আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে পুড়ে যাওয়া ফাঁড়িটি পুনঃস্থাপনে দ্রুত পদক্ষেপ চায় এলাকাবাসী; দীর্ঘ প্রায় ২ যুগেরও বেশি সময় ধরে সেবাপ্রদানকারী স্থাপনাটি বন্ধ থাকায় বাড়ছে অপরাধ প্রবণতা।
৫ই আগস্ট ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানের অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতিতে পুড়ে ছাই হয়ে যাওয়া ডেমরা থানার অধীনস্থ কোনাপাড়া পুলিশ ফাঁড়িটি দীর্ঘ সময় ধরে অকার্যকর অবস্থায় পড়ে আছে। ২০০২ সাল থেকে জননিরাপত্তা নিশ্চিত করে আসা এই গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কোনাপাড়া ও এর আশপাশের এলাকায় আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে, যা স্থানীয় বাসিন্দাদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রাকে ব্যাহত করছে।
ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট ও গুরুত্ব: জানা যায়, ২০০২ সালে স্থানীয় জনসাধারণের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ এবং অপরাধ দমনে কার্যকর ভূমিকা পালনের লক্ষ্যে ডেমরা থানার আওতায় কোনাপাড়া পুলিশ ফাঁড়ি স্থাপন করা হয়েছিল। প্রতিষ্ঠার পর থেকে দীর্ঘ ২৩ বছর ধরে ফাঁড়িটি এই জনবহুল এলাকার মানুষের আস্থার প্রতীক হিসেবে কাজ করে আসছিল। ছিনতাই, মাদক কারবার, ছোটখাটো বিরোধ মীমাংসাসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড দমনে এর ভূমিকা ছিল অনবদ্য। রাত-বিরাতে স্থানীয়দের যেকোনো প্রয়োজনে এই ফাঁড়ির পুলিশ সদস্যরা তাৎক্ষণিক সাড়া দিতেন।
৫ আগস্টের বিপর্যয়: গত ৫ই আগস্ট, ২০২৪ তারিখে দেশব্যাপী চলমান গণঅভ্যুত্থানের উত্তাল পরিস্থিতিতে বিক্ষুব্ধ জনতার হাতে কোনাপাড়া পুলিশ ফাঁড়িটি অগ্নিসংযোগের শিকার হয়। আগুনে ফাঁড়ির সম্পূর্ণ কাঠামো পুড়ে ছাই হয়ে যায় এবং এর কার্যক্রম সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হয়ে পড়ে। সেদিনের ঘটনার পর থেকে ফাঁড়িটি আর পুনরায় চালু হয়নি।
জন-জীবনে প্রভাব: ফাঁড়িটি বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর থেকে কোনাপাড়া এবং এর সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দারা একরকম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। স্থানীয়দের অভিযোগ, ফাঁড়ি বন্ধ থাকার সুযোগে এলাকায় মাদক কারবার ও ছিনতাইয়ের মতো অপরাধ কর্মকাণ্ড বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়া, ছোটখাটো পারিবারিক বিরোধ বা সামাজিক অস্থিরতা নিরসনে পুলিশের তাৎক্ষণিক সহায়তা পেতেও ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
কোনাপাড়ার বাসিন্দা রহমান মিয়া জানান, “আগে যেকোনো সমস্যায় পুলিশকে ডাকলেই চলে আসতো। এখন ফাঁড়িটা নাই, ডেমরা থানা থেকে পুলিশ আসতে অনেক সময় লাগে। ততক্ষণে অপরাধীরা পালিয়ে যায়।” আরেক ব্যবসায়ী আসলাম শেখ বলেন, “আমার দোকানে দু’বার চুরির চেষ্টা হয়েছে। পুলিশের উপস্থিতি কম থাকায় অপরাধীরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।”
প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা ও জনগণের প্রত্যাশা: ঘটনার প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও কোনাপাড়া পুলিশ ফাঁড়ি পুনরায় চালুর বিষয়ে দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ না থাকায় স্থানীয়দের মধ্যে হতাশা বাড়ছে। যদিও দেশব্যাপী বিভিন্ন ক্ষতিগ্রস্ত সরকারি স্থাপনা পুনর্গঠনের প্রক্রিয়া চলছে, কোনাপাড়া ফাঁড়িটি এখনও অবহেলিত।
এলাকাবাসী মনে করেন, কোনাপাড়ার মতো ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় একটি পুলিশ ফাঁড়ির গুরুত্ব অপরিসীম। দ্রুততম সময়ে ফাঁড়িটি পুনঃস্থাপন করা না হলে এলাকার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি আরও অবনতির দিকে যেতে পারে। তারা প্রশাসন ও সরকারের উচ্চমহলের সুদৃষ্টি কামনা করছেন, যাতে দ্রুত এই ফাঁড়িটি নতুন আঙ্গিকে চালু করে জননিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাও ফাঁড়িটি দ্রুত চালুর দাবি জানিয়েছেন। তাদের মতে, শুধু নিরাপত্তা নিশ্চিত নয়, এলাকার সার্বিক সামাজিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতেও এই ফাঁড়ির পুনঃস্থাপন জরুরি।
ভবিষ্যৎ ভাবনা: কোনাপাড়া পুলিশ ফাঁড়িটি শুধু একটি ভবন নয়, এটি স্থানীয় মানুষের নিরাপত্তা ও আস্থার প্রতীক। গণঅভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপটে ক্ষতিগ্রস্ত অন্যান্য স্থাপনার মতোই এর পুনর্গঠনও সমান গুরুত্বের দাবি রাখে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দ্রুত এ বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নেবে এবং কোনাপাড়ায় আবারও জননিরাপত্তার সুবাতাস বইবে – এমনটাই প্রত্যাশা করছেন এলাকার সাধারণ মানুষ।