জাল জালিয়াতির মাধ্যমে দুটি ভুয়া প্রতিষ্ঠানের নামে ঋণ নিয়ে প্রায় ৭৭০ কোটি আত্মসাতের অভিযোগে দেশ টেলিভিশন লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও হাসান টেলিকম লিমিটেডের চেয়ারম্যান আরিফ হাসানসহ ১৯ জনের নামে দুটি মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) কমিশনের সমন্বিত জেলা কার্যালয় ঢাকা-১ এ দুদকের পক্ষে মামলা দুটি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংস্থাটির মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) মো. আক্তার হোসেন।
দুই মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে ১৮৬০ সালের দণ্ডবিধির ১২০বি/৪০৯/৪২০/৪৬৭/৪৬৮/৪৭১/১০৯ ধারা, ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারা, মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ৪(২) ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।
মামলার বাকি আসামিরা হলেন- ব্রডওয়ে রিয়েল এস্টেট লিমিটেডের চেয়ারম্যান মো. ইসমাইল, ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ শরীফ উজ্জামান খান, দুই পরিচালক মোহাম্মদ ফজলে রাব্বি ও তওসিফ সাইফুল্লাহ্।
ন্যাশনাল ব্যাংকের সাবেক শাখা ব্যবস্থাপক ও ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর সৈয়দ রইস উদ্দিন, সাবেক অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এএমডি) ও কোম্পানি সেক্রেটারি এ এস এম বুলবুল, সাবেক অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ ওয়াদুদ, সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক চৌধুরী মোসতাক আহমেদ।
ব্যাংকের সাবেক পরিচালক ও সিকদার গ্রুপের সদস্য মনোয়ারা সিকদার, পারভীন হক সিকদার, রন হক সিকদার, খলিলুর রহমান, মাবরুর হোসেন, বর্তমান পরিচালক মোয়াজ্জেম হোসেন ও মোহাম্মদপুরের সাবেক সাব-রেজিস্ট্রার মো. রজব আলীকে আসামি করা হয়েছে।
অন্যদিকে, ঋণ নেওয়া আরেকটি কাগুজে প্রতিষ্ঠান প্রকৃতি অ্যাসোসিয়েটসের স্বত্বাধিকারী মো. শরীফ-উজ্জামান খান, ন্যাশনাল ব্যাংকের নির্বাহী ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. জহিরুল ইসলাম ও সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট আবু রাশেদ নোয়াবকে আসামি করা হয়েছে।
এক মামলার এজাহার বলা হয়, ব্রডওয়ে রিয়েল এস্টেট লিমিটেড। শিকদার পরিবার ও দেশ টেলিভিশন লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরিফ হাসান পরস্পর যোগসাজশে টেলিভিশনটির কতিপয় কর্মচারীর নাম ব্যবহার করে ব্রডওয়ে রিয়েল এস্টেট লিমিটেড নামে একটি কাগুজে প্রতিষ্ঠান খুলেন। আসামিরা ১৬তলা বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণের জন্য ন্যাশনাল ব্যাংকের মহাখালী শাখায় ব্রডওয়ে রিয়েল এস্টেটের নামে ৪৯০ কোটি টাকা ঋণ নেয়। কিন্তু এ প্রকল্পের জমি অপরের সত্ত্বেও নিজস্ব জমি দেখিয়ে এ ঋণ নেওয়া হয়। হাসান টেলিকমের নামে সম্পত্তির মর্টগেজ সম্পর্কিত তথ্য গোপন করে তা ব্যাংকিং নীতিমালা সম্পূর্ণরূপে উপেক্ষা করে ক্ষমতার অপব্যবহার করা ৪৯০ টাকা ঋণ মঞ্জুর ও তা উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেন আসামিরা।
গত ৩০ নভেম্বরে পর্যন্ত অনাদায়ে সুদ ১৭৮ কোটি ৮৯ লাখ ১১ হাজার ৪১২ টাকাসহ ৬৬৮ কোটি ৮৯ লাখ ১১ হাজার টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে বলে মামলায় অভিযোগ আনা হয়।
আরেক মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, ভুয়া কাগজপত্রের মাধ্যমে প্রকৃতি অ্যাসোসিয়েটস নামে কাগুজে প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল ব্যাংক মহাখালী শাখা থেকে ৮০ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে আত্মসাৎ করেন।
গত বছরের ১৭ নভেম্বর পর্যন্ত ২১ কোটি ২৪ লাখ ১৯৯ টাকাসহ আসামিদের বিরুদ্ধে ১০১ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে।