সোমবার , ৪ আগস্ট ২০২৫ | ৭ই ভাদ্র, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
  1. অন্যান্য
  2. অপরাধ
  3. অর্থনীতি
  4. আইটি বিশ্ব
  5. আইন-বিচার
  6. আন্তর্জাতিক
  7. ইসলাম
  8. ঈদুল ফিতর
  9. ক্যাম্পাস
  10. ক্রিকেট
  11. খুলনা
  12. খেলা-ধুলা
  13. চট্টগ্রাম
  14. জাতীয়
  15. ঢাকা

সুন্দরবনে নিষেধাজ্ঞা অমান্যকারী চোরা শিকারীরা বনের সম্পদ ধ্বংস করছে

প্রতিবেদক
স্বাধীন কাগজ
আগস্ট ৪, ২০২৫ ৫:১৪ অপরাহ্ণ   প্রিন্ট সংস্করণ

মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম (খুলনা জেলা সংবাদদাতা): সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে বন বিভাগ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাকি দিয়ে অসাধু বনজীবীরা সুন্দরবনে প্রবেশ করে মাছ ও কাকড়া আহরণ করছে। তাও শুধু হাতে নয় রীতিমতো বিষ প্রয়োগ করে সুন্দরবন থেকে মাছ অহরহ করছে। বনজীবীর নামে এরই প্রকৃত চোরা শিকারী ও বনের সম্পদ লুণ্ঠনকারী। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলজুড়ে ৬ হাজার ১৭ বর্গকিলোমিটার বিস্তৃত সুন্দরবন।

সুন্দরবন বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রাকৃতিক সম্পদ এবং এটি পৃথিবীর একক বৃহত্তম ম্যানেগ্রোভ বন, যা জীববৈচিত্র্য, পরিবেশগত সুরক্ষা এবং বাংলাদেশের অর্থনৈতিতে গুরুত্ব ভূমিকা রাখে। রূপ-বৈচিত্র্যে ঘেরা, নানা প্রজাতির বনজ বৃক্ষের সমারোহে সাজানো নয়নাভিরাম এই বনভূমি উপকূলবাসীর প্রাকৃতিক রক্ষাকবজ। গত কয়েক বছরে একের পর এক সুপার সাইক্লোনের আঘাত সয়ে উপকূলের মানুষকে রক্ষা করছে সুন্দরবন।

কিন্তু সেই মানুষই এখন এই বন ধ্বংস করছে নিজেদের স্বার্থে। শিকারিদের মধ্যে কেউ কেউ প্রভাবশালী গডফাদারের ছত্রছায়ায় চলে। এসব গডফাদার বনের বাহিরে থেকে শিকারিদের নিযন্ত্রণ করে। বনজীবী ও মৎস্যজীবীর ছদ্ধবেশে বনের সম্পদ লুণ্ঠনকারী এরাই ভঙ্কর শিকারী। বনবিভাগসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধরা পড়লে তখন তারা অসহায় গরিব মানুষ হয়ে যায়, পেটের দায়ে বনে এসেছে এ অজুহাত দাড় করায়।

এদের কারণে দিন দিন অস্থিত্ব সঙ্কটের দিকে যাচ্ছে সুন্দরবন। বনজীবী নামে অসাধু ব্যক্তিরা সুন্দরবনের নদী ও খালে অবাধে বিষ দিয়ে মাছ শিকার, নেট জাল দিয়ে মাছের রেণু আহরণের মাধ্যমে ধ্বংস করা হচ্ছে নদীর প্রাণী। অনেক প্রজাতির মাছ এখন আর দেখায় যায় না। সুন্দরবনের নদীতে বিষ দিয়ে মাছ শিকার করায় এসব মাছের প্রজাতি হারিয়ে যাচ্ছে। বিষ দেয়ায় মাছসহ অন্যান্য জলজ প্রাণীও মারা পড়ছে।

