মোঃ নওয়াব ভূইয়া (রূপগঞ্জ সংবাদদাতা): নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের পূর্বাচলের একটি লেক থেকে পলিথিনে মোড়ানো সাত টুকরা লাশের পরিচয় পাওয়া গেছে। খন্ডিত লাশটি নারায়ণগঞ্জের শিল্পপতি জসীমউদ্দীন মাসুমের(৫৯)। গত বুধবার সকালে জসিমের সাত টুকরা লাশ উদ্ধারের পর রাতে এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত রুমা আক্তার নামে এক নারীকে ঢাকার কাফরুল থানা শেওড়াপাড়া এলাকা থেকে গ্রেফতার করেছে নারায়ণগঞ্জ পুলিশ। রুমার সঙ্গে নিহতের প্রেমঘঠিত সম্পর্ক ছিল বলে দাবি পুলিশের।
রুমাকে বিয়ে করতে টালবাহানা করায় রুমার পরিকল্পনায় তাকে হত্যা করে লাশ গুম করার জন্য সাত খন্ড করে লেকে ফেলে দেওয়া হয়। ঐ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রুমার এক বান্ধবীকে আটক করেছে পুলিশ। তবে এ ঘটনাটি রুমা একাই ঘটিয়েছে নাকি এর সঙ্গে আরো কেউ জড়িত রয়েছে সেটি পুলিশ তদন্ত করে দেখছে।
জসিম গত ১০ নভেম্বর রাত থেকে নিখোঁজ ছিলেন। এ ঘটনায় তার বড় ছেলে ওবায়দুল ইসলাম শিবু ১১ নভেম্বর বাদি হয়ে গুলশান থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছেন। পুলিশ রুমার হেফাজত থেকে হত্যায় ব্যবহৃত চাপাতি, হেসকো ব্লেড, ও নিহতের সাফারি স্যুট এবং একজোড়া জুতা উদ্ধার করেছে। রুমা ময়মনসিংহ জেলার গৌরীপুর থানার তাতরাকান্দা গ্রামের নজর আলীর মেয়ে। নিহত ও শিল্পপতি জসীমউদ্দীন মাসুম নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থানার সস্তাপুর এলাকার মৃত আলেক চান বেপারীর ছেলে।
তিনি পরিবার নিয়ে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় বসবাস করেন। সেরা করদাতা হিসেবে জসিম বেশ কয়েকবার কর বাহাদুর পুরস্কার পেয়েছিলেন। চাঁদ ড্রাইংসহ বেশ কিছু শিল্প কারখানা রয়েছে তার। বৃহস্পতিবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে শিল্পপতি জসিম উদ্দিনের রহস্য উদঘাটন করার কথা জানায় পুলিশ। সংবাদ সম্মেলন উপস্থিত ছিলেন পুলিশ সুপার প্রত্যুষ কুমার মজুমদারসহ জেলা পুলিশের অন্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ জানায় বুধবার লাশ উদ্ধারের পর গুলশান থানার জিডির সূত্র ধরে নিহতের স্বজনরা এসে লাশের দাড়ি, নখ ও পায়ের কিছু চিহ্ন দেখে শিল্পপতির জসিম উদ্দিন মাসুমের বলে শনাক্ত করেন। নিহত জসীমউদ্দীনের দুই ছেলে এক মেয়ে। বড় ছেলে ওবায়দুল ইসলাম শিবু বলেন ১০ নভেম্বর রাত সাড়ে এগারোটায় মায়ের সঙ্গে বাবার শেষ কথা হয় রাতে বাড়ি ফিরে না আসায় পরদিন ১১ই নভেম্বর দুটি মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় শিবু ঐ দিনই গুলশান থানায় একটি নিখোঁজ ডায়েরি করেন।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয় ১০ নভেম্বর ব্যক্তিগত গাড়িতে করে গুলশান যান জসিম উদ্দিন। সেখানে গিয়ে গাড়ি চালক মালেক কে ছেড়ে দিয়ে বলেন অন্য গাড়িতে করে নারায়ণগঞ্জে যাবেন। ঐ রাতেই সাড়ে ১১টায় স্ত্রীর সঙ্গে টেলিফোনে শেষ কথা হয়। তারপর থেকেই ফোন বন্ধ ছিল।
পুলিশ জানায়, তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় শেষ লোকেশন কাফরুল থানার শেওড়াপাড়া এলাকায় জানতে পারে। ঐখানে রুমার খোঁজ পাওয়া যায়। যে ফ্লাটে থাকতো সেটিও জসিম উদ্দিন ভাড়া করে দিয় ছিলেন। জসিম উদ্দিনের সঙ্গে রুমার প্রেমঘটিত সম্পর্ক ছিল। কথা ছিল জসিম বিয়ে করবে।
বিয়ে না করায় এবং অন্য এক নারীর সঙ্গে জুড়িয়েছে জানতে পেরে জসিমকে হত্যার পরিকল্পনা করে। মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা নাম না প্রকাশ করার শর্তে বলেন পূর্বাচলের যে লেকে জসীমউদ্দীনের খন্ডিত লাশ ফেলা হয়েছে আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজ থেকে দেখা গেছে একাই ব্যাগে লাশের খন্ডিত অংশ বহন করে এনেছিল।
এজন্য সে বাহন হিসেবে উবারে ভাড়া করা একটি ট্যাক্সি ব্যবহার করে । হত্যাকাণ্ডে তার সঙ্গে কেউ জড়িত ছিল কিনা সেটি জানার জন্য রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসা বাদ করবে পুলিশ। উল্লেখ্য, গত বুধবার সকালে কাঞ্চন কুড়িল সড়কের পাশে লেক থেকে তিনটি পলিথিন ব্যাগে মোড়ানো একটি লাশের ৭টি অংশ উদ্ধার করে। এ ঘটনায় রূপগঞ্জ থানায় একটি মামলা করেছে পুলিশ।