শুক্রবার , ৯ মে ২০২৫ | ২৭শে বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
  1. অন্যান্য
  2. অপরাধ
  3. অর্থনীতি
  4. আইটি বিশ্ব
  5. আইন-বিচার
  6. আন্তর্জাতিক
  7. ইসলাম
  8. ঈদুল ফিতর
  9. ক্যাম্পাস
  10. ক্রিকেট
  11. খুলনা
  12. খেলা-ধুলা
  13. চট্টগ্রাম
  14. জাতীয়
  15. ঢাকা

তরুণদের ভোট টানতে ‘চমক’ নিয়ে আসছে বিএনপি

প্রতিবেদক
স্বাধীন কাগজ
মে ৯, ২০২৫ ১১:১৯ পূর্বাহ্ণ   প্রিন্ট সংস্করণ

বর্তমান সময়ে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রধান উদ্দেশ্য তরুণ ভোটারদের নিজ দলের প্রতি আকৃষ্ট করা। এজন্য রাজনৈতিক দলগুলো তরুণদের নিয়ে নানা কর্মসূচিও পালন করছে।

আর এই তরুণ ভোটারদের কাছে টানতে বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। এর অংশ হিসাবে মে মাসজুড়ে যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদল যৌথভাবে দুদিন করে মোট আট দিন সেমিনার ও সমাবেশ করবে। ১০ সাংগঠনিক বিভাগকে চারটি বৃহত্তর বিভাগে ভাগ করে কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে। প্রতিটি বিভাগে ভিন্ন ভিন্ন শিরোনামে সেমিনার হবে। অভিন্ন শিরোনামে হবে ‘তারুণ্যের রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার সমাবেশ’।

চট্টগ্রাম মহানগরে শুক্রবার প্রথম সেমিনার ও শনিবার প্রথম বিভাগীয় সমাবেশ হবে। কর্মসূচি সফল করতে নেওয়া হয়েছে ব্যাপক প্রস্তুতি। এতে ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা, তরুণদের মানবসম্পদ হিসাবে গড়ে তোলা এবং জাতীয়তাবাদী রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত করাসহ বিভিন্ন বার্তা দেবে তিন সংগঠন। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে এসব তথ্য।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশনা অনুযায়ী এই কর্মসূচি গ্রহণ করেছে তিন সংগঠন। সংগঠনগুলোর নেতারা বলছেন, জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়। এর নেতৃত্বে ছিলেন তরুণেরা। তারাই গণ-অভ্যুত্থানের মূল চালিকাশক্তি। শেখ হাসিনার সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে তিনটি প্রহসনের নির্বাচনে তরুণরা ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেননি। দেশে তরুণ ভোটার তিন কোটি চার লাখ সাত হাজার। তাদের বয়স ১৮ থেকে ২৯ বছর। মোট ১২ কোটি ৪৪ লাখ ৮০ হাজার ভোটারের মধ্যে ২৪ দশমিক ৪২ শতাংশই তরুণ। এদের বড় অংশই শিক্ষার্থী। সব মিলিয়ে আগামী ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে তরুণ ভোটার হবেন গুরুত্বপূর্ণ ‘ফ্যাক্টর’। ভোটের হিসাব-নিকাশ তারা পালটে দিতে পারেন। কাজেই বিএনপির টার্গেটও তরুণ ভোটাররা। এসব কারণে তরুণদের আকৃষ্ট করতে মাসব্যাপী কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে।

এর আগে ২০২৩ সালেও একই সংগঠনের ব্যানারে ‘তারুণ্যের সমাবেশ’ হয়। ওই সময় আয়োজনের শুরু থেকেই তৎকালীন ক্ষমতাসীন দল ও প্রশাসনের বাধার মুখে পড়ে। কিন্তু এবার আয়োজন হচ্ছে বাধাহীন। বিএনপির একাধিক নীতিনির্ধারক জানান, মেধাবী তরুণরা কর্মসংস্থান না পেয়ে বিদেশে পাড়ি দিচ্ছে, আর দেশে ফিরছে না। দেশ হারাচ্ছে তার মেধাবী সন্তানকে। যা উন্নয়নের ক্ষেত্রেও বড় বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। বিএনপি তরুণদের এই মেধা, জ্ঞান এবং তাদের স্বপ্নকে ধারণ করতে চায়। পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে তরুণদের দেশের উন্নয়নে কাজে লাগাতে চায় বিএনপি।

তিন সংগঠনের নেতাদের প্রত্যাশা, এবারের সমাবেশেও তরুণদের ব্যাপক উপস্থিতি হবে। কারণ, সাড়ে ১৫ বছর ধরে তরুণরা নানাভাবে অবহেলিত। উচ্চশিক্ষার পরও লাখ লাখ তরুণ বেকার। ভোটার হওয়া সত্ত্বেও তারা ভোট দিতে পারছেন না। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর তাদের প্রত্যাশা ছিল অচিরেই দেশে আবার গণতন্ত্র ফিরে আসবে, অর্থনীতির চাকা সচল হবে, সর্বক্ষেত্রে স্থিতিশীলতা আসবে। কিন্তু আট মাস পেরিয়ে গেলেও ভোটাধিকারসহ কোনো ক্ষেত্রে তেমন কোনো উন্নতি হয়নি। এ অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে সমস্বরে আগামী নির্বাচনের দাবি তুলে ধরা হবে এসব সমাবেশ থেকে। শুক্রবার বৃহত্তর চট্টগ্রাম বিভাগ (কুমিল্লাসহ) দিয়ে কর্মসূচি শুরু হবে।

প্রথমদিন ‘কর্মসংস্থান ও বহুমাত্রিক শিল্পায়ন নিয়ে তারুণ্যের ভাবনা’ শীর্ষক সেমিনার হবে চট্টগ্রাম ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টারে। পরদিন শনিবার চট্টগ্রাম পলো গ্রাউন্ড ময়দানে হবে তারুণ্যের সমাবেশ। দ্বিতীয় কর্মসূচি হবে খুলনায়। ১৬ মে খুলনায় হবে ‘শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও মৌলিক অধিকার নিয়ে তারুণ্যের ভাবনা’ শীর্ষক সেমিনার। পরদিন ১৭ মে সমাবেশ। রাজশাহী-রংপুর বিভাগের কর্মসূচি হবে বগুড়ায়।

২৩ মে বগুড়ায় ‘কৃষি উন্নয়ন, পরিবেশ রক্ষা ও নাগরিক সমস্যা নিয়ে তারুণ্যের ভাবনা’ শীর্ষক সেমিনার হবে। পরদিন ২৪ মে হবে সমাবেশ। সবশেষ কর্মসূচি হবে ঢাকায়। এই কর্মসূচিতে ঢাকা, ফরিদপুর, সিলেট ও ময়মনসিংহ বিভাগ অংশ নেবে।

২৭ মে ঢাকায় ‘তারুণ্যের রাজনৈতিক ভাবনা ও অর্থনৈতিক মুক্তি’ শীর্ষক সেমিনার হবে। পরদিন ২৮ মে হবে সমাবেশ। যা দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় তারুণ্যের সমাবেশ হবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, ছাত্রদলসহ বিএনপির অঙ্গসংগঠনের বাইরে যেসব তরুণ রয়েছেন, যারা বিএনপির কিংবা কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত নয় তাদের সেমিনার ও সমাবেশে আনার ওপর বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। অন্য যে কোনো প্ল্যাটফরমে যারা ভালো করছেন, তাদেরও আনা হবে। এরমধ্যে সাংবাদিক, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ারসহ বিভিন্ন পেশার তরুণদের সম্পৃক্ত করার জন্য বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে সংগঠন তিনটি। শুধু শিক্ষিত তরুণ নয়, যেসব তরুণ বিদ্যালয়ে যেতে পারেনি, তাদেরও এই কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের জন্য গুরুত্ব আরোপ করেছেন বিএনপির হাইকমান্ড।

ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির যুগান্তরকে বলেন, বর্তমানে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে দেশের তরুণরা আস্থার ভরসাস্থল মনে করছেন, যা দেশের নানা জায়গায় ঘুরে আমরা দেখেছি। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান চান, আমাদের তরুণরা সব সেক্টরে প্রতিনিধিত্ব করুক। সেজন্য তার নির্দেশনায় এই কর্মসূচির মাধ্যমে আমাদের দলের সঙ্গে তরুণদের সম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টা করছি। আমরা সেমিনারে দলের ৩১ দফা নিয়ে তরুণদের ভাবনা জানতে চাইব। সেখানে সামগ্রিক বিষয়েও আলোচনা হবে। তরুণদের পক্ষ থেকে নতুন কোনো প্রস্তাব এলে তা বিবেচনা করা হবে। দলের পলিসি বা সংস্কারসহ যে কোনো বিষয়ে তরুণদের দ্বিমত পোষণেরও সুযোগ থাকবে। সেমিনারে অক্সফোর্ড, কেমব্রিজ, হার্ভার্ডসহ বিশ্বের খ্যাতনামা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় পড়াশোনা করা দেশের শিক্ষার্থী, অধ্যাপনা করা শিক্ষক, বিদেশি গণমাধ্যমে কাজ করা সাংবাদিক, মাইক্রোসফটসহ গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে-খাতে কর্মরত তরুণ, চাকরিজীবী, উদ্যোক্তাদের আমন্ত্রণ জানানো হবে। আমন্ত্রিত তরুণদের মধ্যে বিএনপির সমমনাদের পাশাপাশি অরাজনৈতিক ব্যক্তিরাও থাকবেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের দল তরুণদের কর্মসংস্থানের বিষয়টিকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। সেখানে (সেমিনার) তরুণদের কর্মসংস্থান নিশ্চিতে আমাদের দলের পরিকল্পনা উপস্থাপন করা হবে। এ বিষয়ে তরুণেরা প্রশ্ন করতে পারবেন। এছাড়া এই পরিকল্পনা কীভাবে বাস্তবায়ন করা হবে, সে ধারণাও দেওয়া হবে।’

যুবদলের সভাপতি আব্দুল মোনায়েম মুন্না বলেন, ‘দেশে তরুণ ভোটার তিন কোটির ওপর। তাদের বিষয়ে আমাদের কিছু চিন্তাভাবনা আছে। যে কোনো কাজে তরুণদের প্রাধান্য দিতে চাই। দেশের তরুণদের স্বপ্ন, মেধা, জ্ঞান, শক্তি এবং সাহসকে ধারণ করার সক্ষমতা বিএনপির রয়েছে। তাদেরকে পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে দেশের উন্নয়নে আমরা কাজে লাগাতে চাই।’

স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহসান বলেন, ‘অনেক মেধাবী তরুণ আছেন। দেশ নিয়ে এই তরুণদের ভাবনা আমরা জানতে চাই। সমাবেশ হবে ‘তারুণ্যের রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার সমাবেশ’। আর সেমিনারে কর্মসংস্থান, বহুমাত্রিক শিল্পায়ন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, মৌলিক অধিকার, কৃষি উন্নয়ন, পরিবেশ রক্ষা এবং নাগরিক সমস্যা নিয়ে তারুণদের বক্তব্য এবং মতামত আমরা শুনবো।

 

সর্বশেষ - সংবাদ