কানাইঘাট সংবাদদাতা: সিলেটের সীমান্তবর্তী উপজেলা কানাইঘাটে অপ্রীতিরোধ্য চোরাচালান চক্র প্রকাশ্যে রূপ নেওয়ায় স্থানীয়রা ক্ষোভে ফুঁসছে।চোরা কারবারিদের বেপরোয়া হয়ে ওঠায় কানাইঘাট থানা পুলিশকে দোষারোপ করছেন স্থানীয়রা। এ চোরকারবারীরা কানাইঘাট,গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর ও কোম্পানীগঞ্জের সীমান্ত দিয়ে প্রতিদিন ঢুকছে কোটি কোটি টাকার ভারতীয় গরু, মহিষ, চিনি, কসমেটিকস, মোটরসাইকেল, মাদক ও অস্ত্র।
এই অবৈধ কারবারে সরাসরি জড়িত রয়েছেন সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশ ও রাজনৈতিক দলের একটি অসাধু নেতা। তবে বিজিবির কিছু অসাধু সদস্য কে দায়ী করছেন কেউ কেউ।
জানা গেছে, কানাইঘাট থানার এস আই শাহ আলম ও এএসআই মোজাম্মেল হোসেন রিপন দীর্ঘ দিন চোরাকারবারিদের ‘লাইনম্যান’ হিসেবে কাজ আসছেন। তবে ওসি আব্দুল আউয়াল নির্দেশে এসব অবৈধ পণ্যের মাসোয়ারা তুলছেন।
এদিকে ওসি আব্দুল আউয়াল এর ঘুষ গ্রহণের অভিযোগে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন স্থানীয় একাধিক ভুক্তভোগী। উজান বীরদল গ্রামের জাকারিয়া আহমেদ গণমাধ্যমকে জানান, তার খালাত ভাইয়ের মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য ওসি তার কাছে ১ লাখ টাকা ঘুষ দাবি করেন। ইতোমধ্যে ৬০ হাজার টাকা দিলেও বাকি টাকা না পেয়ে ওসি তাকে প্রতিনিয়ত হুমকি দিয়ে আসছেন। এ অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তার নের্তৃত্বে তদন্ত চলছে এবং তিনজন সাক্ষীর লিখিত জবানবন্দিও গ্রহণ করা হয়েছে।
সাংবাদিকদের হুমকি ও অপপ্রচার।
উল্লেখ্য স্থানীয় সাহসী সাংবাদিকরা চোরাচালান নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করলে ওসি আব্দুল আউয়াল তাদের হুমকি প্রদান করেন। ওসি হুমকি দিয়ে বলেন, এই লেখালেখিতে আমার কিছুই হবে না। আমার হাত অনেক লম্বা।যে কারণে আমি উপরে সব ম্যানেজ করে চলি। অভিযোগ রয়েছে, তিনি কিছু অপেশাদার সাংবাদিকের মাধ্যমে পেশাদার প্রতিবাদী সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালান, হুমকি দেন এবং এমনকি ‘সাজানো পেন্ডিং মামলায়’ ফাঁসানোর চেষ্টা করেন।
সেনা টহল এড়িয়ে চোরাচালানের প্রধান রুট এখন কানাইঘাট।
তামাবিল সড়কে সেনা টহল বাড়ার কারণে গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর ও জকিগঞ্জের চোরাকারবারিরা বিকল্প হিসেবে কানাইঘাটের সড়ক ব্যবহার করছে। হরিপুর, ফতেপুর, বাঘা রোড, গাছবাড়ি বাইপাস, শাহবাগ স্টেশন হয়ে এসব চোরাই পণ্য সিলেট শহরসহ সারা দেশে সরবরাহ করা হচ্ছে।
চোরাচালান সিন্ডিকেটে রাজনৈতিক দলের যোগসাজশ
লক্ষীপ্রসাদ, দীঘিরপার, ভাটিবারা, জয়ফৌদ, নারাইনপুর এলাকাসহ কানাইঘাটের বিভিন্ন স্থানে অন্তত ২০ জনের একটি চক্র চোরাচালান সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িত। এদের মধ্যে হারুন, ফয়ছাল, রুবেল, খাজাই, আলমগীর, করিম ও সফির অন্যতম। এই সিন্ডিকেটের সঙ্গে রাজনৈতিক দলের নেতারাও জড়িত বলে জানা গেছে।
পুলিশের নিষ্ক্রিয়তা ও উদ্বেগ;
সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও পুলিশ চোরাকারবারিদের বিরুদ্ধে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নিচ্ছেন না। এ ঘটনায় একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে, থানা থেকে মাসিক মাসোহারা নিয়ে তাদের এই অবৈধ বাণিজ্য চালিয়ে যাওয়ার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে।
এদিকে ৮ মাসে ৯ টি খুনের ঘটনায় পুলিশের ব্যর্থতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।গত বছরের ২৫ সেপ্টেম্বর ওসি আব্দুল আউয়াল কানাইঘাট থানায় যোগ দেওয়ার পর আট মাসে ৯ খুনের ঘটনা সংগঠিত হয়েছে। তবে অধিকাংশ ঘটনায় প্রকৃত দোষীদের এখনও গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।এতে স্থানীয়রা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে।