মো: সিরাজুল মনির (চট্টগ্রাম ব্যুরো): গত ৫ আগষ্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর থেকে তাদের আমলে গৃহীত বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প নিয়ে বর্তমান অন্তবর্তী সরকার নানামুখী সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। তারই ধারাবাহিকতায় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সাথে পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপে (পিপিপি) বাস্তবায়নাধীন কয়েক হাজার কোটি টাকার প্রকল্পে নতুন গতিশীলতা সৃষ্টির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের প্রকল্পগুলো নিয়ে জরুরি পর্যালোচনা করার জন্য প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরের পাবলিক প্রাইভেট পাটর্নার শিপের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার সভাপতিত্বে আগামী ১০ অক্টোবর উচ্চ পর্যায়ের একটি বৈঠক অনুষ্ঠানের কথা রয়েছে। পিপিপির আওতাধীন প্রকল্পগুলোর ব্যাপারে অগ্রগতি এবং বিদ্যমান পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে ওই বৈঠক থেকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করা হবে বলেও সূত্র জানিয়েছে। দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট পরিবর্তনের সাথে সাথে চট্টগ্রাম বন্দরের অনেক গৃহীত প্রকল্পের সাময়িক কাজ বন্ধ রেখেছে।
মূলত সকল উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ আগামীতে কিভাবে এগিয়ে নিয়ে যাবে তার জন্য এ পর্যালোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। তৎকালীন সরকারের এসব প্রকল্প চট্টগ্রাম বন্দরের জন্য কতটুকু সাফল্য বয়ে আনবে তা নিয়ে রয়েছে নানামুখী মত। সরকারের মদনপুষ্ট অনেক ব্যবসায়ী এসব প্রকল্পের সুবিধা ভোগ করার জন্য মতামত প্রদান করলেও স্টেক হোল্ডারদের মুখে শোনা যায় ভিন্ন কথা।
তাই সকল পক্ষের বক্তব্য নিয়ে আলোচনা করা হবে পর্যালোচনা সবায়। সূত্র জানিয়েছে, চট্টগ্রাম বন্দরের বে টার্মিনাল, পতেঙ্গা কন্টেনার টার্মিনাল, লালদিয়ার চর টার্মিনাল, নিউমুরিং কন্টেনার টার্মিনালসহ অনেকগুলো প্রকল্প রয়েছে। এসব প্রকল্পের কোন কোনটি ইতোমধ্যে চুক্তি হয়েছে, কোনটির পরামর্শক নিয়োগ হয়েছে, কোনটির এমওইউ স্বাক্ষরিত হয়েছে। কিন্তু ছাত্র গণঅভ্যুত্থানে সরকার পতনের পর প্রায় সবগুলো প্রকল্পেরই কার্যক্রম মুখ থুবড়ে পড়ার উপক্রম হয়েছিল।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পর পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপের আওতাধীন প্রকল্পগুলো নিয়ে কর্তৃপক্ষ মাঠে নামছে। প্রকল্পগুলোর বিদ্যমান পরিস্থিতি, সার্বিক অবস্থা পর্যালোচনাসহ নানা বিষয় নিয়ে আলোচনার পর নতুন গতিশীলতা তৈরি হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম বন্দরের সাথে পিপিপি’র আওতাধীন প্রকল্পগুলোর মধ্যে ‘ইকুইপ, অপারেট এন্ড মেনটেইনেন্স অব পতেঙ্গা টার্মিনাল, বে টার্মিনাল–১ ও বে টার্মিনাল–২ নির্মাণ, ওভার ফ্লো কন্টেনার ইয়ার্ডসহ নিউমুরিং কন্টেনার টার্মিনাল অপারেশন ও মেনটেইনেন্স বাই প্রাইভেট টার্মিনাল অপারেটর এবং লালদিয়ার চর টার্মিনাল নির্মাণ ও পরিচালনা শীর্ষক প্রকল্প রয়েছে। এর মধ্যে পতেঙ্গা কন্টেনার টার্মিনাল ইতোমধ্যে সৌদি আরবের রেড সি গেটওয়ে টার্মিনালকে প্রদান করা হয়েছে। এছাড়া বে টার্মিনাল নির্মাণের কার্যক্রমেও বিরাজ করছে স্থবিরতা।
লালদিয়ার চর টার্মিনাল নির্মাণের ব্যাপারে ডেনমার্কের রাষ্ট্রায়ত্ত ও বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় শিপিং কোম্পানি মার্কস লাইনের সাথে এমওইউ স্বাক্ষরিত হয়েছে। নিউমুরিং কন্টেনার টার্মিনাল ও ওভার ফ্লো ইয়ার্ডের ব্যাপারেও সিদ্ধান্ত নিতে হবে। চট্টগ্রাম বন্দর তথা দেশের আমদানি রপ্তানি বাণিজ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পগুলো নিয়ে বৈঠক করতে আগামী ১০ অক্টোবর প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপের প্রধান নির্বাহী মোহাম্মদ হাফিজুর রহমানের সভাপতিত্বে উচ্চ পর্যায়ের একটি বৈঠক আহ্বান করেছেন।
ওইদিন সকাল ১০টায় পিপিপি সম্মেলন কক্ষে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এসএম মনিরুজ্জামানসহ বন্দরের শীর্ষ একাধিক কর্মকর্তার ওই বৈঠকে যোগদানের কথা রয়েছে। বৈঠকে প্রকল্পগুলোর বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে অবহিত হওয়ার পাশাপাশি পরবর্তী করণীয় নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা প্রদান করবেন বলেও বন্দরের দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।
এই ব্যাপারে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মোহাম্মদ ওমর ফারুকের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আগামী ১০ অক্টোবর পিপিপির সম্মেলন কক্ষে একটি উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। তিনি বৈঠক সম্পর্কে আর বিস্তারিত কিছু জানেন না বলে জানান। বৈঠকের পরে বিস্তারিত জানানো হবে বলে তিনি জানান।