কোরআন মহান আল্লাহ তাআলার কালাম। মানুষের কাছে পাঠানো আল্লাহর বার্তা। কোরআন মানুষকে কল্যাণের পথ দেখায়। হেদায়াতের পথ দেখায়। জান্নাতের সুসংবাদ দেয়। অকল্যাণের পথে যেতে নিষেধ করে এবং জাহান্নামের শাস্তির ব্যাপারে সতর্ক করে।
আল্লাহ তাআলা বলেন, নিশ্চয়ই এ কোরআন সেই পথ দেখায় যা সোজা ও সুপ্রতিষ্ঠিত, আর যারা সৎ কাজ করে সেই মুমিনদেরকে সুসংবাদ দেয় যে, তাদের জন্য রয়েছে মহা পুরস্কার। আর যারা আখেরাতে ইমান আনে না, (তাদেরকে সংবাদ দেয়) তাদের জন্য আমি ভয়ঙ্কর আজাব প্রস্তুত করে রেখেছি। (সুরা ইসরা: ৯, ১০)
আরেক আয়াতে আল্লাহ তাআলা কোরআনকে আলোর সাথে তুলনা করেছেন যা মুমিনদের সঠিক পথে পরিচালিত করে। আর কাফেররা পড়ে থাকে অন্ধকারে। আল্লাহ তাআলা বলেন, যে ছিল মৃত, অতঃপর আমি তাকে জীবন দিয়েছি এবং তার জন্য নির্ধারণ করেছি আলো, যার মাধ্যমে সে মানুষের মধ্যে চলে, সে কি তার মত যে ঘোর অন্ধকারে রয়েছে, যেখান থেকে সে বের হতে পারে না? এভাবেই কাফিরদের জন্য তাদের কৃতকর্ম সুশোভিত করা হয়। (সুরা আনআম: ১২২)
তাই আমাদের কর্তব্য কোরআনকে নিজেদের পথ চলার আলো ও নির্দেশিকা হিসেবে গ্রহণ করা। গভীর মনোযোগ দিয়ে চিন্তা ভাবনা করে কোরআন তিলাওয়াত করা এবং আল্লাহ তাআলা ইচ্ছা, সন্তুষ্টি ও নির্দেশনা বোঝা এবং তার ইচ্ছা অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করা।
কোরআনের আয়াতসমূহ নিয়ে গভীর চিন্তা-ভাবনা করা ও উপদেশ গ্রহণ করার নির্দেশ দিয়ে আল্লাহ তাআলা বলেন, আমি তোমার প্রতি নাজিল করেছি এক বরকতময় কিতাব, যাতে তারা এর আয়াতসমূহ নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করে এবং যাতে বুদ্ধিমানগণ উপদেশ গ্রহণ করে। (সুরা সোয়াদ: ২৯)
আরেক আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেছেন, তবে কি তারা কোরআন নিয়ে গভীর চিন্তা-ভাবনা করে না? নাকি তাদের অন্তরসমূহ তালাবদ্ধ? (সুরা মুহাম্মাদ: ২৪)
ছবি: সংগৃহীত
এ আয়াতগুলোর নির্দেশনা সুস্পষ্ট। আল্লাহ চান মানুষ কোরআনের মর্ম অনুধাবন করে কোরআন পাঠ করুক। আল্লাহ কী বলেছেন, কী বুঝিয়েছেন তা নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা ভাবনা করুক। কোরআন অর্থ না বুঝে পাঠ করলেও সওয়াব পাওয়া যায়। কিন্তু অর্থ বুঝে কোরআন পাঠের সওয়াব নিঃসন্দেহে অনেক বেশি।
অনেকে দীনি অন্যান্য বইপত্র পড়লেও অর্থ ও ব্যাখ্যাসহ সরাসরি কোরআন পাঠ করাকে তেমন গুরুত্ব দেয় না। অনেকে ভাবে, কোরআনের অর্থ বুঝে পাঠক করা সাধারণ মানুষের জন্য না, শুধু আলেম বা ইসলামি জ্ঞানে পণ্ডিত ব্যক্তিরাই কোরআন বুঝতে পারেন। এই ধারণা সঠিক নয়। আল্লাহ তাআলা কোরআনে বলেছেন, আর আমি তো কুরআনকে সহজ করে দিয়েছি উপদেশ গ্রহণের জন্য। অতএব কোন উপদেশ গ্রহণকারী আছে কি? (সুরা কামার: ১৭)
হারিস আওয়ার (রহ.) বলেন, একদিন দেখলাম কিছু লোক মসজিদে বসে হাদিস বা দীনের অস্পষ্ট ও জটিল বিষয় নিয়ে অতিমাত্রায় বাকবিতণ্ডা করছে। আমি হজরত আলীর (রা.) কাছে গিয়ে এ ব্যাপারে বললাম। আলী (রা.) বললেন, তারা এ কাজ করছে নাকি! আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি বললেন, আমি আল্লাহর রাসুলকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলতে শুনেছি, সাবধান! শীঘ্রই পৃথিবীতে ফেতনা শুরু হবে। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! এ থেকে বাঁচার উপায় কী? আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, আল্লাহর কিতাব, এতে তোমাদের আগের ও পরের খবর রয়েছে। তোমাদের মধ্যকার বিতর্কের ফয়সালার পদ্ধতিও আছে। সত্য মিথ্যার পার্থক্যও আছে। এটা কোনো অর্থহীন কিতাব নয়। যে অহংকারী ব্যক্তি এ কোরআন ত্যাগ করবে, আল্লাহ তাআলা তার অহংকার চূর্ণ করবেন। যে ব্যক্তি এর বাইরে হিদায়াত সন্ধান করবে, আল্লাহ তাআলা তাকে পথভ্রষ্ট করবেন। এ কোরআন হলো আল্লাহর মজবুত রজ্জু, জিকির ও সত্য সরল পথ।