মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম (খুলনা জেলা সংবাদদাতা): খুলনার দিঘলিয়া, তেরোখাদা ও ফুলতলায় এই বছর পাটের আবাদ বেড়েছে। পাট অধিদপ্তর থেকে জেলার সবচেয়ে বেশি পাট উৎপাদনকারী উপজেলার কৃষকদের প্রণোদনা দেয়া হয়েছে। জেলা পাট অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এবার দু’টি উপজেলার মধ্যে পাইকগাছা উপজেলায় ১ হাজার ৯শ’ কৃষককে ১ কেজি করে পাটবীজ ও ৫ কেজি করে সার দেয়া হয়েছে।
এছাড়া ৭৫ জন কৃষককে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। অনুরূপ ডুমুরিয়া উপজেলায় চাষিদেরও প্রণোদনা দেয়া হয়েছে। জেলা কৃষি অফিসের তথ্যমতে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে জেলার ৯টি উপজেলায় পাটের আবাদ হয়েছে ১৪৪৭ হেক্টর জমিতে। এরমধ্যে তোষা পাট ১৪৪২ হেক্টর, দেশি পাট ৫ হেক্টর। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে মোট পাট আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ১৪৫৭ ধরা হলেও এবার আবাদ হয়েছে ১২৫৭ হেক্টর জমিতে।
যার মধ্যে তোষা পাট ১২২১ হেক্টর এবং দেশি পাট ৩৬ হেক্টর। লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী অর্জন ৮৭ শতাংশ। সূত্রে আরো জানা গেছে, চলতি অর্থবছরে রুপসা উপজেলায় পাটের আবাদ হয়েছে ২১ হেক্টর জমিতে, বটিয়াঘাটায় ৫ হেক্টর, দিঘলিয়ায় ৪৬ হেক্টর, ফুলতলায় ৯ হেক্টর, ডুমুরিয়ায় ৭৯৬ হেক্টর, তেরোখাদায় ১২৫ হেক্টর, পাইকগাছা ২৫২ হেক্টর, কয়রা ৩ হেক্টর জমিতে। কৃষি অফিস জানিয়েছে, ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে রুপসা উপজেলায় পাটের আবাদ হয়েছিল ৩৬ হেক্টর জমিতে, বটিয়াঘাটায় ১৫ হেক্টর, দিঘলিয়ায় ৩০ হেক্টর, ফুলতলায় ১ হেক্টর, ডুমুরিয়ায় ৮৬৬ হেক্টর, তেরোখাদায় ১২০ হেক্টর, পাইকগাছা ৩৭২ হেক্টর, কয়রা ৩ হেক্টর। এবার প্রতি হেক্টর গড় ফলনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১১ দশমিক ৯৯ বেল বা ২ হাজার ৭শ’ ৪৩ মেট্রিক টন।
ডুমুরিয়ার পাঠ চাষি এনামুল কবির বলেন, এবার তিনি ৫ বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছেন। তবে, অন্তত ১০ বিঘা জমিতে এবার পাট লাগানোর ইচ্ছা থাকলেও প্রচণ্ড তাপমাত্রার কারণে সেটা সম্ভব হয়নি। ডুমুরিয়া উপজেলা সহকারী পাট উন্নয়ন কর্মকর্তা দৈনিক স্বাধীন কাগজকে বলেন, উন্নত প্রযুক্তি ভিত্তিক পাট এবং পাট বীজ সম্প্রসারণ প্রকল্পের অধীনে কৃষকদের রাসায়নিক সার, চাষ ও ব্যবহারের প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য প্রণোদনা দেয়া হয়েছে।
সার ও বীজপ্রাপ্ত নির্বাচিত পাট চাষীদের আধুনিক পদ্ধতিতে পাট চাষ ও পাট বীজ উৎপাদন, সার দেওয়া, কর্তন, জাগ দেওয়া, আঁশ ছাড়ানো, বীজ সংরক্ষণ বিষয়ে সচেতনতা ও দক্ষতা বৃদ্ধিতে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক পরিচালক মো. নজরুল ইসলাম দৈনিক স্বাধীন কাগজকে বলেন, দক্ষিণবঙ্গে তুলনামূলক পাট চাষ কম হয়। গত বছর লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হলেও এবার তা না হওয়ার কারণ হিসেবে আমরা মনে করছি প্রণোদনার অভাব এবং পাট চাষের উপযুক্ত পরিবেশ না পাওয়া। তবে চাষীদের পাটবীজ সংরক্ষণ, বীজ পাট উৎপাদন, উঠান বৈঠকসহ নানা পরামর্শ দিয়ে থাকি।
এছাড়া ফরমাল ট্রেডিংয়ের ওপর শতাধিক পাট চাষিকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। পাইকগাছা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এনামুল হোসেন পাটের আবাদ কম হওয়ার কারণ হিসেবে বলেন, চলতি বছর পাট আবাদের সময় অতি মাত্রায় তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে চাষিরা ভালোভাবে আবাদ করতে পারেনি। আবার যখন বৃষ্টি শুরু হয়েছে তখন আবাদেরও উপযুক্ত সময় শেষ হয়ে গেছে।