মালিক, শ্রমিক ও সরকারের প্রতিনিধিদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠকের পরও পোশাক শিল্পাঞ্চলে শ্রমিক অস্থিরতা থামছে না। গতকাল মঙ্গলবার মালিকপক্ষ সাভার, আশুলিয়া ও গাজীপুর শিল্পাঞ্চলের প্রায় ৪৩টি কারখানা বন্ধ ঘোষণা করেছে। এর মধ্যে ২৫টি কারখানা গাজীপুরে। তৈরি পোশাক শিল্পের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ ও শিল্প পুলিশ সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
বিজিএমইএর তথ্য মতে, গতকাল দুপুরের পর মোট ৪২টি কারখানা বেতনসহ ছুটি ঘোষণা করেছে। ২১টি কারখানায় শ্রমিকরা হাজিরা দিয়ে বের হয়ে যান। ১১টি কারখানায় শ্রমিকরা ভেতরে থেকেও কাজ করেননি।
জানতে চাইলে অনন্ত গার্মেন্টসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এনামুল হক খান বাবলু কালের কণ্ঠকে বলেন, ১০ দিন ধরে তাঁদের কারখানা বন্ধ।
শ্রমিকদের একের পর এক দাবি মেনে নেওয়ার পরও কারখানা সচল রাখা য়ায়নি। এ জন্য গতকাল চূড়ান্তভাবে শ্রম আইনের ১৩/১ ধারায় নোটিশ করেছে তাঁর কারখানা। এতে শ্রমিক কাজ না করলে তাঁরা মজুরিও পাবেন না।
তিনি জানান, তাঁর প্রতিষ্ঠানটি ক্রেতাদের কাজ হারানোর আশঙ্কায় ভুগছে।
এর মধ্যে বৈশ্বিক ক্রেতারা কার্যাদেশ বাতিলের কথাও জানিয়েছে। এতে তাঁদের প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রায় পাঁচ হাজার শ্রমিক কর্মহীন হয়ে পড়ছেন।
আক্ষেপ করে তিনি বলেন, উদ্ভট দাবির মুখে তাঁদের কারখানা বন্ধ করতে হলো। শ্রমিকদের অনেক দাবিদাওয়া বিশেষ করে, টিফিন ও হাজিরা বোনাসের দাবি মানা হয়েছে। এখন নতুন দাবি, কারখানার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের পদত্যাগ করতে হবে।
এ সময় কোনো কোনো কর্মকর্তাকে শ্রমিকদের হাতে নাজেহালও হতে হয়েছে বলে তিনি জানান।
বিজিএমইএর পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল কালের কণ্ঠকে বলেন, দফায় দফায় শ্রমিক-মালিক ও যৌথ বাহিনীর সঙ্গে বৈঠকের পরও সমস্যার সমাধান হচ্ছে না। প্রতিদিনই কারখানায় অস্থিরতা বাড়ছে। আগে রাস্তায় আন্দোলন করলেও এখন কারখানার ভেতর বিশৃঙ্খলা তৈরি করছে।
তিনি বলেন, সামনের দিনগুলোতে কারখানাগুলো কিভাবে চলবে, এ নিয়ে গত রাতে বৈঠকে বসেছেন। বিজিএমইএ পরিচালনা পর্ষদের বৈঠক শেষে তাঁরা করণীয় ঠিক করবেন।
গাজীপুরে ২৫ কারখানায় ছুটি ঘোষণা
কালের কণ্ঠের নিজস্ব প্রতিবেদক, গাজীপুর ও আঞ্চলিক প্রতিনিধি জানান, গাজীপুরের টঙ্গী, সদর ও শ্রীপুর উপজেলায় বিভিন্ন দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন বিভিন্ন কারখানার শ্রমিকরা। এ সময় কারখানায় ভাঙচুর, মহাসড়ক অবরোধ করে বিভিন্ন দাবি জানানো হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ২৫টি কারখানায় ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।
গাজীপুর শিল্পাঞ্চল পুলিশ-২-এর পুলিশ সুপার সারোয়ার আলম ২৫টি কারখানায় ছুটি ঘোষণার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
গতকাল সকাল থেকে জেলার বিভিন্ন জায়গায় শ্রমিকদের আন্দোলন শুরু হয়। দুপুরের পর থেকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করে। এর আগে সকাল ৯টা থেকে টঙ্গীতে ১৩ দফা দাবি জানিয়ে বিক্ষোভ করেন এমট্রানেট গ্রুপ লিমিটেড নামের কারখানার শ্রমিকরা। এ সময় তাঁদের সঙ্গে আন্দোলনে অংশ নেন পিনাকি গ্রুপ, ড্রেস ম্যান ও নোমান গ্রুপের শ্রমিকরা। পরে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কয়েক হাজার শ্রমিকও অংশ নেন। দুপুর আড়াইটার দিকে কারখানা কর্তৃপক্ষ, পুলিশ আন্দোলনকারী শ্রমিকদের সঙ্গে বৈঠক করে তাঁদের দাবি মেনে নেয়।