বৃহস্পতিবার , ২৫ জুলাই ২০২৪ | ৮ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
  1. অন্যান্য
  2. অপরাধ
  3. অর্থনীতি
  4. আইটি বিশ্ব
  5. আইন-বিচার
  6. আন্তর্জাতিক
  7. ইসলাম
  8. ঈদুল ফিতর
  9. ক্যাম্পাস
  10. ক্রিকেট
  11. খুলনা
  12. খেলা-ধুলা
  13. চট্টগ্রাম
  14. জাতীয়
  15. ঢাকা

ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হচ্ছে জনজীবন

প্রতিবেদক
স্বাধীন কাগজ
জুলাই ২৫, ২০২৪ ১০:৩৮ অপরাহ্ণ   প্রিন্ট সংস্করণ

ঘড়িতে তখন বিকেল ৫টা ২৭ মিনিট। রাজধানীর মহাখালী উড়ালসড়ক। তিন পাশে যত দূর চোখ গেছে পুরো পথে গাড়ির জট। গাড়ির জটে রাজধানীর প্রধান সড়কগুলো তখনো স্থবির।

অথচ চলমান কারফিউ শিথিল ছিল বিকেল ৫টা পর্যন্ত। উপায় না থাকায় ওই সময়ও সড়কে আটকা পড়া কর্মজীবী মানুষ ঘরে ফিরছিলেন।
শুধু যে মহাখালী বা বনানী এলাকার পরিস্থিতি এমন ছিল, তা নয়। বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) শেষ বিকেলে রাজধানীর সব সড়কের অবস্থা ছিল একই রকম।

বিকেল ৪টার দিকে শান্তিনগর, কাকরাইল, রমনা, পরীবাগ, বাংলামোটর, কারওয়ান বাজার এলাকায়ও তীব্র যানজট দেখা গেছে।

 

ব্যক্তিগত মোটরসাইকেলে বিকেল ৪টায় সেগুনবাগিচা থেকে কুড়িলের পথে যাত্রা করেন মাহামুদ হাসান। তিনি কুড়িল এসে পৌঁছান বিকেল ৬টা ২ মিনিটে। কথা হলে মাহামুদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘কোথায় জ্যাম ছিল না সেটা বলেন ভাই।

পুরো রাস্তা যানজটে থমকে আছে। রাস্তার অবস্থা দেখে কারফিউ পরিস্থিতি বোঝার উপায় নেই।’

 

ওই সময় পাশ থেকে মো. সারোয়ার আগ বাড়িয়ে বললেন, ‘আগের দিন রাত ৯টার দিকে তেজগাঁও থেকে যাওয়ার পথে বিজয় সরণিতে সিগন্যাল আটকা পড়েছিলাম। কাউফিউতেও বিজয় সরণির সিগন্যালে গাড়ির দীর্ঘ সারি তৈরি হয়।’

বৃহস্পতিবার বিকেল পৌনে ৫টার দিকে কারওয়ান বাজার মোড়ে চারদিকে গাড়ির প্রবল চাপ দেখা গেছে।

এসব গাড়িতে বেশির ভাগ যাত্রী ছিলেন অফিসফেরত। গাড়ির চাপের কারণে সিগন্যাল অচল হওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। এই যানজট সামনে ফার্মগেট এবং পেছনে শাহবাগ ছুঁয়েছে।
ওই যানজটে আটকে পড়া বেসরকারি একটি ব্যাংকের কর্মকর্তা মশিউর রহমান বলেন, ‘এই কারফিউ জনগণের সুবিধার জন্য দেওয়া হয়েছে। কারণ, আমাদের চলাচলে কোনো অসুবিধা হচ্ছে না। উল্টো নিরাপত্তা পাচ্ছি।’

 

সচিবালয়ে ছিল সরব উপস্থিতি
চলমান পরিস্থিতির মধ্যে গত বুধবার ও বৃহস্পতিবার চার ঘণ্টার জন্য খোলা ছিল সরকারি-বেসরকারি অফিস। এই সময় সচিবালয়সহ সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সরব উপস্থিতি  ছিল। বৃহস্পতিবার সচিবালয় ঘুরে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের স্বাভাবিক উপস্থিতি দেখা গেছে।

কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে ব্যাপক সহিংসতা এবং কারফিউয়ের মধ্যে তিন দিন সাধারণ ছুটির পর গত বুধবার খোলা হয় প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়। সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বুধ ও বৃহস্পতিবার সব সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত অফিস খোলা ছিল সকাল ১১টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত।
আজ শুক্রবার ও আগামীকাল শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি। এরপর আগামী রবিবার থেকে স্বাভাবিক নিয়মে সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত অফিস চলতে পারে। কারফিউ শিথিলের সময় আরো বেড়ে শুধু রাতে থাকতে পারে।

জনপ্রশাসনমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আগামী রবিবার থেকে কিভাবে অফিস চলবে এ বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। অফিস চালুর সিদ্ধান্ত হলেই জানা যাবে।’

