শনিবার , ১২ এপ্রিল ২০২৫ | ৬ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
  1. অন্যান্য
  2. অপরাধ
  3. অর্থনীতি
  4. আইটি বিশ্ব
  5. আইন-বিচার
  6. আন্তর্জাতিক
  7. ইসলাম
  8. ঈদুল ফিতর
  9. ক্যাম্পাস
  10. ক্রিকেট
  11. খুলনা
  12. খেলা-ধুলা
  13. চট্টগ্রাম
  14. জাতীয়
  15. ঢাকা

হাতের কাজ শিখে হাজারো নারী স্বাবলম্বী

প্রতিবেদক
স্বাধীন কাগজ
এপ্রিল ১২, ২০২৫ ৪:৫৯ অপরাহ্ণ   প্রিন্ট সংস্করণ

এ কে এম আজহারুল ইসলাম সবুজ (গাইবান্ধা জেলা সংবাদদাতা):  কাপড় সেলাই করে ভাগ্য বদলেছে গাইবান্ধার পলাশবাড়ী পৌর এলাকার নুনিয়াগাড়ী গ্রামের মিতু বেগমের। এই সফল উদ্যোক্তার পথে হেঁটে এখন স্বাবলম্বী হয়েছেন এলাকার অন্তত আরও হাজার নারী।

এমব্রয়ডারি তৈরি এসব পোশাক দেশের বাজারের পাশাপাশি যাচ্ছে বিদেশেও। স্বাবলম্বী হয়ে ওঠা অনেক নারী এখন স্বপ্ন দেখছে নিজেরাও উদ্যোক্তা হওয়ার। একটি সেলাই মেশিন দিয়ে শুরু করে মিনি গার্মেন্টস কারখানা গড়ে তুলেছেন তিনি। এই উদ্যোক্তা মিতু বেগমের বাড়ী গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলার নুনিয়াগাড়ী গ্রামে। তিনি ওই গ্রামের মিজানুর রহমানের স্ত্রী।

২০০৯ সালে প্রথম একটি সেলাই মেশিন নিয়ে কাটিং ও সেলাই, হাতের কাজ, এপ্লিকের কাজ, নকশিকাঁথা, নকশি বেডশিট, বেডশিট, বুটিকের ড্রেস, চাদর, পর্দা, কুশন ও টেবিল ম্যাট তৈরি করে স্থানীয়ভাবে বাজারজাত করতেন।

এভাবে যখন যে অর্ডার পেতেন সেই কাজ করতেন মিতু। এভাবেই কাজ এগিয়ে যেতে থাকে মিতুর ঘরোয়া মিনি কারখানার। এর সঙ্গে দিনদিনে বৃদ্ধি হতে থাকে নারী শ্রমিকের। এরপর ২০১৮ সালে মিতু গাইবান্ধা সমন্বিত পল্লী দারিদ্র্য দূরীকরণ প্রকল্পের আওতায় বিআরডিবি পলাশবাড়ী উপজেলা শাখার মাধ্যমে এক মাসের এমব্রয়ডারি প্রশিক্ষণ নেন। পাশাপাশি নিজের কারখানার নারীদের দক্ষ করে গড়ে তুলতে তাদেরও পলাশবাড়ী বিআরডিবি অফিসের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ দিয়ে কাজের সুযোগ করে দেন। সম্প্রতি সময়ে সরেজমিনে দেখা যায়, পলাশবাড়ী পৌর এলাকার নুনিয়াগাড়ী গ্রামের মিতু বেগমের বাড়িতে অধর্শত কাজের মধ্য দিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন।

তারা সারিবদ্ধভাবে বসে আপন মনে কাজ করছেন। এদের মধ্য কেউ বারান্দায়, কেউ উঠানে, আবার কেউ গাছ তলায় বসে নকশিকাঁথা, শাড়ি, থ্রিপিস ও সালোয়ার কামিজসহ বিভিন্ন নকশা আকঁছেন। সুই আর রঙিন সুতায় নিপুণ হাতের ছোঁয়ায় একেকটি পোশাকে ফুটিয়ে উঠছে নান্দনিক সব নকশা। নারী কারিগররা জানান, নিজেদের সংসারের কাজের পাশাপাশি এ কাজ করে যে অর্থ উপাজন হয় তা দিয়ে কেউ লেখাপড়ার খরচ বহন করছেন।

কেউ আবার সংসারের কাজে সহযোগিতার পাশাপাশি সন্তানদের চাহিদা পূরণ করছেন। এখন তাদের ইচ্ছে পূরণের জন্য অন্যের উপর নির্ভর করতে হয় না। ব্যবসায়িক বুদ্ধি, রুচিবোধ, গ্রাহকের মানসিকতা ও সৃজনশীল চেতনা থাকার কারণে তার তৈরি পণ্যের মান বেশ ভালো।

এ কারণে জেলা-উপজেলার গন্ডি পেরিয়ে ঢাকা নিউমার্কেট ও আড়ং থেকে একের পর এক অর্ডার আসতে থাকে। তাদের কথামত অর্ডার অনুযায়ী কাজ করতে গিয়ে নারী শ্রমিক আরও বৃদ্ধি করতে হয়। বতর্মানে কারখানায় এবং বাড়িতে কাজ করছেন ৬০০ নারী শ্রমিক। মাসে কাপড়ের বিভিন্ন কাজের অর্ডার আসে ৫ হাজার থেকে ৭ হাজার পিসের। আগে মিতুর সংসারে একটু টানাপোড়েন থাকায় এবং মায়েদের শিখানো হাতের কাজ সম্বল করে শাড়িতে পুঁথি বসানো, জরির কাজ, নকশিকাঁথা,পাঞ্জাবি, বেডশীট, ম্যাক্সি, স্কার্ট, স্কার্ফ, বিয়ের পোশাক, লেহেঙ্গা, বোরকা, পহেলা বৈশাখ ও পহেলা ফাগুনের পোশাক, বালিশের কভার, ডাইনিং সেটসহ ঘর সাজানোর আইটেম তৈরি করতেন প্রথমে। সাধ্যের মধ্যে যতটুকু পেরেছেন অন্যদের সহযোগিতা করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। শ্রমিক রুপালী বেগম বলেন, ‘আমার সংসারে খুবই অভাব ছিল। কোনো কূল-কিনারা করতে পারছিলাম না। কাজও তেমন একটা জানা ছিল না। মিতু আপা আমাকে পলাশবাড়ী বিআরডিবি অফিসের এমব্রয়ডারি প্রশিক্ষণ নেওয়ায় পরামর্শ দেন। এরপর তার কারখানায় কাজ করার সুযোগ দেন। সেই থেকে আমাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। এখন সংসারে সচ্ছলতা এসেছে।

এখানে কাজ করেন লিজা বেগম বলেন, ‘আমার সংসারে অনেক কিছুর ঘাটতি ছিল। মিতু আপা আমাকে বিআরডিবি থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে দিয়ে তার কারখানায় কাজ দিয়ে সহযোগিতা করেছেন। আমি তার কাছে চিরকৃতজ্ঞ। আমি নিজের চাহিদা মিটিয়ে স্বামীর হাতে দুটো টাকা তুলে দিতে পারছি। এটাই কম কিসের।’ রুমি আকতারও কাজ করেন মিতুর কারখানায়। তিনি বলেন, ‘পড়াশুনার পাশাপাশি এমব্রয়ডারির কাজ করছি।

নিজের পড়াশুনার খরচ চালিয়ে পরিবারকেও সহযোগিতা করতে পারি। আগামীতেও কাজের মাধ্যমে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে চাই।’ নারী উদ্যোক্তা মিতু বলেন, ‘জীবনে কোনো কিছুই সহজ পথে আসে না। প্রতিটি পথেই কাঁটা বিছানো থাকে।

আর তা উপরে ফেলার সাহস যাদের আছে কেবল তারাই জয়ী হবেন। আজ আমি সফল হয়েছি। দেশের বিভিন্ন ফ্যাশন হাউস, মার্কেট থেকে বড় বড় অর্ডার আসে আমার কাছে। তাদের চুক্তি মোতাবেক সঠিক সময়ে মানসম্মত মাল বুঝে দিতে হয়। এভাবে কাজ করে প্রতিমাসে প্রায় ৫০ থেকে ৭০ হাজার টাকা লাভ থাকে।’

পলাশবাড়ী উপজেলা বিআরডিবি কর্মকর্তা আব্দুল মান্নান বলেন, ‘গাইবান্ধা সমন্বিত পল্লী দারিদ্র্য দূরীকরণ প্রকল্পের ভিশন পণ্য ভিত্তিক পল্লী গঠনের লক্ষ্যে এমব্রয়ডারি ট্রেডে একমাস মেয়াদী প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। সেই প্রশিক্ষণ নিয়ে মিতু নিজ চেষ্টায় স্বাবলম্বী হয়েছেন। তাকে একজন সফল উদ্যোক্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেতে সহযোগিতা করা হয়েছে। তার মতো অন্যরা চাইলে উপজেলা বিআরডিবির পক্ষ থেকে সহযোগিতা করা হবে।’

সর্বশেষ - সংবাদ