নিজস্ব প্রতিবেদক: ময়মনসিংহ সার্কেলের জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী সামিউল হক এর বিরুদ্ধে ঘুষ, দুর্নীতি, অনিয়মের অভিযোগে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। বিগত আওয়ামী সরকারের শাসনামলে দায়িত্ব পালন করে সুবিধা ভোগ করে সাম্প্রতিক বহাল তবিয়তে রয়েছেন তিনি। তাঁর বিরুদ্ধে সরকারি চাকরির আড়ালে ঠিকাদারি, ঘুষ বাণিজ্য, টেন্ডার টেম্পারিং, কমিশন বাণিজ্যসহ নানা অভিযোগ উঠেছে। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে দেশে স্বৈরাচার সরকারের পতন হলেও তাঁর অবস্থানের কোনো ব্যত্যয় ঘটেনি। এখনো বহাল তবিয়তে থেকে দুর্নীতির মাত্রা আরও বাড়িয়ে তুলেছেন।
তিনি জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের ময়মনসিংহ সার্কেলের সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী ছামিউল হক। বর্তমানে শেরপুর জনস্ব…
স্থানীয় একাধিক ভুক্তভোগীদের দাবি , ময়মনসিংহে থাকাকালীন তাঁর বিভিন্ন দুর্নীতির মধ্যে ব্যাপক সমালোচিত,সদরের গজিয়াবাড়ী মাঠে বিভাগীয় ল্যাবের সামনে বালু ভরাটের নামে কোনো কাজ না করেই তিন লাখ টাকা আত্মসাৎ, মাঠের সীমানাপ্রাচীর নির্মাণে পছন্দের ঠিকাদারকে দিয়ে নামমাত্র কাজ করিয়ে পাঁচ লাখ টাকা আত্মসাৎ, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীর বাসভবনের সামনের রাস্তা মেরামতে পুরনো নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীর কার্যালয়ের সীমানাপ্রাচীর রং করার কাজে দুর্নীতি করে পাঁচ লাখ টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগে ফুঁসে উঠেছে স্থানীয় জনগণ।
এছাড়াও বেশি কমিশন ও গোটা প্রকল্পের টাকা আত্মসাতের উদ্দেশ্য, তাঁর পছন্দের ঠিকাদারদের কাজ পাইয়ে দিয়েছেন। আবার কিছু ঠিকাদার কাজ করেও কমিশন টার্গেট পূরণ না হওয়ায় বিল নিয়ে দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। আবার ফাইল আটকে ভোগান্তিতে ফেলার অভিযোগ রয়েছে।
এদিকে ভুক্তভোগী ঠিকাদারদের অভিযোগ , শুধু চলতি বছরের জুন মাসেই তাঁর পছন্দের ঠিকাদারদের অগ্রিম বিল এবং নানাভাবে কাজ পাইয়ে দিয়ে দুই কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। এ ছাড়া তিনি পৌরসভা প্রকল্পের কাজের ঠিকাদার মেসার্স কালু শাহ ট্রেডার্সের বিলের টাকা চেকের মাধ্যমে নিজের নামে উত্তোলন করেছেন। এসব অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে তিনি প্রায় ৩০ কোটি টাকা হাতিয়েছেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, সাবেক আওয়ামী সরকারের পতনের পর সরকার দলীয় নেতাদের ম্যানেজ করে নিয়মিত মোটা অঙ্কের টাকা দিয়ে নিজের অবস্থা পাকা করে অপকর্ম চালিয়ে আসছেন।
সামিউল হক এর বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে উল্লেখ্য বিষয় মনয়নসিংহে ‘ঈশ্বরগঞ্জ পৌরসভার পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন ব্যবস্থার সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন’ শীর্ষক একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। খরচ ধরা হয় ৪০ কোটি ৯০ লাখ ২১ হাজার টাকা। প্রকল্প কার্যক্রমের শুরু থেকে তিনি নানা অনিয়মের মাধ্যমে বিপুল অঙ্কের টাকা নয়ছয় করলেও পৌরবাসীর ঘরে সুপেয় পানি পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। সুপেয় পানি শুধু কাগজে রয়েছে পৌরবাসী দেখতে পায়নি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভুক্তভোগী আরেক ঠিকাদার দৈনিক স্বাধীন কাগজ কে বলেন , ছামিউল আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সদস্য ও ছাত্রলীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মারুফা আক্তার পপির ছত্রচ্ছায়ায় থেকে বারবার দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন। যে কারণে তাঁর দুর্নীতির বিরুদ্ধে মুখ খুলতে কেউ সাহস পায়নি।নিজের অবস্থান ঠিক রাখতে আওয়ামী লীগের এ নেতার ছত্রছায়ায় বহাল রয়েছেন।ওই সময় নিয়ম ভেঙে ময়মনসিংহ জেলায় চার বছর নির্বাহী প্রকৌশলীর দায়িত্ব পালন করেন। এসয় অতিউচ্ছ্বাসিত হয়ে প্রতিটি ওয়ার্ক অর্ডারের জন্য ৫ শতাংশ কমিশন বাগিয়ে নিতেন। তাঁর বাছাইকৃত ঠিকাদার ছাড়া সেখানে জনস্বাস্থ্যের কোনো কাজ হতো না। ছামিউলকে সে সময় তৎকালীন ধর্মমন্ত্রী ফরিদুল হক খান দুলালও সামিউল এর প্রশ্রয়দাতা হিসেবে নাম উঠে এসেছে।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, ছামিউল হক ৫% থেকে ৭% অর্থের বিনিময়ে দরপত্রের গোপন রেট পছন্দের ঠিকাদারকে দিয়ে কাজ বাগিয়ে নিতে সহায়তা করেন। এ ছাড়া টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্নের পর প্রাপ্ত ঠিকাদারকে নোটিফিকেশন অব অ্যাওয়ার্ড দিতে এক থেকে দেড় শতাংশ নেন তিনি। কোনো ঠিকাদার অতিরিক্ত টাকা দিতে আপত্তি জানালে প্রকল্প বাস্তবায়নে নানা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে কৌশলে অর্থ হাতিয়ে নিতেন। এ ছাড়া বিলের ক্ষেত্রে ৩% দিতে হবে বলে অলিখিত আদেশ জারি করতেন। ফাইলের সঙ্গে কমিশনের টাকা না দিলে দিনের পর দিন ফাইল আটকে রাখতেন এ দুর্নীতি বাজ প্রকৌশলী। তাঁর কাজে সহায়তার জন্য রয়েছে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট সদস্য। তাঁর দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রথম সারির একাধিক গণমাধ্যম নিউজ প্রকাশ হলেও নিজ অবস্থানে সক্রীয় রয়েছেন এ অসাধু প্রকৌশলী।
এসব অনিয়মের বিষয় জানতে চেয়ে তাঁর মুঠোফোনে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও তিনি কোন রেসপন্স করছেন না। তাঁর হোয়াটসঅ্যাপে খুদেবার্তা পাঠানো হলেও কোনো জবাব পাওয়া যায়নি।