বৃহস্পতিবার , ২৩ জানুয়ারি ২০২৫ | ৮ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
  1. অন্যান্য
  2. অপরাধ
  3. অর্থনীতি
  4. আইটি বিশ্ব
  5. আইন-বিচার
  6. আন্তর্জাতিক
  7. ইসলাম
  8. ঈদুল ফিতর
  9. ক্যাম্পাস
  10. ক্রিকেট
  11. খুলনা
  12. খেলা-ধুলা
  13. চট্টগ্রাম
  14. জাতীয়
  15. ঢাকা

সাম্যবাদী হজরত মুহাম্মদ (সা.) : অদ্বিতীয় দার্শনিক, মহাবিপ্লবী ও বার্তাবাহক

প্রতিবেদক
স্বাধীন কাগজ
জানুয়ারি ২৩, ২০২৫ ৮:০৩ অপরাহ্ণ   প্রিন্ট সংস্করণ

তিনি সাম্যবাদী : প্রবল রুক্ষ-মূর্খ মরুর বুকে তিনি বলেছিলেন, অনারবের ওপর আরবের কোনো শ্রেষ্ঠত্ব নেই, শ্রেষ্ঠত্বের মাপকাঠি খোদাভীতি, শ্রেষ্ঠত্বের মাপকাঠি সৎকাজ, শ্রেষ্ঠত্বের মানদণ্ড ন্যায় ও ইনসাফ। মহান স্রষ্টার নিকট সকলেই সমান এই বার্তা এনে তিনি সমাজে সাম্য প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন যেখানে অর্থ, ক্ষমতা ও বর্ণের ভিত্তিতে মানুষে মানুষে ভেদাভেদের অসাম্য উৎখাত করেন।

তিনি বলেছিলেন, তুমি যা খাও ও পরো সেটাই খাওয়াতে হবে তোমাদের অধীনস্ত ব্যক্তিদের। দাস প্রথাকে তিনি বিদায় হজে বিলুপ্ত ঘোষণা করেন। তিঁনি সত্যের সমার্থক। তিনি কৃষ্ণাঙ্গ কিংবা দাসদের নিয়ে অভিজাত সুবিধাভোগীদের শোষণকে চ্যালেঞ্জ করেন, তিনিইতো ঘোষণা করেছিলেন সমতা, সততা ও শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য।

 

তিঁনিইতো বলেছিলে বলিষ্ঠ কণ্ঠে যে, আমি আল্লাহর মনোনীত বার্তাবাহক হলেও আমি তোমাদের মতই একজন মানুষ। আমিও একজন বান্দা-ই। তিঁনি গরীবের রক্তচোষা সুদের বিরুদ্ধে কথা বলেন, তিনি সম্পদের সমবণ্টনের জন্য যাকাত নামের সর্বশ্রেষ্ঠ অর্থনৈতিক ব্যবস্থার প্রবর্তক।

তিনি মহাবিপ্লবী, অত্যাচারী, জালিম, শোষকের ভীত কাঁপিয়ে দিয়েছিলেন গুটিকয়েক সর্বহারা বঞ্চিত মানুষকে নিয়ে। রক্তাক্ত হয়েও ময়দান না ছেড়ে তিঁনি জালিমদের ছুড়ে ফেলেছিলেন ইতিহাসের ভাগাড়ে। তিঁনি অভিজাততন্ত্রকে উচ্ছেদ করে বিনির্মাণ করেছিলেন সাধারণ মানুষের অধিকার। তাঁর বিপ্লব শ্রমিকের বিপ্লব, তাঁর বিপ্লব দাস-দাসীর অধিকার আদায়ের বিপ্লব, তাঁর বিপ্লব ভোগবাদীদের কবল থেকে নারীর মুক্তির বিপ্লব, তাঁর বিপ্লব পুঁজিবাদী আত্মকেন্দ্রীকদের কব্জা থেকে গরীব-দুঃখীকে সম্পদের ন্যায্য হিস্যা বুঝিয়ে দেওয়ার বিপ্লব, তাঁর বিপ্লব মানুষ ও মানবতার বিজয়গাঁথা রচনার বিপ্লব। এ পৃথিবীর বুকে তিনি উজ্জ্বল মহাবিপ্লবী। তিনি জালিমের গদিতে মজলুমের বিজয় নিশান পুঁতে দেওয়া বিপ্লবের তাত্ত্বিক ও প্রায়োগিক মহানেতা।

