বাংলাদেশের উন্নয়নশীল অর্থনীতি, সামাজিক অগ্রগতি এবং অবকাঠামোগত উন্নয়নের পাশাপাশি দুর্নীতি, অনিয়ম, চাঁদাবাজি, রাজনৈতিক স্বেচ্ছাচারিতা ও সুশাসনের অভাব অন্যতম প্রধান প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়িয়েছে। এসব সমস্যার কারণে ন্যায়বিচার, গণতন্ত্র, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি এবং নাগরিক সুরক্ষা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। তাই, টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে কার্যকর সংস্কার ও স্বচ্ছ প্রশাসনের প্রয়োজনীয়তা অপরিহার্য।
দুর্নীতি ও অনিয়মের বর্তমান চিত্র Transparency International (TI) এর প্রতিবেদন অনুসারে, বাংলাদেশে দুর্নীতি সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে শুরু করে প্রান্তিক পর্যায় পর্যন্ত বিস্তৃত। সরকারি দপ্তর, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাত, ভূমি প্রশাসনসহ প্রায় প্রতিটি স্তরে অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতি দেখা যায়। দুর্নীতির কারণ
১. স্বচ্ছতার অভাব: সরকারি প্রশাসন ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় গোপনীয়তা বজায় রাখা হয়, যা দুর্নীতিকে উৎসাহিত করে।
২. দুর্বল জবাবদিহিতা: অপরাধীদের আইনের আওতায় আনার ক্ষেত্রে শিথিলতা।
৩. রাজনৈতিক প্রভাব: সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর রাজনৈতিক দলের অতিরিক্ত হস্তক্ষেপ।
৪. স্বল্প বেতন ও অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ: সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কম বেতনের কারণে দুর্নীতির পথ বেছে নেয়।
৫. সুশাসনের অভাব: প্রশাসনিক দুর্বলতা ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতার অভাব।
রাজনৈতিক স্বেচ্ছাচারিতা ও চাঁদাবাজি রাজনৈতিক ক্ষমতার অপব্যবহার করে বিভিন্ন মহল চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি ও অনিয়ম চালিয়ে যাচ্ছে। স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে রাজনৈতিক দলের সহযোগী সংগঠনগুলোর একাংশ চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িত, যা ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য হুমকি। সুশাসনের অভাব ও তার প্রভাব সুশাসনের অভাবে— বিনিয়োগ ও ব্যবসার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটছে।
নাগরিক অধিকার ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা সংকুচিত হচ্ছে। দারিদ্র্য ও বৈষম্য বৃদ্ধি পাচ্ছে।
সমাধান ও সুপারিশ
১. আইনের শাসন ও দুর্নীতি দমন স্বাধীন ও কার্যকর দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) নিশ্চিত করতে হবে। সকল দুর্নীতিবাজকে রাজনৈতিক পরিচয়ের ঊর্ধ্বে রেখে আইনের আওতায় আনতে হবে। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও কার্যকারিতা নিশ্চিত করতে হবে।
২. প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক সংস্কার রাজনৈতিক দলগুলোর স্বচ্ছতা ও গণতান্ত্রিক চর্চা নিশ্চিত করতে হবে। সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ ও পদোন্নতিতে স্বচ্ছতা ও মেধার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। সরকারি সেবার ডিজিটালাইজেশন বাড়িয়ে দুর্নীতি কমানো সম্ভব।
৩. সুশাসন ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণ আমলাতন্ত্রকে স্বাধীন ও দক্ষ করে গড়ে তুলতে হবে। সকল সরকারি প্রকল্পে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করে জনগণের অংশগ্রহণ বাড়াতে হবে।
৪. নাগরিক সচেতনতা ও অংশগ্রহণ দুর্নীতির বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। মিডিয়া ও নাগরিক সমাজকে দুর্নীতিবিরোধী কার্যক্রমে সম্পৃক্ত করতে হবে। তথ্য অধিকার আইন কার্যকরভাবে প্রয়োগ করতে হবে।
উপসংহার বাংলাদেশের উন্নয়নকে টেকসই করতে হলে দুর্নীতি, অনিয়ম, চাঁদাবাজি, রাজনৈতিক স্বেচ্ছাচারিতা ও সুশাসনের অভাব দূর করা জরুরি। প্রশাসন, রাজনৈতিক দল, বিচার বিভাগ, বেসরকারি খাত ও সাধারণ জনগণের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় একটি স্বচ্ছ ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজ গড়ে তোলা সম্ভব।
এ লক্ষ্যে আইনের শাসন, গণতন্ত্র ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।
সোহেল সামাদ বাচ্চু
যুগ্ম-সচিব - বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি (বিএসপি)