আবাসিক হলে ফিরবেন না বলে জানিয়ে দিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। আজ সোমবার রাতে তারা হল প্রশাসনকে এ কথা জানান।
রাত পৌনে ৮টার দিকে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ হলের সামনে গিয়ে প্রাধ্যক্ষ ড. মোহাম্মদ জাভেদ হোসেন শিক্ষার্থীদের হলে ফেরার অনুরোধ জানান। কিন্তু শিক্ষার্থীরা তা প্রত্যাখ্যান করেন।
একটু পরই সেখানে আসেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা প্রক্টর অধ্যাপক মো. মাকসুদুর রহমান। তিনি বলেন, ‘আমাদের হাতে সবকিছু নেই। সুযোগ থাকলে আমরা বহিরাগতদের আগেই সরিয়ে দিতাম। এখন আমরা হল প্রভোস্ট ও হাউস টিউটরদের মাধ্যমে হলের ভেতর প্রবেশ করিয়ে বহিরাগত যারা আছে, তাদের বের করার ব্যবস্থা করব। শিক্ষার্থীদের হলে ঢুকানোর আগে বহিরাগতদের বের করাটা কঠিন হচ্ছে।’
রাতভর হলে প্রাধ্যক্ষরা থাকবেন জানিয়ে ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার জন্য আমাদের হলের প্রাধ্যক্ষরা রাতভর হলে অবস্থান করবেন।’
এদিকে ঢাবি এলাকায় বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। আজ সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের দোয়েল চত্বর এলাকায় পুলিশের ব্যাপক উপস্থিতি দেখা যায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ হলের পাশে দেখা যায় পুলিশের সাঁজোয়া যান।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অনুমতি নিয়েই ঢাবি এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) যুগ্ম কমিশনার (অপারেশনস) বিপ্লব কুমার সরকার। তিনি জানান, পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ব্যবস্থা নেবে পুলিশ।
থমথমে ক্যাম্পাস
আজ বিকেল ৩টার দিকে ঢাবির বিজয় একাত্তর হলে শিক্ষার্থীদের ওপর প্রথম হামলা চালায় ছাত্রলীগ। এরপর পুরো ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের ওপর চড়াও হয় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। থেমে থেমে চলতে থাকে হামলা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের হামলায় অনেক শিক্ষার্থীর মাথা ফেটে গেছে। রক্তাক্ত অবস্থায় অ্যাম্বুলেন্স ও রিকশাযোগে তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেওয়া হয়।
বিকেল ৫টার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদুল্লাহ হলে ফের হামলা করে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এখানে বেশ কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণ করা হয়। ঢামেকের সামনেও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ছাত্রলীগের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়।
কোটা সংস্কার দাবিতে আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করে বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নিয়েছে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। ক্যাম্পাসে এখন থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।
ঢাকা মেডিকেলে ঢুকে ছাত্রলীগের হামলা
ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে যাওয়া শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালিয়েছে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। আজ সন্ধ্যা ৭টা ১৫ মিনিটের দিকে লাঠিসোটা নিয়ে তারা হামলা চালায়।
প্রত্যক্ষদর্মীরা জানায়, ছাত্রলীগের অন্তত ২৫ নেতাকর্মী ঢামেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ঢুকে পড়ে। সেখানে চিকিৎসা নিতে যাওয়া আহতদের সঙ্গে থাকা শিক্ষার্থীদের ওপরও হামলা চালায় ছাত্রলীগ। অনেকে ভয়ে হাসপাতালের বিভিন্ন কক্ষে গিয়ে আশ্রয় নেন।
এ সময় মাইকিং করে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের বের হয়ে যেতে বলেন আনসার সদস্যরা। মারধরের পর সন্ধ্যা ৭টা ২৭ মিনিটের দিকে হাসপাতাল থেকে বের হয়ে যায় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা।
হেলমেট পরে আবারও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা লাঠি নিয়ে হামলা চালায়। সবশেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত সন্ধ্যা ৭টা ৪০ মিনিটের দিকে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা মেডিকেলের জরুরি বিভাগ থেকে বের হয়ে যান।
ঢামেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক নাফিজ বিশ্বাস সংবাদমাধ্যমকে জানান, আহত হয়ে অনেক শিক্ষার্থী হাসপাতালে এসেছেন। তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এরই মধ্যে দুই শতাধিক শিক্ষার্থী চিকিৎসা নিয়েছেন।