ডেস্ক রিপোর্ট: পবিত্র হজ্ব-একটি মুসলিমের জীবনের অন্যতম মহাগম্ভীর, আত্মশুদ্ধিমূলক ইবাদত। আর সেই হজ্বকে ঘিরেই যখন প্রতারণা হয়, তখন তা শুধু একটি আর্থিক অপরাধ নয়, বরং আঘাত হানে ধর্মবিশ্বাস, আস্থা ও নৈতিকতার ওপর। ঠিক এমনই এক চমকপ্রদ এবং নিন্দনীয় ঘটনা ঘটেছে, যার মূল চরিত্র নোয়াখালীর সেনবাগ উপজেলার ডমুরুয়া ইউনিয়নের পলতি তারাবাড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা আবুল কালাম আজাদ (৬৪)।
ঘটনাটি কী?
ঢাকার উত্তরা ১০ সেক্টরের বাসিন্দা আলী আরশাদ, পবিত্র হজ্বব্রত পালনের উদ্দেশ্যে ২০২৫ সালের মে মাসে ৮,৮৮,০০০ (আট লক্ষ আটাশি হাজার) টাকা জমা দেন আবুল কালাম আজাদের কাছে। প্রতিশ্রুতি ছিল-হজ্ব কাফেলার যাবতীয় সার্ভিস, গাইডেন্স, থাকার ব্যবস্থা, ভিসা ও খোরাকি নিশ্চিত করা হবে। কিন্তু বাস্তবে? আলী আরশাদ দেশে ফিরে জানতে পারেন-৩,৮৮,০০০ টাকা অতিরিক্ত নেওয়া হয়েছে, এবং প্রতিশ্রুত অধিকাংশ সেবাই তাঁকে দেওয়া হয়নি।
প্রতারণার ছক কীভাবে গড়ে তুললেন আজাদ?
আবুল কালাম আজাদ দাবি করেছিলেন, তিনি গাজীপুরের বোর্ডবাজার এলাকার ‘বাবুসসালাম হজ্ব কাফেলা’ নামক একটি হজ্ব এজেন্সির মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করেন, এবং ৫,৫০,০০০ টাকা ওই কাফেলার মালিক বেনি আমিন এর হাতে জমা দিয়েছেন। বেনি আমিন স্বীকারও করেছেন, তিনি ওই পরিমাণ টাকা পেয়েছেন। তাহলে বাকি ৩,৩৮,০০০ টাকা গেল কোথায়?-এই প্রশ্নই এখন উঠেছে।
একটি মানবাধিকার সংগঠনে অভিযোগ করার পরে আজাদ বাধ্য হয়ে মাত্র ১,২০,০০০ টাকা ফেরত দেন। কিন্তু এটাই কি যথেষ্ট? হজ্বের মতো পবিত্র এক ইবাদতের আড়ালে এতবড় প্রতারণা কি শুধুমাত্র টাকা ফেরত দিলেই শেষ হয়ে যাবে?আরো কেউ এ ঘটনার সাথে জড়িতদের বিচারের দাবি।
জনগণের প্রতিক্রিয়া
আবুল কালাম আজাদ ও আলী আরশাদ-দুজনই একই গ্রামের সন্তান। গ্রামে এই ঘটনা জানাজানি হতেই মানুষ বিস্মিত ও ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। গ্রামের অনেকে অভিযোগ তুলেছেন, এটি তাঁর ‘প্রথম নয়, বহু পুরনো অভ্যাস’। ধর্মের আবরণে আজাদ দীর্ঘদিন ধরেই ‘ধার্মিক চরিত্র’ জাহির করে সাধারণ মানুষকে ঠকিয়ে আসছেন।
ন্যায়বিচার দাবি
এই ঘটনায় প্রতারণার শিকার আলী আরশাদ কেবল ন্যায়বিচারই চান না, চান উদাহরণমূলক শাস্তি-যাতে আর কোনো হজযাত্রী বা সাধারণ মানুষ এই ধরণের ধর্মপচারী প্রতারকের শিকার না হন।
সরকার, ধর্ম মন্ত্রণালয় ও হজ্ব এজেন্সি এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (HAAB) প্রতি আহ্বান, এ ধরনের প্রতারকদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। ধর্মের নামে প্রতারণা রোধ করতে না পারলে এটি শুধু ধর্ম নয়, রাষ্ট্রের আইন ও সমাজের নৈতিকতাকেও প্রশ্নবিদ্ধ করবে।
হজ্ব নিয়ে প্রতারণা নিছক কোনো ব্যক্তি অপরাধ নয়, এটি গোটা ধর্মীয় ব্যবস্থার ওপর আস্থা ধ্বংসের চক্রান্ত। আবুল কালাম আজাদের মতো ছদ্মবেশী চরিত্ররা সমাজ ও ধর্ম উভয়ের শত্রু। সময় এসেছে-এদের মুখোশ টেনে খুলে ফেলার।
এই ঘটনার বিরুদ্ধে আরো বিস্তারিত ভাবে তদন্ত চলছে।