দূরপাল্লায় বাস চলাচল বেড়েছে

বৃহস্পতিবার সকালে অনেককে রাজধানী ছাড়তে দেখা গেছে। গত কয়েক দিনের তুলনায় বৃহস্পতিবার রাজধানীতে দূরপাল্লার গণপরিবহনের ব্যাপক উপস্থিতি লক্ষ করা গেছে। গুলিস্তান, ফুলবাড়িয়া, মহাখালী ও সায়েদাবাদ এলাকা থেকে কিছুক্ষণ পর পর যাত্রী নিয়ে বিভিন্ন গন্তব্যে বাস ছেড়ে গেছে।
সকাল সাড়ে ১১টায় কিশোরগঞ্জের কটিয়াদীতে যাওয়ার উদ্দেশে গুলিস্তানের মেয়র মোহাম্মদ হানিফ উড়ালসড়কের কাছে অবস্থিত বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশনের (বিআরটিসি) বাস কাউন্টারে এসেছিলেন পারুল জাহান। কাউন্টারে এসে তাঁকে বাসের জন্য অপেক্ষা করতে হয়নি। কিন্তু যাত্রীর অপেক্ষায় বাস দাঁড়িয়ে ছিল পৌনে এক ঘণ্টা। এরপর ২০-২২ জনের মতো যাত্রী নিয়ে বাসটি রাজধানী ছেড়েছে।

পারুল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বেশ কয়েক দিন ধরেই বাড়ি যাওয়ার দরকার ছিল। কিন্তু পরিস্থিতি ভালো হওয়ার অপেক্ষা করছিলাম। রাস্তায় এসে দেখি সবই স্বাভাবিক। তবু বাড়ি থেকে বারবার ফোন দিয়ে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। যাত্রী না হওয়ায় বাস ছাড়তে দেরি হচ্ছে।’

বিআরটিসির মতোই বেশির ভাগ বাসের একই অবস্থা। প্রায় কোনো বাসই পূর্ণ যাত্রী নিয়ে কাউন্টার ছেড়ে যেতে পারেনি। একটি বাস কাউন্টারের ব্যবস্থাপক বলেন, ‘অর্ধেকের বেশি যাত্রী না হলে গাড়ি চালিয়ে লোকসান হয়। তাই একটু অপেক্ষা করে হলেও যে কজন যাত্রী পাওয়া যায় নেওয়ার চেষ্টা করছি। আবার পরের বাসকেও সুযোগ দিতে হচ্ছে। তাই যাত্রী ভরে বাস ছাড়ার সুযোগ নেই।’

লঞ্চ চলাচলের অনুমতি মিললেও সময়ের বাধা
কারফিউ শিথিল থাকা অবস্থায় লঞ্চ চালানো যাবে—এমন সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডাব্লিউটিএ)। কিন্তু কারফিউ শিথিল থাকছে সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত। সাধারণত এই সময় সবচেয়ে কম লঞ্চ চলাচল করে। বেশির ভাগ লঞ্চ সকালে এবং সন্ধ্যায় ঢাকা থেকে ছেড়ে যায়।
ফলে বৃহস্পতিবার ঢাকা থেকে চাঁদপুর, ইলিশা ও সুরেশ্বরের মতো কম দূরত্বে কিছু লঞ্চ চলাচল করলেও যাত্রী নিয়ে বড় দূরত্বের লঞ্চ ছাড়া হয়নি। মালিকদের দাবি, বাসের মতো যেন লঞ্চকে যাত্রী পরিবহনের সুযোগ দেওয়া হয়।
বাংলাদেশ লঞ্চ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকুর রহমান পাটোয়ারী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘চাইলেও এই সময় দূরের লঞ্চ ছাড়া সম্ভব না। আবার কম দূরত্বে অল্প যাত্রী নিয়ে একাধিক ট্রিপ দিলে তেলের খরচ তুলে পড়তায় পুষবে না।’

চলেনি ট্রেন
বৃহস্পতিবার লোকাল ও কমিউটার ট্রেন চলার কথা বলেছিল বাংলাদেশ রেলওয়ে। বলা হয়েছিল, কারফিউ শিথিল থাকা অবস্থায় ঢাকা থেকে নারায়ণগঞ্জ, টাঙ্গাইল, জয়দেবপুর ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মতো কম দূরত্বে কমিউটার ও লোকাল ট্রেন চালানো হবে।
সেই সঙ্গে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে এক জেলা থেকে আরেক জেলায় ট্রেন চলাচল করবে। আর আজ শুক্রবার থেকে সীমিত পরিসরে আন্ত নগর ট্রেন চালানোর পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু জননিরাপত্তার কথা উল্লেখ করে বাংলাদেশ রেলওয়ে ট্রেন চালানোর সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করেছে।

ঢাকা (কমলাপুর) রেলস্টেশনের মাস্টার আনোয়ার হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ট্রেন চালানোর প্রস্তুতি থাকলেও শেষ মুহূর্তে কর্তৃপক্ষ ট্রেন চালানোর নির্দেশনা বাতিল করেছে।’

সর্বশেষ - সংবাদ