ইডেন কলেজের এক ছাত্রীকে বাসায় ৬ মাস আটকে রেখে বিভিন্ন সময় ধর্ষণের অভিযোগে সংগীতশিল্পী মাইনুল আহসান নোবেলকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত। মঙ্গলবার ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জিয়া উদ্দিন আহমদ এ আদেশ দেন।
এদিন নোবেলকে আদালতে হাজির করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের মামলায় তাকে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেছেন ডেমরা থানা পুলিশের পরিদর্শক মো. মুরাদ হোসেন। আবেদনে তিনি বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভুক্তভোগী ছাত্রীর সঙ্গে নোবেলের পরিচয় হয়। এরপর তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ১২ নভেম্বর নোবেল তার স্টুডিও দেখানোর কথা বলে ভুক্তভোগীকে ডেমরা থানাধীন তার বাসায় নিয়ে যায়। এরপর কয়েকজন আসামির সহায়তায় সে ওই ছাত্রীকে আটকে রাখে।
এরপর ১২ নভেম্বর রাতে আটক ভুক্তভোগীর কাছ থেকে নোবেল মোবাইল নিয়ে নেয়। বাদী পরিবারের সঙ্গে কথা বলার জন্য মোবাইল ফেরত দিতে বললে নোবেল ওই ছাত্রীর ২৬ হাজার টাকার রেডমি ১০ প্রো মোবাইল ফোন ভেঙে ফেলে। এরপর নোবেল ওই ছাত্রীকে ধর্ষণ করে ভিডিও ধারণ করে রাখে। নোবেলের কথামতো বাসায় না থাকলে ধারণ করা ধর্ষণের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেয়। তাই ওই ছাত্রী আসামির ভয়ে কাউকে কিছু বলার সাহস পাননি।
নোবেল নেশাগ্রস্ত অবস্থায় বিভিন্ন দিন ও সময়ে বাদীকে মারধর করত। আসামি তার সহযোগী অজ্ঞাতনামা আরও ২-৩ জনের সহায়তায় বাদীকে সিঁড়ি দিয়ে চুল ধরে টানা-হ্যাঁচড়া করে আরেকটি কক্ষে আটকে রেখেছিল। এমন একটি ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হলে বাদীর বাবা-মা তাকে চিনতে পারেন। এরপর তারা জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ কল দিলে ১৯ মে রাতে নোবেলকে পুলিশ গ্রেফতার করে এবং ভুক্তভোগীকে উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় ডেমরা থানায় অপহরণের পর ধর্ষণের অভিযোগে নোবেলের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।
এদিকে নোবেলের আইনজীবী জসিম উদ্দীন আদালতকে বলেন, বাদী নোবেলের স্ত্রী। তারা একই সঙ্গে বাসায় বসবাস করতেন। বাদী ৪ মাসের অন্তঃসত্ত্বা। নোবেল তার স্ত্রীর সঙ্গে সংসার করতে চান। দুজনের মাঝে ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। তাই মামলা করেছেন। আমরা কাবিননামাটা এখন আনতে পারিনি। তবে সময় দিলে আদালতে উপস্থাপন করতে পারব। শুনানি শেষে আদালত নোবেলকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। এর আগে মঙ্গলবার নারী নির্যাতন মামলায় নোবেলকে গ্রেফতার করা হয়।
জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ ফোন পেয়ে সোমবার রাত ২টার দিকে স্টাফ কোয়ার্টার এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। এর আগে পুলিশ অভিযান চালিয়ে ভুক্তভোগী কলেজছাত্রীকে ডেমরার আমতলার নোবেলের বাড়ি থেকে উদ্ধার করে। নোবেল ওই এলাকার মোজাফ্ফর এইচ নান্নুর ছেলে। তাদের গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জ সদরের ঘোষের চর এলাকায়। এ ঘটনায় নোবেল ও তার ২-৩ জন সহযোগীর বিরুদ্ধে সোমবার রাতেই মামলা করেন ওই কলেজছাত্রী।
ডেমরা থানার ওসি মাহমুদুর রহমান বলেন, তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় সোমবার রাতে নোবেলকে গ্রেফতার করা হয়। নোবেল সীমান্ত দিয়ে দেশের বাইরে পালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন। এজন্য তিনি একটি মাইক্রোবাস ভাড়া করেছিলেন। তবে পালানোর আগেই তাকে গ্রেফতার করা হয়।
দুই বছর আগেও প্রতারণার মামলায় নোবেলকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। একটা অনুষ্ঠানে যাওয়ার কথা বলে টাকা নিয়েছিলেন নোবেল। কিন্তু পরে আর তিনি সেই অনুষ্ঠানে উপস্থিত হননি। এ ঘটনায় ২০২৩ সালে নোবেলের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়।
ভারতের পশ্চিমবঙ্গের জি বাংলার গানের শো সা রে গা মা পায় অংশ নিয়ে সবার নজরে আসেন নোবেল। তার গান দর্শকের মনে স্থান করে নেয়। পরে তার বেশ কিছু গান জনপ্রিয়তা পায়। তবে নোবেল ব্যক্তিগত নানা আচরণের কারণে বিভিন্ন সময়ে আলোচিত হন। একাধিক বিয়ে করেও তিনি আলোচনায় এসেছিলেন। কিন্তু কোনো সংসারই স্থায়ী হয়নি। ২০১৯ সালে সালসাবিল মাহমুদকে বিয়ে করে আলোচনা সৃষ্টি করেন নোবেল। কিন্তু মাদক ত্যাগ না করায় সে সংসার টেকেনি। এরপর ২০২৩ সালের শেষে ফের নোবেলের বিয়ের খবর সামনে আসে।