 

তিনি নারীমুক্তির মহাপুরুষযিঁনি বলেছিলেন, যাঁর প্রথম সন্তান কন্যা সেই তো ভাগ্যবান। তিনি নিষিদ্ধ করেছিলেন মায়ের জাতিকে কবরে জীবীত পুতে ফেলা জাহেলি রীতি। তিনি বলেছিলেন, মায়ের মূল্য পিতার চেয়ে তিনগুণ বেশি। তিনি জানান, নারী ও পুরুষ একে অপরের ভূষণ। তিনি নারীর সত্যিকার বন্ধু। তিনি বলেছিলেন, মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেশত। তিনি নিজের পাগড়ি বিছিয়ে বসতে দিতেন দুধ-মাতাকে। তাঁর মাধ্যমে আল্লাহ বলেছেন যে, তোমরা পিতামাতার উপর বিরক্ত হয়ে ‘উঁহ’ শব্দটিও করো না।

তিনি সফলতম রাষ্ট্রনায়কসেই ১৪০০ বছর পূর্বেও যিনি সাম্যবাদী রাষ্ট্র গঠন করেছিলেন সর্বহারাদের নিয়ে। সেই রাষ্ট্রের ধর্ম-বর্ণ-গোত্র নির্বিশেষ নির্দ্বিধায় বাস করতো সুখে ও শান্তিতে। সেখানে কোনো বৈষম্য ছিল না, কোনো লাঞ্ছনা ছিল না, ছিল স্নিগ্ধ বণ্টণ প্রক্রিয়া, ছিল ভালোবাসা। তাই হিজরত করলে মদিনার খ্রিস্টান, মূর্তিপূজারি, ইহুদীরা এক হয়ে মরুভূমিতে দাঁড়িয়ে বা খেজুরবৃক্ষে উঠে নেচে-গেয়ে-বাজিয়ে তাঁর আগমনে হর্ষধ্বনি দিয়ে সমবেত কণ্ঠে গেয়েছিল: তালাআল বাদরু আলাইনা…।

তাঁর প্রদত্ত মদিনা সনদ আধুনিক সেকুলার রাষ্ট্রকাঠামোর বহুযুগ আগেই ইনক্লুসিভ রাষ্ট্র গঠনের মডেল উপস্থাপন করেছে। হুদায়বিয়ার সন্ধির মাধ্যমে তিঁনি আন্তর্জাতিক রাজনীতির অবশ্যপালনীয় চুক্তিনীতির গুরুত্ব তুলে ধরেন। তিনি তাঁর সাহাবিদের (রা.) মাধ্যমে বিশ্বের সেই সময়ের মহাশক্তিধর পারস্য ও বাইজেন্টাইন রোমান সাম্রাজ্যের সম্রাটদের নিকট সত্যবাণী পৌঁছে দেন। এ সত্ত্বেও জাহেলি সমাজের সামাজিক হায়ারার্কিতে সেই সমাজের সবচেয়ে তলার মানুষকেও তিনি ঐ সম্রাটের সমমূল্যে বিচার করতেন।

তিনি সর্বশ্রেষ্ঠ মানবতাবাদীজিব্রাইল ফেরেশতার মাধ্যমে আসা মহান আল্লাহর বাণীকে ডিকোড করে যিঁনি প্রচার করেছিলেন, যে ব্যক্তি বিনা কারণে কোনো মানুষ হত্যা করল, সে যেন সমগ্র মানবজাতিকে হত্যা করল, আর যে একজন মানুষের জীবন বাঁচালো সে যেন সমগ্র মানবকুল বাঁচালো। এর চেয়ে উত্তম মানবতাবাদী আহ্বান যুগে যুগে আর আসেনি, আসবেওনা। তাঁর মাধ্যমেই আমরা জানতে পারি, মিথ্যা সকল পাপের জননী, কথা দিয়ে কথা রাখা জরুরি এবং অন্যের আমানতের খেয়ানত করা গর্হিত অপরাধ। তিঁনি আমাদের জানান, কোনো ব্যক্তির হক্ব নষ্ট করলে সেই ব্যক্তি ক্ষমা না করলে আল্লাহ করেন না। তিঁনি বলেন, হাশরের ময়দানে ক্ষুধার্তকে খাওয়ানো, রোগীকে সেবা করা, পোশাকহীনকে পোশাক দেওয়াকে আল্লাহর সেবা করা হিসেবে গ্রহণ করা হবে। এভাবে তিনি মানবতাকে সবার উপরে স্থান দেওয়ার মৌলিক নীতিকে ধর্ম হিসেবে প্রচার করেন। তিঁনি তো সেই ব্যক্তি যিনি মজলুমের অধিকার আদায়ের জন্য তাঁর জীবনব্যাপী কেবল আহত, রক্তাক্ত হয়েছেন। সাধারণ মানুষের কল্যাণের জন্যই তিনি মাতৃভূমি ছেড়েছেন। তিনি তো সেই ব্যক্তি যাঁর মাধ্যমে খোদা মানুষকে জানিয়ে দিয়েছিলেন যে, যারা বিশ্বাস করে না তাদের ভুল বিশ্বাস নিয়ে তোমরা গালি দিও না, কারণ অজ্ঞতাবশত তারাও তবে আল্লাহকে গালি দেবে। বৈচিত্র্যময় পৃথিবীর সহস্র বয়ান-প্রতিবয়ানের মধ্যে পরমতসহিষ্ণু এ নীতি আজো বিশ্বে সবচেয়ে উত্তম নীতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত।

তিনি প্রাণি প্রকৃতিপ্রেমী: যিনি বলেছিলেন, যদি জানো কাল কেয়ামত তবে আজ একটি বৃক্ষ রোপণ করে যেও। যিনি গাছের ডাল বা পাতা ছিঁড়তেও নিষেধ করেছেন অকারণে, যিনি পিঁপড়ার ব্যথার কথা ভেবেছেন, যিনি মৌমাছির গুরুত্ব ব্যাখ্যা করেছেন। মহান প্রভু যাঁর মাধ্যমে জলপাই ও ডুমুর তথা কৃষির উন্নয়নের কথা বলেছেন। যিনি রাত জেগে কেঁদেছেন প্রতিটি প্রাণের মুক্তির জন্য। তাই কবি গোলাম মোস্তফা তাঁকে নিয়ে লেখেন:

তুমি যে নূরের নবী/ নিখিলের ধ্যানের ছবি/ তুমি না এলে দুনিয়ায়/ আঁধারে ডুবিত সবি।

তিনি সর্বশেষ সর্বশ্রেষ্ঠ বার্তাবাহক: যাঁর কথা বিশ্বের সবকটি ধর্মগ্রন্থে ভবিষ্যদ্বানী করা হয়েছে, যিনি আসবেন মানবজাতির শান্তি ও মুক্তির বাণী নিয়ে, যাঁর জন্য প্রতিটি পয়গম্বর তার স্বজাতিকে অপেক্ষা করতে বলেছিলেন, তিনিই তো বলেছিলেন, আমি তোমাদের মুক্তির জন্য হাশরের মাঠে দাঁড়াবো। তিনি না সৃষ্টি হলো কিছুই হতো না সৃষ্টি। তিনি আল্লাহর সবচেয়ে প্রিয় বান্দা। তিনি পূর্বের সমস্ত পয়গম্বরের ওপর বিশ্বাস রাখাকে তাঁর প্রচারিত দ্বীনের অবিচ্ছেদ্য বিশ্বাসে পরিণত করেন। সমস্ত্র বিশ্বে রহমত স্বরূপ প্রেরিত সেই কালজয়ীর ধরায় আসা নিয়ে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম ‘মরুভাস্কর’ কাব্যে লেখেন: বয়ে যা ঢল ধরে না কো জল/আজি জমজম কূপে/ ‘সাহারা’ আজিকে উথলিয়া ওঠে/ অতীত সাগর রূপে/ পুরাতন রবী উঠিল না আর/ সেদিন লজ্জা পেয়ে/ নবীন রবীর আলোকে সেদিন/ বিশ্ব উঠিল ছেয়ে।

