বৃহস্পতিবার , ১৫ আগস্ট ২০২৪ | ৯ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
  1. অন্যান্য
  2. অপরাধ
  3. অর্থনীতি
  4. আইটি বিশ্ব
  5. আইন-বিচার
  6. আন্তর্জাতিক
  7. ইসলাম
  8. ঈদুল ফিতর
  9. ক্যাম্পাস
  10. ক্রিকেট
  11. খুলনা
  12. খেলা-ধুলা
  13. চট্টগ্রাম
  14. জাতীয়
  15. ঢাকা

আল্লামা দেলোয়ার হোসাইন সাঈদী (রহঃ) ১ম শাহাদাত বার্ষিকী

প্রতিবেদক
স্বাধীন কাগজ
আগস্ট ১৫, ২০২৪ ১২:১৯ পূর্বাহ্ণ   প্রিন্ট সংস্করণ

বিশ্ববরেণ্য আলেমে দ্বীন আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী  ১৪ আগস্ট বুধবার। ২০২৩ সালের এই দিনে রাত ৮টা ৪০ মিনিটে তিনি রাজধানীর বিএসএসএমইউ (সাবেক পিজি) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তিকাল করেন। ওই সময় আল্লামা সাঈদীর ছেলে মাসুদ সাঈদী ফেসবুক স্ট্যটাসে বলেন, “ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিঊন, কুরআনের পাখি ৮:৪০-এ দুনিয়ার সফর শেষ করেছেন।” এর আগে এক স্ট্যটাসে তিনি বলেন, “আল্লাহ রহম করার মালিক। আমরা আব্বার শারীরিক অবস্থার অবনতির খবর পাচ্ছি।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এবং প্রশাসন নিষ্ঠুর আচরণ করছে। তারা আমাদেরকে কোন তথ্যতো দিচ্ছেই না আমাদেরকে একরকম অসহায় করে রেখেছে। তারা কিছু একটা লুকাচ্ছে আমাদের কাছ থেকে। আমরা আব্বার আবারো হার্ট এ্যাটাকের খবর পাচ্ছি। আল্লাহ দয়া কর তুমি। আল্লামা সাঈদীকে ভিক্ষা দাও।” এর আগে ১৩ আগস্ট বিকেলে বুকের ব্যথায় অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে অ্যাম্বুলেন্সে করে কাশিমপুর কারাগার থেকে গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। পরে তাকে বিএসএসএমইউ-তে পাঠানো হয়।

কারা কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার পার্ট-১-এ বন্দী ছিলেন দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী। সেখানে থাকা অবস্থায় রোববার বিকেল পাঁচটার দিকে হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। এ সময় বুকে ব্যথা অনুভব করছিলেন জামায়াতের এ নেতা। এরপরই তাকে হাসপাতালে নেয়া হয়।

হাসপাতালে জনতার ভিড়, পুলিশী এ্যাকশন: বিশ্ববরেণ্য আলেমে দ্বীন আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যুর সংবাদে, তাকে একনজর দেখতে রাতভর হাসপাতাল প্রাঙ্গণে অবস্থান করে তার ভক্তরা। ভোরে পুলিশী এ্যাকশনে পুরো হাসপাতাল এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। এ সময় পুলিশ দফায় দফায় সাউন্ড গ্রেনেড, রাবার বুলেট, টিয়ারসেল নিক্ষেপ করে। রক্তাক্ত হয় সাঈদী ভক্তরা। একাধারে সাউন্ড গ্রেনেড, রাবার বুলেট, টিয়ারশেল নিক্ষেপ করতে থাকে। মুহুর্মুহু সাউ- গ্রেনেড, গুলী ও টিয়ারশেল নিক্ষেপের কারণে পুরো এলাকা বিকট শব্দে প্রকম্পিত হয়ে উঠে। এ সময় অর্ধশতাধিক মুুসল্লি আহত হয়। রক্তাক্ত হয় হাসপাতাল প্রাঙ্গণ। হাসপাতালে আগত রোগীদের আত্মীয়-স্বজন মসজিদের সাধারণ মুসল্লিগণও রেহাই পাননি। ঢাকায় নামাযে জানাযা করতে চাইলে প্রশাসন তা করতে দেয়নি।

১৫ আগস্ট ভোর ৫টা ৪০ মিনিটের দিকে লাশবাহী ফ্রিজিং গাড়িতে করে আল্লামা সাঈদীকে বের করে নিয়ে যাওয়া হয়। এ সময় আল্লামা সাঈদীর লাশবাহী এ্যাম্মুলেন্স ঘিরে পুলিশের কড়া নিরাপত্তা ছিল। পুলিশী পাহারায় একদফা ফ্রিজিং এ্যাম্বুলেন্স পরিবর্তন করে নিয়ে যায় পিরোজপুরের উদ্দেশে।

পিরোজপুরে দাফন: দুই দফা নামাযে জানাযা শেষে ছেলের কবরের পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী। নিজের গড়া প্রতিষ্ঠান আল্লামা সাঈদী ফাউন্ডেশনের বায়তুল হামদ জামে মসজিদের পাশে দাফন করা হয় তাকে। লাখো মানুষের অশ্রু, কান্নার রোলের মধ্য দিয়ে বিদায় জানানো এই কুরআনের খাদেম ১৪ বছর পরে নিজ হাতে গড়া প্রতিষ্ঠানেই ফিরলেন, তবে জীবিত নয়, লাশ হয়ে। গণপরিবহন বন্ধ থাকলেও প্রিয় মানুষকে দেখার জন্য পিরোজপুরের আল্লামা সাঈদী ফাউন্ডেশনে বাঁধভাঙ্গা জোয়ারের মতো ছুটে আসেন ইসলামপ্রিয় জনতা। পথে পথে শিকার হয়েছেন হয়রানির, তারপরও তাদের ছুটে আসা আটকাতে পারেনি কেউ।

আল্লামা সাঈদী ফাউন্ডেশনে অনুষ্ঠিত প্রথম নামাযে জানাযায় ইমামতি করেন জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমীর ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবুর রহমান। মরহুমের দ্বিতীয় পুত্র শামীম বিন সাঈদীর ইমামতিতে দ্বিতীয় জানাযা অনুষ্ঠিত হয় এবং দেশে বিদেশে গায়েবানা জানাযা অনুষ্ঠিত হয়। জানাযা শেষে তাকে নিজের প্রতিষ্ঠিত আল্লামা সাঈদী ফাউন্ডেশনের বায়তুল হামদ জামে মসজিদের পাশে দাফন করা হয়। এখানেই তার ছোট ভাই হুমায়ুন কবীর সাঈদী এবং তার জ্যেষ্ঠ পুত্র মাওলানা রাফিক বিন সাঈদীর কবর রয়েছে।

আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর নামাযে জানাযায় আলেম-ওলামা, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী, বিভিন্ন শ্রেণি-পেশাসহ লক্ষ লক্ষ সাধারণ মানুষ শরীক হন। বৈরি আবহাওয়া সত্ত্বেও তাকে একনজর দেখার জন্য হাজার হাজার মানুষের ঢল নামে। তারা অশ্রুসিক্ত নয়নে তাদের প্রিয় রাহবারকে বিদায় জানান। এ সময় এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়।

পথে পথে হয়রানি : আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী রাহিমাহুল্লাহ-এর পিরোজপুর সাঈদী ফাউন্ডেশনে জানাযা-দাফন করতে যাওয়া ও আসার পথে পথে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী কর্তৃক হামলা, ভাংচুর, মোবাইল ও টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় তাদের হামলায় অর্ধশত নেতাকর্মী ও সাঈদী ভক্ত আহত হয়েছেন। অর্ধ শতাধিক মোটর সাইকেল, প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস ভাংচুর করা হয়েছে।

১৪ বছর পরে নিজ হাতে গড়া প্রতিষ্ঠানে আল্লামা সাঈদী: অবশেষে তিনি শত প্রতীক্ষা শেষে ১৪ বছর পরে নিজ হাতে গড়া স্বপ্নের প্রতিষ্ঠান আল্লামা সাঈদী ফাউন্ডেশনে এসে পৌঁছালেন। তবে তিনি আগের মত নয়ন কাড়া ব্যক্তিত্বসম্পন্ন হাসিমুখে নয়, তিনি আসলেন লাখো জনতাকে চোখের জলে ভাসিয়ে লাশ হয়ে।

অপেক্ষার উত্তেজনায় মানুষ যখন ঘামছে ঠিক তখন বেলা দশটায় প্রাণপ্রিয় নেতার লাশবাহী গাড়ি এসে আল্লামা সাঈদী ফাউন্ডেশনের গেটে থামে। সকাল থেকে প্রশাসন ছিল তৎপর। হাজারো মানুষের ভিড় ঠেলে লাশবাহী গাড়ি সাঈদী ফাউন্ডেশনে ঢুকতে পারছিল না। প্রায় আধাঘন্টা প্রাণান্তকর প্রচেষ্টার পরে তাফহীমুল কুরআন আলিয়া মাদ্রাসার সিটির সামনে এসে প্রিয় নেতার লাশবাহী গাড়ি থামে। পিরোজপুরের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে আগেই বলা হয়েছিল লাশবাহী গাড়ি আসা মাত্র ১০ মিনিটের মধ্যে দাফন কাফনের কাজ শেষ করতে হবে।

লাশবাহী গাড়ি এসে পৌঁছালেও পথে নানান বিড়ম্বনার কারণে মাসুদ সাঈদী এসে পৌঁছাতে অনেক সময় নেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রশাসন দ্রুত জানাযা শেষ করার জন্য চাপ দিতে থাকে। অন্যদিকে জনতা আল্লামা সাঈদীর সন্তানদের উপস্থিতি ছাড়া জানাযায় রাজি হচ্ছিল না। নেতৃবৃন্দ কয়েকবার চেষ্টা করেও জানাযা শুরু করতে পারেননি। অবশেষে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নমনীয় হলে বেলা প্রায় সোয়া একটার সময় মাসুদ সাঈদী এসে পৌঁছালে মানুষের স্বস্তি ফিরে আসে। এ সময় মাসুদ সাঈদী অত্যন্ত আবেগময়ী বক্তব্যে উপস্থিত জনতাকে আবেগে আপ্লুত করে তোলেন। তিনি অভিযোগ করেন, তার বাবা কারাগারে অসুস্থ হয়ে পড়লে হাসপাতালে নেয়া হয় কিন্তু তাদেরকে কিছুই জানানো হয়নি।

বিভিন্ন মাধ্যমে তারা জানতে পেরে হাসপাতালে ছুটে গিয়ে শত চেষ্টা করলেও অসুস্থ পিতার মুখখানা একবারের জন্যও দেখতে দেয়া হয়নি। এ সময় তিনি পাগলের মতন হাসপাতালে বারান্দায় এদিক সেদিক ছুটে বেরিয়েছেন কিন্তু এতে প্রশাসনের কোন মতে  মন গলেনি। অবশেষে তিনি এশার নামাযে গেলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে তাকে ডেকে এনে জানানো হয়, তার পিতা আর বেঁচে নেই। তার বক্তব্যে উপস্থিত জনতা আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়ে।

প্রথম জানাযার নামাযের আগে নিকট মহিলা আত্মীয়দেরকে শেষবারের মতো প্রিয় স্বজনকে দেখার সুযোগ করে দেয়া হয়। এরপরেই প্রথম জামাত অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম জামাত শেষে সকল সাধারণ মানুষের প্রিয় স্বজনের মুখটি একটিবারের জন্য দেখার সুযোগ দেয়া হয়। কিন্তু প্রচ- জনতার ভিড়ে অনেকেই দেখতে পারেননি। অনেকেই আবার জনতার চাপে অসুস্থ হয়ে পড়েন।

যে মামলায় কারাগারে ছিলেন আল্লামা সাঈদী : ২০১৮ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে আমৃত্যু কারাদ-ের আদেশ দেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। এর আগে, ২০১০ সালের ২৯ জুন ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়ার অভিযোগে গ্রেফতার হন দেলাওয়ার হোসেন সাঈদী। পরে একই বছরের ২ আগস্ট মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়।

 

সংক্ষিপ্ত জীবনী : আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী ১৯৪০ সালের পহেলা ফেব্রুয়ারী সুবহে সাদিকের সময় পিরোজপুর জেলার, জিয়ানগর উপজেলার সাঈদখালী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার সম্মানিত পিতা মাওলানা ইউসুফ সাঈদী ইসলামী চিন্তাবিদ ও বক্তা ছিলেন। ‘সাঈদী’ তার পারিবারিক উপাধি। ১৯৫৭ সালে দাখিল পাশের সার্টিফিকেটে তার নাম ‘দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী’। সেখানে তার পিতার নামেও ‘সাঈদী’ রয়েছে। এছাড়া ১৯৬৪ সালে যশোরের একটি তাফসীর মাহফিলের লিফলেটে নাম রয়েছে ‘দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী’।

পিতা ইউসুফ সাঈদী যিনি একজন স্বনামধন্য ইসলামী প-িত বা আলেম ছিলেন। আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মায়ের নাম গুলনাহার বেগম। আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর চার ছেলে- মরহুম রফিক সাইদী, শামীম সাইদী, মাসুদ সাইদী এবং নাসিম সাইদী।

 

আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী পিতার প্রতিষ্ঠিত মাদ্রাসায় প্রাথমিক শিক্ষা জীবন সমাপ্ত করেন। পরে তিনি খুলনা আলিয়া মাদ্রাসায় কিছুদিন এবং পরে ১৯৬২ সালে ছারছিনা আলিয়া মাদ্রাসা থেকে কামিল পাস করেন। কামিল পাস করার পর বিভিন্ন ভাষা, ধর্ম, বিজ্ঞান, রাজনীতি, অর্থনীতি, পররাষ্ট্র নীতি, মনোবিজ্ঞান ও বিভিন্ন তত্তের উপর দীর্ঘ ৫ বছর অধ্যয়ন করেন।

১৯৭৯ সালে সাধারণ সমর্থক হিসেবে আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী বাংলাদেশ জামায়াত-ই-ইসলামী এ  যোগদান করেন। ১৯৮৯ সালে  বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর  মজলিসে শূরার সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন। সর্বশেষ তিনি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীরের দ্বায়িত্ব পালন করেন।

 

আল্লামা সাঈদী পবিত্র কুরআনের তাফসীর ‘তাফসীরে সাঈদী’ নামে ইতিমধ্যেই ৫ খন্ড রচনা করেছেন। তাফসীরের বাকি কাজ চলমান আছে। মহানবী হযরত মোহাম্মাদ (সা) এর জীবনীমূলক গ্রন্থ ‘সীরাতে সাইয়্যেদুল মুরসালিন’ ৫৮৪ পৃষ্ঠায় রচনা করেছেন। এ ছাড়াও তিনি ফিকহুল হাদিস, কুরআন এবং বিজ্ঞান, ইসলামে নারীর অধিকার, ইসলামে শ্রমিকের অধিকার, ইসলামের রাজনৈতিক দৃষ্টি ভঙ্গি, সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ দমনে ইসলামসহ নানা বিষয়ে এ পর্যন্ত তার ৭৭টি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। আমেরিকা ও লন্ডন থেকে তার ৪টি বই ইংরেজী ভাষায় প্রকাশিত হয়।

সর্বশেষ - সংবাদ

আপনার জন্য নির্বাচিত