বিষ দিয়ে মাছ ধরার পরে ওই খালে আর মাছ আসে না। চোরা শিকারিদের টার্গেট থেকে বাদ যাচ্ছে না বনের হরিণ ও বাঘ। বিশ্বের সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল মৎস্যভান্ডার নামে খ্যাত সুন্দরবনে বাঘ, হরিণসহ বন্যপ্রাণী ও মাছের প্রজনন মৌসুমে তিন মাসের জন্য সব নদ-নদী ও খালে মাছ ও মধু আহরণ বন্ধ এবং দেশী-বিদেশী পর্যটক প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছে সুন্দরবন বিভাগ।প্রতিবছরই ১জুন থেকে ৩১আগস্ট পর্যন্ত সুন্দরবনে এই নিষেধাজ্ঞা জারি থাকে, যাতে জলজ প্রাণীরা নির্বিঘ্নে প্রজনন ও বংশবিস্তার করতে পারে। এ সময় সুন্দরবনের সকল প্রকার মাছ ধরা, কাঁকড়া আহরণ ও বনজ সম্পদ সংগ্রহ সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ থাকে। বনবিভাগ ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী এবার অত্যন্ত তৎপর থাকায় প্রতিনিয়ত পশ্চিম সুন্দরবন ও পূর্ব সুন্দরবন থেকে অবৈধভাবে প্রবেশকারি মাছ কাকড়া আহরণকারীদের আটক করে বন আইনে মামলা দেওয়া হচ্ছে। বন বিভাগের এই সিদ্ধান্তে সুন্দরবনের উপর নির্ভরশীল জেলে, বনজীবী ও পর্যটন শিল্পের সঙ্গে জড়িতদের মধ্যে হতাশা দেখা দিয়েছে। তবে তালিকাভুক্ত বনজীবীদের সরকারি ভাবে তাদের সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। সুন্দরবন বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বনভুমি যা দেশের মোট সংরক্ষিত বন ভূমির ৪৪ শতাংশ।

উপকূলের প্রায় ৩৫ লক্ষ মানুষের জীবন-জীবিকা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সুন্দরবনের উপর নির্ভরশীল। সুন্দরবনের জলভাগকে বলা হয় মৎস্য সম্পদের ভাণ্ডার। সুন্দরবনের ৬০১৭ বর্গকিলোমিটার বাংলাদেশের অংশে জলভাগের পরিমাণ ১৮৭৪.১ বর্গকিলোমিটার, যা সমগ্র সুন্দরবনের আয়তনের ৩১.১৫ শতাংশ। এই জলভাগে ২১০ প্রজাতির সাদামাছ, ২৪ প্রজাতির চিংড়ি, ১৪ প্রজাতির কাঁকড়া, ৪৩ প্রজাতির মালাস্কা ও ১ প্রজাতির লবস্টার রয়েছে। জুন থেকে আগস্ট এই তিন মাস মাছের প্রজনন মৌসুমে সুন্দরবনের নদী ও খালে থাকা বেশিরভাগ মাছের ডিম থেকে নতুন মাছ জন্ম নেয়। তাই এই সময়ে মাছ ধরা বন্ধ থাকলে সুন্দরবনের নদী-খালে মাছের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে, তেমনি অন্যান্য প্রাণী, উদ্ভিদসহ সব জীবের জন্য ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে জানিয়েছে সুন্দরবন বিভাগ।

সুন্দরবন বিভাগ জানায়, মৎস্য সম্পদ রক্ষায় ইন্টিগ্রেটেড রিসোর্সেস ম্যানেজমেন্ট প্ল্যান (আইআরএমপি) এর সুপারিশ অনুযায়ী ২০১৯ সাল থেকে বন বিভাগ প্রতিবছর ১ জুলাই থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত সুন্দরবনের সব নদী ও খালে মাছ আহরণ বন্ধ রাখে। গত ২০২২ সাল থেকে এই সময় আরও এক মাস বাড়িয়ে ১ জুন থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত করেছে মন্ত্রণালয়। এই তিন মাসে সমগ্র সুন্দরবনের সব নদী ও খালে মাছ আহরণ বন্ধের পাশাপাশি পর্যটক প্রবেশেও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। সুন্দরবনে প্রবেশের সব ধরণের পারমিট বন্ধ রাখা হয়েছে। এই সময়ে মাছ ধরা বন্ধ থাকায় নদী-খালে মাছ বৃদ্ধি পাবে। সাতক্ষীরা সহকারী বন সংরক্ষক ফজলুল হক বলেন, এই তিন মাস সুন্দরবনে সব ধরনের প্রবেশ অধিকার নিষিদ্ধ রয়েছে সরকারিভাবে। সে কারণে সুন্দরবনে কোন ভাবেই প্রবেশ করা যাবে না।

তিনি আরো বলেন যে সমস্ত জেলেরা অবৈধভাবে সুন্দরবনে প্রবেশ করছে তাদেরকে আটক করে আইনের আওতায় আনার জন্য বনবিভাগ সহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর টহল জোরদার করা হয়েছে। প্রতিনিয়ত কোন না কোন অপরাধীকে আটক করে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হচ্ছে। স্থানীয় জেলেরা বলছেন, সরকার এই নিষেধাজ্ঞা জারি করলেও তাদের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ খাদ্য সহায়তা বা বিকল্প আয়ের ব্যবস্থা নেই। ফলে পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করতে হচ্ছে তাদের। বনজীবীদের এই তিন মাস সংসার চালাতে একটু কষ্ট হচ্ছে, তাই সরকারিভাবে তাদের সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। সরকারের জারি করা নীতিমালা সবাইকে বাধ্যতামূলক পালন করতে হবে।

বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. রেজাউল করিম চৌধুরী জানান, প্রতি বছরের ন্যায় এবারও ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট এই ম্যানগ্রোভবনে বাঘ, হরিণসহ বন্যপ্রাণী ও মাছের প্রজনন নির্বিঘ্ন করতে ১ জুন থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত তিন মাস সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশের নদ-নদী ও খালে মাছ ও মধু আহরণ বন্ধসহ দেশী-বিদেশী সব পর্যটক প্রবেশ নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এজন্য গত ২৪ মে থেকে জেলে, মৌয়ালী ও পর্যটকদের সুন্দরবনে প্রবেশের পারমিট দেয়া বন্ধ করেছে। এই তিন মাস সুন্দরবনে মাছ ও মধু আহরণসহ সব ধরনের পর্যটক প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

এই সময়ে সুন্দরবনে কেউ যেতে পারবেন না। এই নিষেধাজ্ঞা শুরুর আগেই জেলে, মৌয়ালী ও সব পর্যটকদের সুন্দরবন থেকে বের করে আনা হয়েছে। এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করতে সুন্দরবন সন্নিহিত লোকালয়ে প্রচার-প্রচারণা চালানো হচ্ছে। সুন্দরবনের পশ্চিম বিভাগের বিভাগীয় বনকর্মকর্তা এ জেড এম হাসানুর রহমান বলেন, এই তিন মাস সুন্দরবনে মাছ কাঁকড়া ও বনপ্রাণীর প্রজনন মৌসুম হিসেবে সরকার চিহ্নিত করেছে সে কারণে এই তিন মাস সুন্দরবনে সব ধরনের অধিকার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এই নিষিদ্ধ সময় আইন অমান্য করে যারা সুন্দরবনের প্রবেশ করবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সুন্দরবন পৃথিবীর একক বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন। প্রকৃতির এক অতুলনীয় রক্ষাকবচ ম্যানগ্রোভ বন। নদী-মোহনার কিনারে ছড়িয়ে থাকা সবুজ এই প্রাকৃতিক বেষ্টনী আমাদের অস্তিত্বেরও বড় ভিত্তি। ঝড়-জলোচ্ছ্বাসে উপকূল রক্ষা, জীববৈচিত্র্যের আশ্রয়স্থল এবং জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় এর ভূমিকা অপরিসীম।

এ যেন উপকূলীয় অঞ্চলগুলোর জন্য একপ্রকার জীবন্ত প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। এ বন সুরক্ষা করা অপরিহার্য। শিকারিদের মনমানসিকতা পরিবর্তন না হলে বন্যপ্রাণী শিকার বন্ধ করা কঠিন হবে। ব্যাপক প্রচার প্রচারণার মাধ্যমে শিকারিদের মানসিকতা পরিবর্তন করতে হবে। যে সব শিকারি জেলের বেশ ধারণ করে সুন্দরবনে প্রবেশ করে পশু হত্যায় মেতে ওঠে তাদের কঠোর শাস্তির আওতায় আনতে হবে। শিকারিদের যে সব গডফাদার রয়েছে তাদেরও চিহ্নিত করতে হবে।কিছু সংখ্যাক অসাধু বনজীবী ও চোরা শিকারী এই বনের অমূল্য সম্পদ লুণ্ঠন করে সুন্দরবনকে নানা হুমকির মুখে ফেলছে। উপকূল রক্ষা ও জীববৈচিত্র্য টিকিয়ে রাখতে সুন্দরবন বাঁচিয়ে রাখা অপরিহার্য। তাই প্রাকৃতিক এই রক্ষাকবচ সুন্দরবন সুরক্ষার জন্য সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে।

সর্বশেষ - সংবাদ

আপনার জন্য নির্বাচিত

পাইকগাছায় তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বিষয়ক প্রশিক্ষণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে

জামালপুরে বিএনপির আনন্দ মিছিল

শিল্প কলকারখানায় গ্যাস সরবরাহ বাড়বে আজ থেকেই: জ্বালানি উপদেষ্টা

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বন্ধ পাটকল ও টেক্সটাইল মিলস চালুর দাবিতে মানববন্ধন

প্রবাসীদের রেমিটেন্সেই বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়িয়েছে: প্রধান উপদেষ্টা

ষড়যন্ত্রকারীরা সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে অপতৎপরতায় লিপ্ত : তারেক রহমান

জুলাই সনদের সাংবিধানিক স্বীকৃতির বিষয়ে দলগুলো ঐকমত্যে পৌঁছেছে

আয়করদাতাদের প্রতি নানাক্ষেত্রে বৈষম্য করা হয়েছে : চট্টগ্রামে এনবিআর চেয়ারম্যান

একদিন আগেই ঈদ উল আযহা উদযাপন

সিআইডিপ্রধান হলেন ছিবগাত উল্লাহ