মোঃ রফিকুল ইসলাম (খুলনা জেলা সংবাদদাতা): বর্ষায় পাইকগাছার বিভিন্ন নার্সারিতে গাছের চারার ব্যাপক চাহিদা ও বিক্রির বেড়ে গেছে। উপজেলায় বাণিজ্যিক ভাবে গড়ে তোলা নার্সারিগুলিতে বছরজুড়ে সব গাছের চারা পাওয়া যায়।
এসব চারা বেচাকেনা হয় সব মৌসুমে। তবে চারা বিক্রির সবচেয়ে উপযুক্ত সময় বর্ষাকালে। এই সময়টাতে রোপণ করা চারাতে ফলন হয় শতভাগ এবং জীবিত থাকে বলে চারারও চাহিদা বেড়ে ওঠে দ্বিগুণ। অনেকে এই সময়টাতে তৈরি করেন ফলজ-বনজ বাগান। বেশির ভাগ মানুষ তাদের বসতবাড়িতে নানা প্রকারের চারা রোপণ করে থাকেন বর্ষাকালে। এ বছরের আষাঢ়ের প্রথম দিন থেকে বিক্রি শুরু হয়েছে। এবং নার্সারিগুলো গাছের চারার ব্যাপক চাহিদা থাকায় বিক্রির হিড়িক পড়েছে। উপজেলার গদাইপুরে বাণিজ্যিক ভাবে গড়ে উঠেছে তিন শতাধিক নার্সারি।
তাছাড়া ১০ শতক থেকে এক বিঘা জমিতে গড়ে উঠেছে দুই শতাধিক নার্সারি। গ্রামের চারদিকে যেন সবুজের সমাহার। গদাইপুরে ঢুকলে চোখে পড়ে ক্ষেতের পর ক্ষেত নার্সারি। বাড়ির সামনে-পেছনে ও আশপাশে নার্সারি গড়ে তুলেছেন সবাই। সব নার্সারির সামনে আছে সাইনবোর্ড লাগাানো। নানা রকমের ফুল, ফল ও মসলার চারা বাড়িগুলোর সামনে। বাড়ির ভেতরে গড়ে তোলা নার্সারিতে চারা কেনাবেচার দৃশ্যও নজর কাড়ে। গদাইপুর এলাকার তৈরী কলম বাংলাদেশের চট্টগ্রাম, দিনাজপুর, রংপুর, সিলেট, বরিশাল, কুমিল্লা, রাজশাহী সহ দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ হচ্ছে। নার্সারি মালিক সমিতি সুত্রে জানা গেছে, কেবল বর্ষা মৌসুমেই গদাইপুরের কয়েক শত নার্সারিতে প্রায় ১০০ কোটি টাকার চারা বিক্রি হয়।
আর সারা বছরের বিক্রি হয় আড়াই ২ শত কোটি টাকার বেশি। এসময় চারা ক্রয়, বিক্রি ও পরিচর্যায় ব্যস্ত হয়ে পড়ছেন মালিক-শ্রমিকরা। উপজেলার গদাইপুর গ্রামের মেইন সড়কের দুই পাশে নার্সারিতে নানা প্রজাতির গাছের চারার দৃশ্য নজর কাড়ে। রাস্তার পাশে যতদূর দৃষ্টি যায় ফুল, ফল, মসলা ও বনজের চারা দেখা যায়। যেগুলোর গোড়ার মাটি পলি প্যাকেটে আবদ্ধ।
চলতি পথে নার্সারিগুলোয় কর্মব্যস্ততার দৃশ্য চোখে পড়ে। কেউ নিড়ানি দিয়ে আগাছা বাছা ও ঝাঁজরি দিয়ে চারায় পানি দিচ্ছেন। আবার কেউ ভ্যান, নছিমন, ট্রাক ও পিকআপে চারা তুলে দিচ্ছেন। দেশী প্রজাতির পাশাপাশি বিদেশী ফলের চারারও উৎপাদন হয়। এখানে স্ট্রবেরি, রাম্বুটান, ড্রাগন, থাই পেয়ারাসহ ৩০-৪০ প্রজাতির বিদেশী ফলের চারা তৈরি হয়। এছাড়া দেশী প্রজাতির সকল ফলের চারা নার্সারিগুলোয় পাওয়া যায়।
এসব ফলের প্যাকেট চারা বছরজুড়ে পাওয়া যায়। প্যাকেটে রোপণ করা চারার পাশাপাশি টবে লাগানো ফুল-ফলের চারাও এখানে বিক্রি হয়। চুই, লবঙ্গ, তেজপাতা, দারুচিনি, গোলমরিচ, এলাচসহ বেশ কয়েক প্রজাতির মসলার চারা উৎপাদন ও বিক্রি হয়। পাইকগাছা উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মোঃ একরামুল হোসেন জানান, নার্সারি ব্যবসা অত্যন্ত লাভজনক। কেউ পরিকল্পনা মাফিক নার্সারি করলে অনায়াসে তিনি স্বাবলম্বী হবেন। তিনি আরও বলেন, পরিবেশ ভারসাম্য ও জীবচিত্র্য রক্ষার জন্য বৃক্ষের গুরুত্ব অপরিসীম। বর্ষাকালে গাছের চারা রোপণের উপযুক্ত সময়। এসময় প্রচুর বৃষ্টি হয় ও উর্বরা শক্তিবৃদ্ধি পায়। তাই এই সময়ে তিনি সবাইকে বৃক্ষরোপণ করার জন্য আহ্বান জানান।