জানান, মৎস্য ঘরে আগুন এর ঘটনায় উভয়পক্ষ অভিযোগ দিয়েছেন, ঘটনার সত্যতা তদন্তের কাজ চলমান।