বুধবার সকাল ১০টার মধ্যে ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেনকে মেয়র হিসাবে শপথ পড়ানোর ব্যবস্থা করার আলটিমেটাম দিয়েছেন আন্দোলনরত সমর্থকরা। সরকার এই আলটিমেটাম না মানলে সকাল ১০টায় নগরভবনের সামনে হাজির হয়ে আরও কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছেন তারা। প্রয়োজনে নগরীর আবর্জনা পরিষ্কার বন্ধসহ ঢাকা অচল করে দেওয়ার হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন তারা। এদিকে আজ উচ্চ আদালতে ইশরাকের মেয়রের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার বিষয়ে রিট পিটিশনের রায় ঘোষণা করা হবে।
আন্দোলনরত ঢাকাবাসীর পক্ষে এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন সাবেক সচিব মশিউর রহমান। মঙ্গলবার বিকালে ষষ্ঠ দিনের অবস্থান ব্লকেড কর্মসূচি থেকে এই ঘোষণা দেন তিনি। মশিউর রহমান বলেন, আগামীকাল (আজ) সকাল ১০টা পর্যন্ত অপেক্ষা করবেন তারা। এরই মধ্যে ইশরাক হোসেনকে মেয়রের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত না এলে আবারও সকাল ১০টায় একত্রিত হয়ে আরও কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে। একই সঙ্গে ঢাকা অচলেরও হুমকি দেন সরকারের সাবেক এই সচিব।
এ সময় কর্মসূচি ঘোষণার মঞ্চে এই আন্দোলন এবং দাবির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেন ঢাকা সিটি করপোরেশনের সর্বস্তরের কর্মচারী ইউনিয়ন। তাদের পক্ষ থেকে নগরবাসীর প্রত্যেক নাগরিক সেবা বন্ধের ঘোষণা দেওয়া হয়। ইশরাক সমর্থকদের আন্দোলনে সমর্থকদের সংহতি প্রকাশ করে সিটি করপোরেশনের প্রত্যেক কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক উপস্থিত হয়ে এই আন্দোলনের সঙ্গে একাÍতা প্রকাশ করেন। তারা ঘোষণা করেন-বুধবার সকাল ১০টার মধ্যে দাবি মানা না হলে এরপর থেকে পরিচ্ছন্নতা সেবা, ময়লা পরিবহণ সেবা এবং বিদ্যুৎ সেবাসহ সব ধরনের নাগরিক সেবা বন্ধ করে দেওয়া হবে।
এর আগে বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসাবে শপথ পড়ানোর দাবিতে মঙ্গলবার সকাল থেকে নগরভবনের সামনের সড়কে বসে অবরোধ করেন ইশরাক হোসেনের সমর্থকরা। নগরভবনের প্রধান ফটকের সামনে একটি অস্থায়ী মঞ্চ তৈরি করেন। সেখানে জাতীয় সংগীত, দেশাÍবোধক গান বাজানো হচ্ছে।
বুধবার থেকে শুরু হওয়া অবস্থান কর্মসূচির কারণে নগরভবন কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। সেখানে কোনো ধরনের দাপ্তরিক কাজ হচ্ছে না। দুর্ভোগে পড়েছেন সেবা নিতে আসা লোকজন। সিটি করপোরেশন নগরবাসীকে নানা ধরনের সেবা দিয়ে থাকে। এসব নাগরিক সেবা কার্যত এখন বন্ধ রয়েছে।
ইশরাকের মেয়র পদের গেজেট নিয়ে আদেশ আজ : ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসাবে ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশনের দেওয়া গেজেট স্থগিত চেয়ে রিটের ওপর আদেশের জন্য আজ দিন ধার্য করা হয়েছে। মঙ্গলবার বিচারপতি মো. আকরাম হোসেন চৌধুরী ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর হাইকোর্ট বেঞ্চ এই সময় নির্ধারণ করেন। এর আগে দুপুর ১টায় শুনানি শুরু হয়। চলে প্রায় ২টা পর্যন্ত। এরপর আদালতে বিকাল ৪টা ১০ মিনিট থেকে প্রায় সোয়া ৫টা পর্যন্ত শুনানি চলে। আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মোহাম্মদ হোসেন। ইশরাক হোসেনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী এএম মাহবুব উদ্দিন খোকন ও ব্যারিস্টার কায়সার কামাল। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মাহফুজুর রহমান মিলন ও খান জিয়াউর রহমান।
আইনজীবী মোহাম্মদ হোসেন নির্বাচনি ট্রাইব্যুনালের রায় থেকে কয়েকটি ‘ভুল’ আদালতে তুলে ধরে রুল জারির আর্জি জানান। আর আইনজীবী এএম মাহবুব উদ্দিন খোকন ও ব্যারিস্টার কায়সার কামালের মতে, নির্বাচনি ট্রাইব্যুনালের রায় ও আদেশের বিরুদ্ধে বিবাদী পক্ষ সংক্ষুব্ধ হলে নির্বাচনি আপিল ট্রাইব্যুনালে আপিল করতে পারেন। তবে সেটা হতে হবে মামলার বিবাদী পক্ষ। যেমন ফজলে নূর তাপস। কিন্তু সেখানে আপিল না করে একজন আইনজীবী রিটকারী হয়ে হাইকোর্টে আসতে পারেন না। তাই এ রিট খারিজযোগ্য।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশের সব সিটি করপোরেশনের মেয়রদের অপসারণ করা হয়। ২৭ মার্চ ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ২০২০ সালের নির্বাচনে ফজলে নূর তাপসকে বিজয়ী ঘোষণার ফল বাতিল করে বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে মেয়র ঘোষণা করেন ঢাকার প্রথম যুগ্ম-জেলা জজ ও নির্বাচনি ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. নুরুল ইসলাম। আদালত ১০ দিনের মধ্যে গেজেট প্রকাশের নির্দেশ দেন। এ রায় পাওয়ার পর ২৭ এপ্রিল গেজেট প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন।
এদিকে গেজেট প্রকাশের দিন ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ঘোষণা করে দেওয়া রায় ও ডিক্রির বিরুদ্ধে আপিল করতে আইনি নোটিশ দেন রফিকুল ইসলাম ও মামুনুর রশিদ নামে দুই ব্যক্তি। নোটিশে গেজেট প্রকাশ এবং ইশরাককে শপথ নেওয়া থেকে বিরত থাকতে বলা হয়। তখন ওই দুই ব্যক্তির আইনজীবী বলেন, যথাযথ প্রক্রিয়া না মেনে দ্রুত রায়টি দেওয়া হয়েছে। তারা মনে করেছিলেন, ইসি ওই আদেশকে চ্যালেঞ্জ করবে। চ্যালেঞ্জ করল না। পরে মামুনুর রশিদ হাইকোর্টে রিট করেন। রিটে ২৭ মার্চের রায় এবং ২৭ এপ্রিলের গেজেট কেন বেআইনি হবে না এবং ইশরাক হোসেনের শপথ পরিচালনা থেকে বিরত রাখার নির্দেশনা কেন দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারির আর্জি জানানো হয়েছে। এ রুল বিবেচনাধীন থাকা অবস্থায় রায় ও গেজেটের কার্যক্রম স্থগিত চাওয়া হয়েছে।