পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজি) বাহারুল আলম বলেছেন, অপরাধী পুলিশ সদস্যদের বিচারের আওতায় এনে ও তাদের সরিয়ে দিয়ে পুলিশ বাহিনীকে সগৌরবে ফেরানো হবে। এছাড়া মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, এখন পুলিশের প্রতি কাজের পরিবেশ দিন, বর্তমানে আইন প্রয়োগ করতে গিয়ে বিভিন্ন বাধা ও আক্রমণের শিকার হচ্ছে পুলিশ। তাই পুলিশকে কাজের পরিবেশ সৃষ্টির জন্য অনুরোধ করে তিনি বলেন, এত বেশি আবেগতাড়িত না হয়ে পুলিশকে কাজের পরিবেশ তৈরি করে দিবেন, তা না হলে পুলিশ কাজ করবে কী করে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে রংপুর বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ের হলরুমে দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে মানবাধিকার ও পরিবেশের ওপর গুরুত্বসহ আইন প্রয়োগ বিষয়ক কর্মশালা শেষে সাংবাদিকদের আইজিপি বাহারুল আলম এসব কথা বলেন।
এ সময় তিনি আরও বলেন, মব সৃষ্টি করে যারা নানা অপকর্ম করছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। একইসঙ্গে সবগুলো থানাকে একটিভ করতে দেওয়া হচ্ছে বিশেষ গুরুত্ব। ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে যারা অপরাধী (পুলিশ) তাদের বিচারের আওতায় এনে ও সরিয়ে দিয়ে পুলিশকে আবার সগৌরবে ফিরে আনা, কর্মক্ষম করে তোলা ও পুলিশকে আবার মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য করে তুলতে আমরা চেষ্টা করছি। দেশে বিভিন্ন জায়গায় দেখা গেছে, পুলিশ আইন প্রয়োগ করতে গিয়ে মানুষের আক্রমণের শিকার হচ্ছে। এটা আবেগের বিষয়। হয়তো তাদের অতীত স্মৃতি মনে করে দেয়, যখন পুলিশ অন্যায়ভাবে মানুষের ওপর আক্রমণ করেছে। অন্যায় আচরণ করেছে এবং গণবিরোধী আচরণ করেছে। নাগরিক সমাজের প্রতি আমার অনুরোধ পুলিশকে আপনারা কাছে টেনে নিন এবং তাদের কাজ করতে সহায়তা করুন।
তিনি আরও বলেন, জুলাই আন্দোলনে যেসব অন্যায় সংঘটিত হয়েছে সেগুলো সঠিক তদন্ত করে বিচারের মাধ্যমে যদি নিষ্পত্তি না করা হয় এবং মানুষ যদি ন্যায্য বিচার না পায় তাহলে জাতি আমাদের ক্ষমা করবে না। এ প্রচেষ্টা যেন সুসম্পন্ন হয় এজন্য এখানে যারা বিচারক, সরকারি কৌঁসুলি, পুলিশ সুপার, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও থানার ওসি আছেন, আপনাদের সবার সম্মিলিত প্রচেষ্ট দরকার।
তিনি এ সময় বিচারকদের উদ্দেশে বলেন, যারা বিচারক, ঈশ্বরের পরে মানুষ তাদেরকে স্থান দেয়। তাদের বিবেকের ওপরেই নির্ভর করে একজন মানুষের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড অথবা খালাস। এখানে অবশ্যই বিবেককে কাজে লাগাবেন। আইন অবশ্যই একটা গাইডলাইন হিসেবে কাজ করবে। শহিদদের যে আত্মত্যাগ, তাদের যে সম্মান, জাতি যেভাবে তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ, যে নতুন দেশ আমরা গড়তে যাচ্ছি, আমার বিশ্বাস, বিবেকের সর্বোচ্চ প্রয়োগ করে সুবিচার দিবেন।
তিনি আরও লেন, ৫ আগস্টের আগে যে স্বৈরাচারী ফ্যাসিস্ট সরকার ছিল সে সরকার তার ক্ষমতা প্রলম্বিত করতে মানুষের ওপর অত্যাচারের স্টিম রোলার চালিয়েছে। সেই স্মৃতি আমাদের এখনো বহন করতে হচ্ছে। প্রায় এক হাজার শহিদ এবং কয়েক সহস্র আহত ছাত্র-জনতা আমাদের স্মৃতিকে মনে করিয়ে দেয়, ৫ আগস্টের আগে ১৫ বছর আমরা কীভাবে অসহনীয় পরিস্থিতিতে সময় কাটিয়েছি।
কর্মশালায় অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান বলেন, গত ১৬ বছরে মোমবাতি জ্বালিয়ে নৈরাজ্যবাদী সরকারকে প্রতিষ্ঠিত করতে রায় দিয়েছেন বিচারকরা। বিচার ব্যবস্থার স্বাধীনতার নামে দলীয় এজেন্টে বিচারক নিয়োগবিহীন ফরমায়েশি রায় দেওয়া হয়েছে। এই সংস্কৃতিতে বাংলাদেশকে আর ফিরিয়ে নেওয়া যাবে না।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বললেন, বিগত সময়ে বাংলাদেশকে অন্ধকারে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, জড়িতদের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হবে, আয়নাঘরের সংস্কৃতিতে আর বাংলাদেশ যাবে না।
কর্মশালায় বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয় মিলনায়তনে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গণির সভাপতিত্বে কর্মশালায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের স্পেশাল প্রসিকিউটরিয়াল অ্যাডভাইজর অ্যাডভোকেট এহসানুল হক সমাজি, অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান।
কর্মশালায় মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব খন্দকার মো. মাহবুবুর রহমান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন- রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি আমিনুল ইসলাম, রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. মজিদ আলীসহ রংপুর বিভাগের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, বিচার বিভাগের পদস্থ কর্মকর্তারা ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা।