মোঃ হাসান (লক্ষীপুর জেলা সংবাদদাতা): হাতিয়া এক দ্বীপের নাম নয়, একটা অবহেলার নাম। নলচিরা থেকে চেয়ারম্যান ঘাট পর্যন্ত যাতায়াত যেন প্রতিদিন যুদ্ধ। একটু আবহাওয়া খারাপ হলেই সমস্ত যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। এই বিচ্ছিন্নতা শুধু যাতায়াতের কষ্ট নয়—এটি হয়ে দাঁড়িয়েছে জীবন-মৃত্যুর সীমারেখা। গতকাল এমনই এক দিন ছিল। আবহাওয়া খারাপ হওয়ায় হাতিয়ার সাথে সকল নৌপথ বন্ধ ছিল।
ঠিক সেই দিন, একজন প্রসব বেদনায় কাতর মায়ের জরুরি ভিত্তিতে। জেলা শহর নোয়াখালী পৌঁছানোর প্রয়োজন হয়। কিন্তু কোন নৌযান চলছিল না। চিকিৎসার অভাবে হাতিয়ার সেই মায়ের নবজাতক শিশুটি পৃথিবীর আলোই দেখতে পারলো না।
এরকম অনেক ঘটনা সাক্ষী আমি। এই মৃত্যু নিছক একটি দুর্ঘটনা নয়—এটি একটি অব্যবস্থাপনার ফল। হাতিয়ায় নেই কোন গাইনি বিশেষজ্ঞ সিজারিয়ান বিশেষজ্ঞ ডাক্তার, নেই মানসম্মত চিকিৎসা, নেই নিরাপদ যাতায়াত। কেউ গুরুতর অসুস্থ হলে তাকে নোয়াখালী নিতে হয় নদীপথ পাড়ি দিয়ে, যেখানে ঝুঁকি আর সময় দুই-ই ভয়াবহ। আর নদী পার হতে গেলেই শুরু হয় অনিশ্চয়তার গল্প।
আমরা কি এমন মৃত্যুর সাথে অভ্যস্ত হয়ে যাবো? নাকি এখনই সময়, হাতিয়ার মানুষের নিরাপদ যাতায়াত ও স্বাস্থ্যসেবার দাবি জোরালোভাবে তোলা? এই মৃত্যু যেন শেষ মৃত্যু হয়। এখনই সময়, আমরা সবাই এক কণ্ঠে বলি—হাতিয়ার উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা ও স্বাস্থ্যসেবা চাই। এই মৃত্যু কার দায়িত্ব? আমরা আর অবহেলা চাই না। চাই স্থায়ী ও নিরাপদ যাতায়াত ব্যবস্থা। চাই আধুনিক চিকিৎসা সেবা হাতিয়া দ্বীপেই।
আর কত প্রাণ গেলে আমাদের দিকে নজর পড়বে? সরকারের উচ্চমহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি—হাতিয়া দ্বীপের মানুষের জীবন যেন নদীভাগ্যের উপর না ঠেকে থাকে। এই দ্বীপ আজও চিকিৎসা, যাতায়াত ও নদীভাঙন প্রতিরোধ—সবকিছু থেকেই বঞ্চিত।