তিনি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ দার্শনিকযাঁর দর্শনে মানুষে মানুষে কোন ভেদাভেদ নেই, যাঁর দর্শনে এক থালায় ভাত খেতে হয় অভিজাত ও দরিদ্রকে, যাঁর দর্শন বাধ্য করে ক্ষমতাবানকে এক কাতারে ক্ষমতাহীনের পাশে এসে সিজদা দিয়ে নিজের অসহায়ত্ব ঘোষণা করতে, যাঁর দর্শনে মানুষের সেবা করাকে বলা হয়েছে খোদার সেবা করা। তিনি বাহাস তথা ডিস্কোর্স, মান্তেক তথা যুক্তিবিদ্যা, ইতিহাস ও বিজ্ঞানের মৌলিক প্রশ্নের দার্শনিক উত্তর দিয়েছেন। তাঁর দর্শন ধারা প্রভাবিক অনুসারীদের মেটাফিজিক্স আধুনিক পৃথিবীর জ্ঞানের ভিত্তি স্থাপন করেছে। আজকের দুনিয়ার জ্ঞান-বিজ্ঞানের অগ্রপথিক পশ্চিমা সভ্যতার রেঁনেসার ভিত্তিভূমি মুসলিম দর্শন ও দার্শনিকদের জ্ঞানের আলোক। তাঁর দর্শন ক্ষুদ্র পিঁপড়া, মৌমাছি, পশু-পাখি, বৃক্ষ, মানব সবার ভালো-মন্দ ভেবে দুনিয়া ও পরকালেল মধ্যে ভারসাম্য এনে সবাইকে নিয়ে শান্তির দুনিয়া বিনির্মাণের উম্মাহ ধারণা বাস্তবায়ন করে। আর সে কারণেই তাঁকে সমগ্র মানবজাতির কল্যাণ হিসেবে প্রেরণ করেছিলেন বিশ্বপ্রতিপালক।

তিঁনি কে?

তিঁনি বিশ্বনবী-তিনি মরুময় আরব থেকে উঠে সমগ্র বিশ্বকে আলোড়িত করেছেন স্বীয় দ্যূতিতে। তিঁনি বঞ্চিত, অত্যাচারিত, অসহায়, বিশ্বাসহীনের আত্মিক, দৈহিক, জাগতিক ও পারলৌকিক মুক্তিদূত হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। তিনি আরব্য দম্পতি আব্দুল্লাহ ও আমিনার পুত্র হয়েও পুরো জগতের মানুষের জন্য এসেছিলেন, ভেবেছেন—৫৭০ খ্রিষ্টাব্দে। তিনি সকল মানুষের মুক্তির জন্য কেঁদেছেন। এ কারণেই তাঁর প্রতি ভালবাসায় সিক্ত কোটি কোটি মানুষ।

এখনো মৃত্যুর প্রায় ১৫০০ বছর পরেও পৃথিবীর সবচেয়ে সম্মানিত মানুষ তিঁনি। তাঁর জন্ম ও ওফাত দিবসে তাঁর প্রতি ভালবাসা ও শ্রদ্ধার দরুদ পাঠ করছেন লক্ষ লক্ষ মানুষ। আসমান, জমিন, বৃক্ষ-প্রাণ ও মানবহৃদয় একত্রে গাইছে তাঁর আগমন ও প্রস্থানের মোহনীয়তা স্মরণ করে: ইয়া নবী, সালামু আলাইক ইয়া রাসূল, সালামু আলাইকা… ইয়া হাবিব, সালামু আলাইকা…।

মুহাম্মদ (সা.)-এর প্রতি দরদ ও ভালোবাসা থেকে বিশ্বের অধিকাংশ দেশে এ দিনটি পালন করা হয়। রাসূল (সা.)-এর জীবনের শিক্ষা, দীক্ষা, ত্যাগ ও বিপ্লবী আদর্শ পুনর্পাঠ করা হয়। তাঁর আগমনকে ভক্তি ও শ্রদ্ধার সঙ্গে সম্মরণ করে মিলাদ ও কিয়াম করা হয় । কবিতা পাঠ করা হয়, রচনা প্রতিযোগিতা আয়োজন করা হয়, হামদ ও নাথ গাওয়া হয় এবং সবাই মিলে দরুদ পাঠ করা হয় নবীর (সা.) নামে। পাশাপাশি দুস্থ ও দরিদ্রদের খাওয়ানো হয়। এ দিনটি আল্লাহর হাবিব (সা.)-এর প্রতি ভালোবাসা প্রকাশের বৈশ্বিক সম্মিলন বলা যায়।

এত রাসূল প্রেম কিন্তু কট্টরপন্থি অনেকে পছন্দ করেন না। এর সাইকো-এনালাইসিস করলে দেখতে পাওয়া যায়, মুহাম্মদ (সা.) এর প্রতি অগাধ ভালোবাসা তাঁর পরিবার তথা আহলে বায়াতের প্রতি ভালোবাসার ডিস্কোর্স সামনে নিয়ে আসে। ‘আমি যার মওলা আলীও তার মওলা’ রাসূলের (সা.) এই নির্দেশনা সামনে আসে। রাসূলকে (সা.) ভালোবাসলে আহলে বায়াতের প্রতি ভালোবাসার আলাপ চলে আসে এবং সিফফিন ও উটের যুদ্ধে আহলে বায়াতের প্রতিনিধি হজরত আলীর (রা.) বৈধ খিলাফতের বিরুদ্ধে অন্যায়ভাবে বিদ্রোহ করাদের নিয়ে আলাপ সামনে আসে। এই আলাপ ধীরে হাসানের (রা.) খেলাফতের হক্ব এবং সেখান থেকে হোসাইনের (রা.) ওপর নরপিচাশ এজিদ বাহিনী কর্তৃক কারবালার মহাজুলুমের কথা সামনে চলে আসে। তাই রাসূল (সা.) এবং তাঁর পরিবারের গুণকীর্তন এজিদি দরবারি জাহেলরা চায়না।

রাসূল (সা.) এবং তাঁর পরিবারের মজলুমদের ভালোবেসে স্মরণ করলে ওহাবী-খারেজি কট্টরপন্থি মতাদর্শে বিশ্বাসীরা যে বিদায়াতের ভিত্তিহীন ফতোয়া নিয়ে আসে ফেসবুকে-ইউটিউবে সেটিই বিদায়াত। তারা যে কালেকশন করে এটাই বিদায়াত। তারা যে আলবানী বা ইবনে ওহাব-আল সৌদকে তাক্বলিদ বা অন্ধ-বিশ্বাস করে এটিই বিদায়াত। তারা ইরাকে-সিরিয়ায়-ইয়েমেনে কেবল মতের পার্থক্য থাকায় শিয়াদের আত্মঘাতী হামলা করে হত্যা করে সেটিই বিদায়াত। তারা যে রাজতন্ত্রের ঢোল বাজায় সেটিই বিদায়াত, তারা যে দাওয়াত করে, ওয়াজ করে আর ইমামতি করে অর্থ নেয় সেটিই বিদায়াত। এমন শত শত বিদায়াত নিয়ে তাদের ঐক্যবদ্ধ অবস্থান নাই। শহর-গ্রাম-পাড়া-মহল্লায় হারাম আয় দান-খয়রাত হিসেবে দিলে সেটি যে ইসলামে গ্রহণ করার নিয়ম নাই সেই কথা তারা স্পষ্ট কণ্ঠে বলেনা। দুর্নীতি, ঘুস, সুদসহ মানুষের হক নষ্ট ও অধিকার নষ্ট করা নিয়ে তারা মুখে কুলুম আটে। শুধু রাসূল (সা.) কে ভালোবেসে কেউ ‘ইয়া নবী সালামু আলাইকা’ এবং অন্যান্য দরুদ পাঠ করলেই তাদের আপত্তি জোরালো হয়ে আসে। তখনই তাদের কট্টরপন্থি রূপটি সামনে বের হয়ে আসে!

আল্লাহর নবী ও রাসূল হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর জন্মোৎসব করায় আমি সমস্যা দেখি না। নূরনবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) কেবল মুসলমান নয়, এই মহাবিশ্বের সবার জন্য আল্লাহর নিকট থেকে রহমত হিসেবে দুনিয়ায় এসেছেন বলে পবিত্র কোরানে ঘোষণা করেছেন। তিনি মানুষের মুক্তির দূত। তিনি একটি প্রাণী থেকে গাছের পাতার হক্ব সম্পর্কে বলে গেছেন। নারীকে, এতিমকে, দাস-দাসীকে, ক্ষমতাহীনকে ভালোবেসে স্থান দিয়েছেন, মর্যাদা দিয়েছেন। এমন রহমত নিয়ে আলোচনা হবে না? তাঁর আগমনী দিনটি উৎসব হবে না? নিশ্চয়ই হবে। আপনি আল্লাহর রাসূলের আগমনীতে আনন্দিত নন, কিংবা নীরব থাকেন-কে নিষেধ করেছে?

আরেকজন উৎসব করে তার আনন্দকে উদযাপন করছেন কারো ক্ষতি না করে। মানুষকে খাওয়াচ্ছেন, কোরান তেলাওয়াত করছেন, সালাম ও দরুদ পাঠ করছেন। এতে আপনার সমস্যা কী? আপনি তাকে বিদায়াত বলে খারিজ করছেন। কিন্তু সে যদি আপনাকে রাসূলদ্বেষী এজিদের তল্পিবাহক বলে? সে যদি বলে আপনি আল্লাহর নির্দেশের ‘রাসূলের প্রতি সালাম ও দরুদের বিরোধী’ তখন?

কেবল চিল্লিয়ে ‘ঠিক বা বেঠিক’ এর বাইরেও একাধিক মত ও পথ থাকতে পারে। আপনার ও তার মেটাফিজিক্যাল ডেস্টিনেশন এক। আপনি কেবল নিজের পথকে শুদ্ধ ভাবছেন অথচ আপনার চেয়ে ‘সরল পথে’ অনেকেই একই গন্তব্যে যাচ্ছে এই বোধও আপনার নাই! সিরাতুল মুস্তাকিম নিয়ে প্যাঁচাপ্যাঁচি ভালো নয়। এ তে কল্যাণ নেই। তাই অদ্বিতীয় রাসূলের-আল্লাহর সর্বশেষ রাসূলের আগমনী দিনে জগতের সমস্ত প্রাণের শান্তি কামনা করি।

রাসূল (সা.) এ দুনিয়ার জন্য আশির্বাদ। তাঁর জীবন ও কর্মের আলাপ জরুরি। তিনি কেন, কাদের বিরুদ্ধে বিপ্লবের ডাক দিয়েছেন, কেন জালিমেরা তাঁর আদর্শ ভয় পায় আর কেন মজলুম তাঁর আদর্শে স্বস্তি পায় সেই আলোচনা জারি রাখতে হবে। তাঁর বিরুদ্ধে যে কেবল অমুসলিমরা লেগে আছে তা নয়, তাঁর কথা ও বার্তাকে পবিত্র কোরানের আলোকে বাস্তবায়ন না করে ভুলপথে গিয়ে কিছু কট্টরপন্থিও ইসলাম ও রাসূল (সা.)-এর প্রতি জুলুম করছে (কিছু লোক আছে রাসূলের প্রেমের নামে অতিরিক্ত করে। তারা আর খারেজিরা উভয়েই রাসূল (সা.)-এর ওপর জুলুম করছেন।)। এই সুযোগে অসাম্য, অসত্য, অসততা, অবিচারের ধারক-বাহকরা মুহাম্মদ (সা.) এবং তাঁর প্রচারিত একত্ববাদী ধর্মের সমালোচনা করছে মিডিয়া বা একাডেমিয়ায়। তাদের উপযুক্ত জবাব দিতে রাসূল (সা.)-এর জীবনের পূর্ণাঙ্গ চর্চা হওয়া জরুরি। সেই অনুশীলনের পথে ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) পালন হতে পারে মোক্ষম জবাব।

এ কারণে ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) রাষ্ট্রীয়ভাবে পালন করা কেবল মুহাম্মদ (সা.)-এর প্রতি দরদ প্রকাশ নয়, বরং আল্লাহর প্রেরিত মহাবার্তাবাহকের প্রচারিক শিক্ষা-দীক্ষাকে পুনর্পাঠ করা, পুনরালাপ করা এবং সমসাময়িক প্রশ্নের জবাব রাসূল (সা.)-এর দেখানো পথে কোরানের আলোকে দেওয়াও। সমাজ থেকে কট্টরপন্থিদের শিকড়কে নড়বড়ে করে দেওয়ার জন্য মিলাদ-ক্বিয়াম ও রাসূল (সা.)-এর জীবনচর্চা করা প্রয়োজন। ঐক্যবদ্ধ কণ্টে সুরে সুরে ‘ইয়া নবী সালামু আলাইকা’ গাইলে সমাজে উগ্রপন্থা দাঁড়াতে পারবেনা। আমাদের গ্রাম থেকে ফতোয়া দিয়ে মিলাদ-ক্বিয়াম কারা উঠিয়ে দিলো সেটি নিয়ে গবেষণা দরকার নয়? কারা মসজিদে মসজিদে হঠাৎ করে শত বছর ধরে চলা রাসূল (সা.)-এর শানে দরুদ পাঠ, মিলাদ-ক্বিয়ামকে বন্ধ করে দিলে সেই প্রশ্ন করতে হবে। সমাজে চুরি-বাটপারি-দুর্নীতি-সুদ-ঘুষ সব ঠিকঠাক, তা নিয়ে তাদের আন্দোলন নাই, হারাম আয়কে দান-খয়রাত হিসেবে গ্রহণে ক্ষতি নাই কিন্তু কী ক্ষতি তাদের করেছিল রাসূলের প্রতি সামাজিক ভালোবাসা প্রকাশের মিলাদ-ক্বিয়াম? সেই প্রশ্নটির উত্তর জানা জরুরি।

আল্লাহ তাঁর সান্নিধ্য পেতে রাসূল (সা.) হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর মাধ্যমে আসতে বলেছেন। রাসূল (সা.) বলেছিলেন, আল্লাহর প্রেরিত রাসূল হিসেবে আমাকে সব কিছুর চেয়ে বেশি ভালোবাসার মধ্যে বিশ্বাসের মৌল অনুসঙ্গ জড়িত। সেই রাসূল (সা.)-এর আগমনী দিনে আনন্দচিত্তে আমরা দরুদ পাঠ করবো, দরিদ্রকে খাওয়াবো, সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজে নিষেধ করবো। আর হৃদয়ের গভীর থেকে বলবো: আসসালামু আলাইকুম, ইয়া রাসূল আল্লাহ।

 

সর্বশেষ - সংবাদ

আপনার জন্য নির্বাচিত